গতবছর মেলায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য রফতানির স্পট আদেশ থাকলেও এবার আশা ৫শ’ কোটি টাকার রফতানি আদেশের। প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের পাশাপাশি আরো ১০টি পণ্য রফতানি বাড়ানোর বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমন দাবি মেলার আয়োজকদের। এদিকে তীব্র শৈত্য প্রবাহের রেষ কেটেছে। শীতার্ত নগরে এসেছে স্বস্তি। তাই নগরবাসি স্বাচ্ছন্দে ফিরছেন নিজ নিজ কর্মস্থলে। এতোদিন শীত আর নানা সঙ্কটে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও রোদের দেখা দেয়ায় জমে উঠতে শুরু করেছে মেলা প্রাঙ্গণ। সকালে তেমন লোক না আসলেও বিকাল হতেই শুরু হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। এদিকে দর্শনার্থী ও ক্রেতা আকৃষ্ট করতে মেলার ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যমুল্যে ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছেন। কোনো প্রতিষ্ঠান ৫ ভাগ কোনো প্রতিষ্ঠান ১০ ভাগ ঘোষণা দিয়ে টাঙ্গিয়েছেন সাইনবোর্ড। এ ছাড়ের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখনো দর্শনার্থীদের পণ্যমূল্য নিয়ে রয়েছে অভিযোগ।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, পূর্বাচলের স্থায়ী প্যাভিলিয়নের ২য় আসরের ৯ম দিন সোমবার সকালে রোদের দেখা মেলায় জলমলে পরিবেশ। তাই শীতের তীব্রতা না থাকায় দুপুর থেকে মেলায় আসতে শুরু করে বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থী। এ সময় মেলায় আয়োজন ও বঙ্গবন্ধু গ্যালারী দেখতে আসা বাংলাদেশ কলামিস্ট ফোরামের নেতা লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, মেলার সব আয়োজন সন্তোষজনক। আমি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মেলা ঘুরে দেখেছি। আমাদের মেলার আয়োজন আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে। বিশেষ করে, মেলার প্রবেশদ্বারে দেশের স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী শেখ মুজিবুর রহমানের ও দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার ব্যবস্থা রাখা প্রশংসনীয়। মেলা ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার ও শনিবার বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থী থাকার পর শীত থাকায় রোববার কমে গেছে মেলায় আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা। তবে সোমবার দুপুর থেকে চিত্র পাল্টে মেলায় প্রবেশ করে বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থী।
গতকাল সোমবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত মেলার ঘুরে দেখা যায়, মেলায় দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদের নেতৃত্বে অতিরিক্ত সদস্যরা কাজ করছেন। এখানে ৭৪১ জন পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্বরত। মেলায় আগত কুটির শিল্প ও শীতের কাপড় ব্যবসায়ী রহমতুল্লাহ মিয়া বলেন, মেলায় বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে। বিকালে প্রচুর দর্শনার্থী পেয়েছি। আমরা আমাদের পণ্যে ছাড় ঘোষণা করার পর ভিড় বেড়েছে। তাই মেলার অন্য ব্যবসায়ীরাও ছাড় দেয়া শুরু করেছে।
ব্রাহ্মণখালীর আব্দুল ওহাব ভুঁইয়া বলেন, বাণিজ্যমেলা উদ্বোধনের পর শুরু থেকে স্টল প্রস্তুতি নিয়ে দেরি ও অব্যাহত শৈত্য প্রবাহের কারণে তেমন জমে ওঠছিলোনা। তাই বরাবরের মতোই ব্যবসায়ীরা ছাড় ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। গুতিয়াবোর বাসিন্দা স্বেচ্ছাসেবক আজমির বলেন, মেলার সরকারী ছুটির দিনে আশায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে শৈত্য প্রবাহ কমে যাওয়ায় সোমবারও ভালোভাবেই জমে ওঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। আমরা ১৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছি। অনেকটা হিমসিম খেতে হচ্ছে ভিড় ঠেলে।
মি. বাইট নামীয় খাবার হোটেলের পরিচালক আব্দুল আজিজ বলেন, বাণিজ্য মেলার আসর রূপগঞ্জে হওয়াতে স্থানীয় শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে। যদিও একমাসের আয়োজন, কিন্তু এখান থেকে যে প্রশিক্ষণ হাতে কলমে পাচ্ছে, তাতে পরবর্তিতে কাজে সফল হওয়ার সুযোগ পাবে। আর এবার গতবারের তুলনায় দর্শনার্থী হবে বহুগুন বেশি।
মেলার আগত দর্শনার্থী নগরপাড়া থেকে আসা শিক্ষার্থী রাশেক আহমেদ রাহিদ বলে, মেলার শুরু থেকে স্কুলে ভর্তি নিয়ে ব্যস্ততা আর শীত বেশি থাকায় আমাদের মেলা ঘুরিয়ে দেখায়নি। আজ রোদ থাকায় মা বাবাসহ নিয়ে আসছেন। খুব ভালো লাগলো। এখানে একটি শিশুপার্ক রয়েছে। রাইডে চড়েছি। শিশুদের জন্য এমন আয়োজনে মুগ্ধ হয়েছি। মধুখালী এলাকার বাসিন্দা ইমলা মুহান্না বলেন, মেলার সব পণ্যের দাম রাখা হচ্ছে বেশি। যা সাধারণ ক্রেতার জন্য স্বস্তিদায়ক নয়।
এবার মেলায় সাধারণ, প্রিমিয়াম, সংরক্ষিত, ফুড স্টল ও রেস্তোরসহ ১৩ ক্যাটাগরিতে স্টল রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। এবার দেশি-বিদেশি মিলে মেলায় মোট ৩৩৬টি স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি।
মেলা খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে ছুটির দিনে এক ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এছাড়া মেলায় প্রায় ১ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন