বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ব্যাখ্যা দিতে এবার হাইকোর্ট তলব করলেন নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজুল হকসহ তিন আইনজীবীকে। অপর দু’জন হলেন, অ্যাডভোকেট মো. আজহারুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট ফেরদৌস আলম। তাদের আগামী ৮ ফেব্রæয়ারি সশরীরে হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে উক্ত তিন আইনজীবীর বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না- এ মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) গোলাম সারোয়ারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি জে বি এম হাসান এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। উল্লেখ্য, গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) গোলাম সারোয়ার একটি চিঠি পাঠান। এতে তিনি অভিযোগ করেন, গত ২৮ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণকারী আসামি হাছিনা বেগমের আত্মসমর্পণ করে জামিন শুনানি, আসামি আইনুল হকের জামিনের মেয়াদ বাড়ানো এবং হাজতি আসামি হাছানের জামিন শুনানির তারিখ ছিল। আমি পুলিশ রিপোর্ট, চিকিৎসা সনদ পর্যবেক্ষণ করে এবং আদালতে উপস্থিত ভুক্তভোগী মোছা. মারুফাকে পরীক্ষা অঙ্কে হাজতি আসামির জামিন নামঞ্জুর করি। অপর আসামিদের জামিন আবেদন ও মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানো নির্দেশ দেই।
ওই আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত আইনজীবী মমতাজুল হক, অ্যাডভোকেট আজাহারুল ইসলাম, ফেরদৌস আলমসহ তাদের সহযোগী আইনজীবীরা মারমুখি হন। এছাড়া আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়িয়ে গালাগাল করেন। হামলার চেষ্টাও করেন। হুমকি দিয়ে তারা বলেন, জামিন দিয়ে নেমে যা! স্যরি বল! চাকরি করার দরকার নেই। বাড়ি গিয়ে বসে থাক, কোথা থেকে পড়াশুনা করেছো, আইন-কানুন জানো না। নীলফামারীর বার খুবই ভয়ঙ্কর। এর আগে অনেক বিচারককে পিটিয়ে এখান থেকে তাড়িয়েছি। কোথা থেকে এসেছো, এসেই উল্টাপাল্টা আদেশ দাও।
এ পরিস্থিতিতে এজলাসের অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাদের সঙ্গে কোনোরূপ তর্কে না জড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এজলাসের কার্যক্রম মুলতবি রেখে খাস কামরায় চলে যাই। খাস কামরায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। অপেক্ষাকালেও ওই আইনজীবীরা আমাকে জঘন্য ভাষায় গালাগাল করেন।
এ ঘটনায় আমি বাংলাদেশ বিচার বিভাগের অধঃস্তন আদালতের সর্বোচ্চ পদে আসীন হিসেবে হতাশ, বাকরুদ্ধ, মর্মাহত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছি এবং এ ঘটনার কারণে আমিসহ এ জেলার বিচারকরা নিরাপত্তাহীনতাসহ লাঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কাবোধ করছেন।
গত ২৯ ডিসেম্বর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) গোলাম সারোয়ারের পাঠানো অভিযোগটি সুপ্রিম কোর্টের জেনারেল প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন। গত ৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি অভিযোগপত্রটি বিচারের জন্য হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। তার ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আদেশের জন্য হাইকোর্টের তালিকায় ওঠে।
খুলনা, পিরোজপুর ও সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ স¤প্রতি দেশের কয়েকটি জেলায় বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ অন্যদের তলব করেছেন আদালত।
মন্তব্য করুন