বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

যেদিন নমনীয় হবে সমস্ত কণ্ঠস্বর

মাওলানা মাসউদুযযামান | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩

পৃথিবীটা দু’দিনের। জীবনটা ক্ষণিকের। আখেরাতের অনন্তকালীন জীবনের তুলনায় দুনিয়ার এ জিন্দেগী মাত্র একদিন বা দিনের সামান্য সময়। তবু এ জীবন নিয়ে মানুষের কত আশা! এ জীবনকে সাজাতে কত দৌড়ঝাঁপ! সকাল থেকে সন্ধ্যা; দিন ও রাতের সমস্ত সময়জুড়ে একই ফিকির, কী করে জীবনকে আরো উপভোগ্য করা যায়। অর্থ-বিত্তে এবং প্রভাব-প্রতিপত্তিতে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়া যায়। বৈধ-অবৈধ যে কোনো উপায়ে সবার সেরা হওয়া যায়, সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা যায়।

অর্থ-বিত্তে সেরা হওয়া এটাই যেন জীবনের চূড়ান্ত সফলতা। খ্যাতি ও প্রতিপত্তির শীর্ষস্থানটি দখল করতে পারা এটাই যেন স্বর্গারোহণ! তাই এ লক্ষ্য যাদের কিছুমাত্র অর্জিত হয় তাদের বক্ষ থাকে স্ফীত। কণ্ঠস্বর থাকে চড়া। তাদের পদক্ষেপ হয়ে ওঠে ভারি। বিনয়, নম্রতা, আনুগত্য ও নমনীয়তা শব্দগুলো যেন তাদের অভিধান থেকে হারিয়ে যায়।

তারা হয়ে পরে দারুণ স্বেচ্ছাচারী। সত্যের ডাক শুনেও তারা শোনে না। ন্যায়ের অনুরোধ তারা রক্ষা করে না। বিবেকের কোনো শাসন ও বারণ তারা আমলে নেয় না । নেয়ার প্রয়োজনও বোধ করে না। দরদী হৃদয়ের কোনো আহ্বান-উপদেশ-অনুনয়-আবদার কোনো কিছুই তাদের স্পর্শ করে না। কর্তব্য-পালনে তাদের সক্রিয় করে তুলতে পারে না। অন্যায়কাজ থেকেও ফেরাতে পারে না। অর্থ-বিত্ত ও প্রভাব-প্রতিপত্তি তাদের এমনই অন্ধ করে রাখে! পার্থিব প্রাপ্তি তাদের করে রাখে এমনই আত্মভোলা, এমনই আত্মকেন্দ্রিক ও বেপরোয়া।

পৃথিবীর মায়ায় আচ্ছন্ন এসব মানুষ ভুলে যায়, পৃথিবীটাই শেষ কথা নয়। শীঘ্রই আসবে এমন এক দিন, যেদিন নমনীয় হবে সমস্ত কণ্ঠস্বর, লঘু হবে পদভার। যেদিন আর কেউ আহ্বানকারীর আহ্বান উপেক্ষা করবে না। পাপ-পুণ্য ও ন্যায়-অন্যায়ের চূড়ান্ত ফয়সালার জন্য সমবেত হবার ডাক শোনামাত্র সবাই ছুটবে সেই ডাক অনুসরণ করে। সেদিন সবাই ঠিকই ডাকে সাড়া দেবে। সবাই সোজা পথে চলবে। কেউ এদিক-সেদিক করবে না। কেউ ‘যাব না’ বলে গোঁ ধরবে না। ধনী-গরীব, ছোট-বড়, শাসক ও শাসিত, জালিম ও মজলুম সবাই দ্রুতবেগে ছুটবে সমবেত হবার ময়দানে।

কুরআনের ভাষায় : সেদিন সকলে আহ্বানকারীর অনুসরণ করবে এমনভাবে যে, তার কাছে কোনো বক্রতা পরিদৃষ্ট হবে না এবং দয়াময় আল্লাহর ভয়ে ক্ষীণ হয়ে যাবে সকল আওয়াজ। ফলে তুমি মৃদু পদধ্বনি ছাড়া কিছুই শুনতে পাবে না। (সূরা ত্বহা : ১০৮)। হ্যাঁ, সেদিন সবাই সোজা পথে চলবে। রহমান খোদা তা’আলার ভয়ে সবাই একেবারে চুপ হয়ে যাবে। নতশিরে, বিনীতভাবে সবাই এগিয়ে যেতে থাকবে তাঁর ফয়সালা শোনার জন্যে।
আজ কেন এত বিনয়? কেন এমন আনুগত্য? আজ কেন রহমানের ভয়ে সবাই এমন ভীত? পৃথিবীজুড়ে ছিল যাদের দাপট, তারাও কেন আজ কুণ্ঠিত...? কারণ আজকে সেইদিন, যেদিন ক্ষমতা শুধুই এক আল্লাহর। তাঁর কথা ছাড়া কারো কথা আজ চলবে না। কারো সাহস নেই কিছু বলার। যাদের তিনি অনুমতি দেবেন তারাই কেবল কথা বলবে তাঁর সামনে। ‘সেদিন সত্যিকারের রাজত্ব হবে রহমানের (দয়াময় আল্লাহর)। আর সে দিনটি কাফেরদের জন্য হবে অতি কঠিন’। (সূরা ফুরকান : ২৬)।

অতএব আখেরাতের সেই কঠিন দিনে আল্লাহর গজব ও ক্রোধ থেকে বাঁচতে আসুন নিজেদেরকে আল্লাহর সামনে সঁপে দেই। তাঁর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান এনে মেনে চলি তাঁর প্রতিটি হুকূম। সময় থাকতেই তাঁর কাছে ফিরে এসে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে শুরু করি নতুন জীবন ।

যেমন ইরশাদ হয়েছে : বলে দাও, হে আমার বান্দাগণ! যারা (পাপাচারে নিমজ্জিত হয়ে) নিজেদের উপর জুলুম করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি অতিক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর (পূর্ণ) অনুগত হয়ে যাও, তোমাদের নিকট শাস্তি আসার আগে, যার পর আর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না।

এবং তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি উত্তম যা-কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করো তোমাদের উপর অতর্কিতভাবে শাস্তি আসার আগে, এমনভাবে যে, তোমরা টেরও পাবে না। যাতে কাউকে বলতে না হয়, আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে অবহেলা করেছি তার জন্য আফসোস! আসলে আমি (আল্লাহ তা’আলার বিধি-বিধান নিয়ে) ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।

অথবা কাউকে বলতে না হয়, আল্লাহ যদি আমাকে হেদায়েত দিতেন তবে আমিও মুত্তাকীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। অথবা শাস্তি চোখে দেখার পর যেন কাউকে বলতে না হয়, আহা! আমার যদি একটিবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ হত, তবে আমি সৎকর্মশীলদের একজন হয়ে যেতাম! (সূরা জুমার : ৫৩-৫৭)।

আসুন অতর্কিত সেই শাস্তি আসার আগেই আল্লাহর অভিমুখী হই। সেদিনের সেই ভয়াবহ দৃশ্যে নির্বাক হবার আগেই আজ দুনিয়াতে ভাষাকে করি সংযত, চলাফেরায় হই বিনীত। সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির দাপটে দুর্বিনীত না হয়ে আল্লাহর ভয়ে হই ভীত। তাঁর বিধানের অনুগত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন