শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের অনুপম চর্চায় আলোকিত হয়ে উঠুক আমাদের সমাজ-৪

মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সমাজ জীবনে এভাবে সবাই মিলেমিশে চলতে গিয়ে যদি মানবীয় দুর্বলতার কারণে কখনো কোনো বিবাদ, বিসংবাদ দেখা দেয় তখন তাদের মাঝে একতা ও সংহতি স্থাপনে এগিয়ে আসাও সেই ভ্রাতৃত্বেরই দাবি। ‘তোমরা (ভ্রাতৃত্বের দাবি রক্ষা করা এবং বিবাদের মুহূর্তে) তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও’ বলে আল্লাহ তা’আলা সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। আর এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তো নবীজির এ হাদীস থেকেও খুব সুন্দর বুঝে আসে। হযরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : আমি কি তোমাদেরকে সেই আমল সম্পর্কে অবহিত করব, যা সাধারণ নামাজ রোজা এবং সদকা থেকেও উত্তম? সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন। নবীজি বললেন, তা হচ্ছে পরস্পরের মাঝে সম্প্রীতি ও সদ্ভাব স্থাপন করা। আর মানুষের মাঝে ফেতনা ও দ্ব›দ্ব ছড়ানো, এটা তো সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তা তোমার দ্বীনের সব বরবাদ করে দেয়। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯১৯)।

বস্তুত নবী কারীম (সা.)-এর গোটা জীবনের একটি বড় মিশন ছিল, সমাজে অরাজকতা দূর করে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। হিংসা বিদ্বেষ ও সা¤প্রদায়িকতা নির্মূল করে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি প্রতিস্থাপন করা। বিবাদ, বিসংবাদের অবসান ঘটিয়ে ঐক্য ও সংহতি কায়েম করা। জুলুম, শোষণ উৎখাত করে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব রক্ষা করা। নবীজি গোটা জীবনে, বিশেষ করে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে সর্বপ্রথম যে কাজগুলো করেছেন তার অন্যতম ছিল এই ভ্রাতৃপ্রতিম একতা প্রতিষ্ঠা।

বহুকাল থেকে চলে আসা গোত্রে গোত্রে পারস্পরিক দ্ব›দ্বগুলো তিনি নিরসন করেন। আর আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে স্থাপন করে দেন ঈমানী ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধন। মূলত এটি সম্ভব হয়েছে মহান রাব্বুল আলামীনের অপার অনুগ্রহের বদৌলতে এবং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খোদাপ্রদত্ত নববী অবদানের মাধ্যমে।

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে সেই কথাটি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন : স্মরণ কর ওই সময়ের কথা যখন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আর তা এভাবে যে, একটা সময় ছিলো, যখন তোমরা একে-অন্যের শত্রæ ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহকে একে-অপরের সাথে জুড়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গিয়েছ। তোমরা ছিলে অগ্নিকুÐের প্রান্তে। আল্লাহ তোমাদেরকে (ইসলামের মাধ্যমে) সেখান থেকে মুক্তি দিয়েছেন। (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)।

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন : আর তিনি তাদের (মুমিনদের) হৃদয়ে পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আপনি যদি পৃথিবীর সবকিছু (এ উদ্দেশ্যে) ব্যয় করে ফেলতেন, তবে তাদের হৃদয়ে সম্প্রীতি সৃষ্টি করতে পারতেন না। কিন্তু তিনি তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। Ñসূরা আনফাল (৮) : ৬৩

প্রিয় পাঠক, সাহাবায়ে কেরামের হৃদয়ে এই উপলব্ধি জাগরুক ছিলো। আর তাই নবীজি যখন তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তোমরা কি শতধা’ বিভক্তিতে জর্জরিত ছিলে না, এরপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের মাঝে সখ্য তৈরি করেছেন?’ তারা উত্তরে বলেছিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রহশীল। এটা যেমন তাদের মুখের স্বীকারোক্তি ছিল তেমনি তা বাস্তবায়ন করতেন তারা কর্মের মাধ্যমে। ফলে জাহেলী সা¤প্রদায়িকতা উপেক্ষা করে ভ্রাতৃত্ব চর্চার অপূর্ব দৃষ্টান্ত তারা পৃথিবীর সামনে রেখে গিয়েছেন। ইতিহাসে যার নজির দ্বিতীয়টি মেলে না।

প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে এই ঐক্য ও সংহতি অর্জিত হবে কীভাবে এবং তা টেকসই হওয়ার উপায়ই বা কী?-এর সুন্দর সামাধান রাব্বুল আলামীন অত্যন্ত চমৎকার ভাষায় দিয়ে দিয়েছেন : হে মুমিনগণ! অন্তরে আল্লাহকে সেই ভাবে ভয় কর, যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত। (সাবধান! কোনো অবস্থায়ই যেন) তোমাদের মৃত্যু (না আসে, বরং) এই অবস্থায়ই যেন আসে যে তোমরা মুসলিম।

আল্লাহর রশিকে (অর্থাৎ তাঁর দ্বীন ও কিতাবকে) দৃঢ়ভাবে ধরে রাখ এবং পরস্পরে বিভেদ করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ রাখ। একটা সময় ছিলো, যখন তোমরা একে অন্যের শত্রæ ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহকে জুড়ে দিলেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুÐের প্রান্তে ছিলে। আল্লাহ তোমাদেরকে (ইসলামের মাধ্যমে) সেখান থেকে মুক্তি দিলেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা সঠিক পথে চলে আস। (সূরা আলে ইমরান : ১০২, ১০৩)।

অর্থাৎ দিলের গভীরে আল্লাহর ভয় এবং আল্লাহর বিধানকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার সূত্রে যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাই মূলত কার্যকর ফলপ্রসূ এবং টেকসই হয়ে থাকে। এমন সম্পর্কই ধ্বংসের খাদ থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করতে পারে। আমাদের সমাজ ও চারপাশ ঈমানী ভ্রাতৃত্ব চর্চায় আলোকিত হয়ে উঠুক, মহান রবের দরবারে সকাতর এই মিনতি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন