শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মাসেতু দক্ষিণ এলাকায় ট্রাকের সাথে এ্যাম্বুলেন্সের দুর্ঘটনায় নিহত ৬ জনের লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে জাজিরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে সৎকারের জন্য তাৎক্ষণিক মানবিক ফান্ড থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
এ্যাম্বুলেন্স চালকের সহকারী রবিউল ইসলাম (২৬), রোগী জাহানারা বেগম (৫৫) ও তার মেয়ে লুৎফুন্নাহার লিমা (২৮) সহ তিনজনের লাশ প্রথমে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লাশ গুলো হস্তান্তর করেন হাইওয়ে ফরিদপুরের সার্কেল এএসপি মোঃ মারুফ হাসান।
নিহত ৬ জন হচ্ছেন, পটুয়াখালীর দশমিনার আদমপুর এলাকার আঃ রাজ্জাক মল্লিকের ছেলে ফজলে রাব্বি (২৮), পটুয়াখালীর বাউফল থানার আমেরিকা প্রবাসী লতিফ মল্লিকের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৫৫), মেয়ে লুৎফুন্নাহার লিমা (২৮), নবচেতনা পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক মাসুদ রানা (৩০), খুলনার দীঘলিয়ার চন্দনিমহল ৬নং ওয়ার্ডের এ্যাম্বুলেন্স চালকের সহকারি রবিউল ইসলাম (২৬) ও মাদারীপুরের মস্তফাপুর এলাকার এ্যাম্বুলেন্স চালক জিলানি (২৮)।
নিহত জাহানারা বেগম (৫৫) এর মেয়ে শিল্পি আক্তার (৩০) জানান, তার মায়ের ক্লোন ক্যান্সার ছিলো। গতকাল ব্রেইন স্ট্রোক করায় প্রথমে বরিশালের বেলভিউ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তার মাকে নিয়ে ঢাকায় রওয়ানা হয় তার আত্মীয়-স্বজন। পথিমধ্যে জাজিরার পদ্মাসেতু প্রান্তে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যায়।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুল হাসান সোহেল বলেন, আমরা আমাদের তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা ফান্ড থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা করে মোট ৬০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করেছি। এই সহায়তাটা মূলত তাদের সৎকারের জন্য সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
হাইওয়ে ফরিদপুর সার্কেল এএসপি মোঃ মারুফ হাসান জানান, আমরা নিহত ৬ জনের মৃতদেহই তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে পেরেছি। স্বজনরা এসে লাশ গুলো দাফনের জন্য নিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে এ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাকের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই এ্যাম্বুলেন্সে থাকা মা-মেয়ে ও চালকসহ ছয়জন নিহত হয়। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটে। পরে নিহতদের মরদেহ গুলো জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়।
শিবচর হাইওয়ে থানা পুলিশ ও জাজিরা ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, এন এন নুর আলম এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নামের একটি এ্যাম্বুলেন্স বরিশাল থেকে রোগী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। এরই মধ্যে একটি ট্রাক ও ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে নাওডোবা এলাকায় চলন্ত ট্রাকের পেছনে সজোরে এ্যাম্বুলেন্সটি ধাক্কা দেয়। এতে এ্যাম্বুলেন্সটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
জাজিরা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার এনামুল হক সুমন জানান, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হয়েছে। এমন খবরে সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখি ঘটনাস্থলেই এ্যাম্বুলেন্সে থাকা ছয়জন নিহত হয়েছেন। পরে সেখান থেকে এ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাকটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাই। আর লাশ গুলো জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি।
শিবচর হাইওয়ে থানার ওসি আবু নাঈম মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হক বলেন, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও দক্ষিণ থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেই। দুর্ঘটনা কবলিত এ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাক আমাদের হেফাজতে রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন