বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হায়াতে তাইয়্যেবা তথা পবিত্র জীবনের অর্থ ও মর্ম

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মহান আল্লাহ পাক পরম কৌশুলী ও মহাবিজ্ঞানী। তিনি মুমিন নর ও নারীর জীবনকে ‘পবিত্র জীবনের’ রূপ দান করেন। আল কুরআনে এ বিষয়টি তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। এরশাদ হয়েছে : মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎ কাজ করবে, অবশ্যই আমি তাকে ‘পবিত্র জীবন’ দান করব। আর অবশ্যই আমি তাদের তারা যা করত তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান প্রদান করব।’ (সূরা আন্ নাহল : ৯৭)।

এই আয়াতে কারীমায় আল্লাহ রুব্বুল ইজ্জত সৎ কর্মশীল মুমিন নর-নারীদের দু’টি পুরস্কার দানের কথা ঘোষণা করেছেন। এর একটি হলো হায়াতে ত্বাইয়্যেবাহ বা পবিত্র জীবন। তিনি নেক আমলকারী মুমিন নর-নারীর জীবনকে পবিত্র জীবনরূপে গড়ে তুলবেন। এতে করে তাদের জীবনকে গতানুগতিক জীবন ও সাধারণ জীবনরূপে কল্পনা করা যাবে না। বরং সৎ কর্মপরায়ণতার দরুন তাদের জীবন হয়ে উঠবে এক ‘পবিত্র জীবন’ তুল্য।

এ জীবনে নেকী ও পুণ্যের এক নৃত্যচপল ঝর্ণা ধারা প্রবাহিত হতেই থাকবে। এর কোনো ব্যত্যয় সাধিত হবে না। আর দ্বিতীয়টি হলো এই যে, এই পবিত্র জীবনে তারা যা কিছু পুণ্যকর্ম সম্পাদন করেছে মহান রাব্বুল আলামীন তাদের সেগুলোর তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান প্রদান করবেন। যার সীমা-পরিসীমা কেবল মাত্র আল্লাহ পাকই জানেন।
তবে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুফাস্সিরগণের মতে, এই আয়াতে ‘হায়াতে ত্বাইয়্যেবা’ বলতে দুনিয়ার পবিত্র ও আনন্দময় জীবনকে বোঝানো হয়েছে। আর হযরত আলী (রা.)-এর অর্থ করেছেন- ‘স্বল্পে তুষ্টি’ বলে। আর ইমাম দাহদাক (রহ.)-এর মতে হায়াতে তাইয়্যেবা অর্থ হলো হালাল রিজিক ও দুনিয়ার জীবনে ইবাদত করার তাওফিক। কোনো কোনো মুফাসসিরের মতে, এর অর্থ হলো আখেরাতের জীবন।

আর মুজাহিদ কাতাদাহ ও হাসান (রহ.) বলেন, জান্নাতে গমন করা ব্যতীত কারো জীবনই স্বাচ্ছন্দ্যময় হতে পারে না। তাই, জান্নাতের জীবনকেই ‘হায়াতে তাইয়্যেবা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে সঠিক কথা হচ্ছে এই যে, ‘হায়াতে তাইয়্যেবা’ বলতে এ সকল অর্থের সবগুলোকেই বুঝায়। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।

আলোচ্য আয়াতের প্রথমোক্ত তাফসির অনুযায়ী এরূপ অর্থ করা ঠিক নয় যে, মুমিন নর ও নারীগণ কখনো অনাহার, উপবাস ও অসুখ-বিসুখের সম্মুখীন হবে না। বরং অর্থ এই যে, মুমিন নর ও নারী কোনো সময় আর্থিক অভাব-অনটন কিংবা কষ্টে নিপতিত হলেও দু’টি বিষয় তাকে উদ্বিগ্ন হতে দেয় না। যেমন : (এক) অল্পে তুষ্টি ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনের অভ্যাস, যা দারিদ্র্যের মাঝেও কেটে যায়।

(দুই) মুমিন নর-নারীর এ বিশ্বাস যে, এই অভাব-অনটন ও অসুস্থতার বিনিময়ে আখেরাতে সুমহান ও চিরস্থায়ী নেয়ামত লাভ করা যাবে। কিন্তু কাফের ও পাপাচারীর অবস্থা এর বিপরীত। সে অভাব-অনটন ও অসুস্থতার সম্মুখীন হলে তার জন্য সান্ত¦নার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সে কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে ও দিশাহারা হয়ে যায়। তাই প্রায়শ আত্মহত্যা করে বা ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়। পক্ষান্তরে সে যদি সচ্ছল জীবনের অধিকারীও হয়, তবে লোভের আতিশয্য তাকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। লোভ তাকে পাপের দিকে প্রবাহিত করে। কথায় বলে, লোভে পাপ এবং পাপে মৃত্যু। এই লোভই তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : সে ব্যক্তি অবশ্যই সফলকাম হয়েছে যে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং তাকে চলনসই মতো রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ পাক তাকে যা দিয়েছেন তাতেই সে পরিতুষ্টি লাভ করেছে। (সহীহ মুমলিম : ১০৫৪)। বিশ্বনবী (সা.) নিজেও এই দোয়া করতেন : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যে রিজিক দিয়েছেন, তাতে পরিতুষ্ট করে দিন এবং তাতে আমার জন্য বরকত দান করুন। আর আমার অনুপস্থিতিতে যে কাজ হয়, ভালোভাবে ও উত্তমরূপে তাঁর বিনিময় প্রদান করুন। (মুস্তাদরাকে হাকেম : ২/৩৫৬)।

বস্তুত আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মানুষকে কৃতজ্ঞ হওয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার প্রতি আহবান জানিয়ে ইরশাদ করেছেন : আর আল্লাহ তোমাদের নির্গত করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না এবং তিনি তোমাদের শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয় দিয়েছেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (সূরা নাহল : ৭৮)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
OMAR FARUK ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:০২ পিএম says : 0
"""মহান আল্লাহ পাক পরম কৌশুলী ও মহাবিজ্ঞানী।""" আল্লাহ বিজ্ঞানী নন। তিনি স্রষ্টা, তিনি সৃষ্টি করেন। তার সৃষ্টি থেকে বিজ্ঞানী তৈরি করেন। জাযাকাল্লাহ খায়ের..
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন