বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়

ইউক্রেনের অর্থনৈতিক পতনে দৃষ্টি নেই পশ্চিমের

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের জেরে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু প্রায় ্রকে বছরের মধ্যে রাশিয়ান অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভালোভাবে সেই ধাক্কা সামলেছে। ২০২২ সালের মার্চে ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স প‚র্বাভাস দিয়েছিল যে, রাশিয়ান অর্থনীতি বছরের শেষ নাগাদ ১৫ শতাংশ সংকুচিত হবে। কিন্তু বছর শেষে দেখা গেল যে, রাশিয়ান অর্থনীতি মাত্র ৩ শতাংশের কিছু বেশি পরিমাণে সঙ্কুচিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তথা আইএমএফ আশা করছে যে, ২০২৩ সালে রাশিয়ার অর্থনীতিতে ০.৩ শতাংশ থেকে সামান্য বেশি কম পুনরুদ্ধার ঘটবে। এদিকে, এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি মাত্র ০.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং ব্রিটিশ জিডিপির ০.৬ শতাংশ পতন ঘটবে বলে ধারণা করছে। কিন্তু নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও রাশিয়ান অর্থনীতি তুলনাম‚লকভাবে স্থিতিস্থাপক প্রমাণিত হয়েছে নিষেধাজ্ঞার সীমিত কার্যকারিতা, রাশিয়ার নীতিগ্রহন প্রক্রিয়া, এর আকার, এর বাণিজ্যিক অবস্থান এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে জোট বহির্ভূত দেশগুলির গুরুত্বের কারণে। ম‚লধন নিয়ন্ত্রণ এবং সুদের হারে চড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২ সালে একটি বিপর্যয়ম‚লক আর্থিক সংকট এড়াতে পেরেছে। রুশ সরকারের অবশিষ্ট আর্থিক স্থিতি কিছু সময়ের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে।

গত বছরটি প্রমাণ করেছে যে, অর্থনীতি গোষ্ঠীর জি২০-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ একা অপ্রতিরোধ্য পরিণতি সহ তাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থাগুলিকে নিশ্চিত করতে আর সক্ষম নয়। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা বলে যে, বৃহত্তর লক্ষ্যগুলি নিষেধাজ্ঞার চাপ সহ্য করতে আরও ভালভাবে সক্ষম হয়, কারণ তাদের কাছে বাকিদের আকৃষ্ট করার জন্য আরও অভ্যন্তরীণ সংস্থান থাকে এবং তাদের বিশ্ব অর্থনীতি থেকে সম্প‚র্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। তাই পশ্চিমের সাথে রাশিয়ার বাণিজ্য ভেঙে পড়লেও, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, লাতিন আমেরিকান এবং আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলির সাথে এর বাণিজ্যিক লেনদের সম্প্রসারিত হয়েছে। যেহেতু বিশ্বের দেশগুলি করোনা মহামারী সৃষ্ট অর্থমন্দা থেকে পুনরুদ্ধার পেতে, এবং ইউত্রেন যুদ্ধের ধাক্কার সাথে সামঞ্জস্য করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে মিত্রদের রাশিয়ার পণ্য রপ্তানি সম্প‚র্ণরূপে পরিত্যাগ করা বাকিদের জন্য খুব আকর্ষণীয় সুযোগ। রাশিয়া থেকে সস্তা কাঁচামালের প্রলোভন ব্যাপক মাত্রায় তাদেরকে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।

পশ্চিমারা দেখাতে চেয়েছিল যে, আমদানি-নির্ভর মধ্যম আয়ের অর্থনীতির বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে ধ্বংস করার হাতিয়ার তাদের আছে। তবে তাদের নিষেধাজ্ঞাগুলি এমন ধরণের চরম এবং দুর্লভ সমস্যা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা রাশিয়ার অর্থনীতি বা পুতিনের সামরিক শক্তির পতন ঘটাতে পারে। সাগরগুলিতে বিভিন্ন ট্যাঙ্কারের একটি বৈশ্বিক বহর সর্বত্র ক্রেতাদের কাছে রাশিয়ান তেল সরবরাহ করতে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ায়। সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত পণ্য ব্যবসায়ীরা রাশিয়ান তেল, গ্যাস, কয়লা, সার এবং শস্য চালানের চুক্তি করার জন্য আমিরাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তুরস্ক রাশিয়ার কাছে বিক্রি করতে চাওয়া বৈশ্বিক ব্যবসার জন্য একটি প্রধান বাহক হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার সাথে বানিজ্যেক লেনদেনের দীর্ঘ পরিবহণের সারি ককেশাস পর্বতমালার গিরিপথ দিয়ে চলাচল করছে। ভারতীয় শোধনাগার এবং সিঙ্গাপুরের তেল সঞ্চয় সংস্থাগুলি উল্লেখযোগ্য ছাড়ে রাশিয়ান তেল কিনে বিশ্বব্যাপী বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা করছে। আবার, অনেক মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে, পশ্চিমা তৈরি মাইক্রোচিপগুলি রাশিয়ান হেলিকপ্টার এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলিতে বসানো হচ্ছে। আরেকদিকে, আর্মেনিয়া এবং কিরগিজস্তানের মতো ছোট দেশগুলি স্মার্টফোন, ওয়াশিং মেশিন এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্য রাশিয়ায় পাঠানোর জন্য ব্যস্ত।

বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে যে, নিষেধাজ্ঞার সীমিত প্রভাবগুলির ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরী শিক্ষা হল, রাশিয়াকে জ¦্দ কররতে গিয়ে ইউক্রেনবে ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবস্থায় ঠেলে দেয়ার পর পশ্চিমারা এটিকে তীরে তুলতে কী করতে পারে। প‚র্ব ইউরোপীয় সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে তাদের বর্তমান উন্নয়নের স্তরে পৌঁছানোর জন্য কাঠামোগত অর্থনৈতিক সহায়তা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৩০ বছর এবং সহ¯্র কোটি ইউরো লেগেছে। পশ্চিমারা যদি একটি সমৃদ্ধ, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক ইউক্রেন গড়ে তুলতে সাহায্য করতে চায়, তাহলে একই ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা যুদ্ধের সমর্থনের অভিব্যক্তি হিসাবে রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞাগুলি গুরুত্বপ‚র্ণ। কিন্তু দেশটির অর্থনৈতিক সংগ্রামের পশ্চিমের অনীহা এই সংঘাতে সত্যিকার অর্থে গুরুত্বপ‚র্ণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
শেখ রানা ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪:১৬ এএম says : 0
স্বৈরশাসন কোনদিন কোন জাতি বা দেশকে দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য মঙ্গল বয়ে আনেনা। এবং ওই দেশ এক সময় ধ্বংস হয়ে যায় আর গণতান্ত্রিক দেশ গুলো এগিয়ে যেতে থাকে। রাশিয়ার ইতিহাস তো ভালো না পৃথিবীকে তারাও শাসন করেছে।
Total Reply(0)
কমরেড ইসমাইল হোসেন ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:১৩ এএম says : 0
যুদ্ধটা ইউক্রেনের সাথে শুরু হলেও এখন ইউমেরিকা বনাম রাশিয়া,আমেরিকা তার ডলার ও তার ইউরোপীয় সাঙ্গপাঙ্গদের খেলা আর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের দিন শেষ,আফগানিস্তানের মতো লেজ গুটিয়ে পলায়ন করতে হবে সব দেশ থেকে।
Total Reply(0)
কমরেড ইসমাইল হোসেন ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:১৩ এএম says : 0
যুদ্ধটা ইউক্রেনের সাথে শুরু হলেও এখন ইউমেরিকা বনাম রাশিয়া,আমেরিকা তার ডলার ও তার ইউরোপীয় সাঙ্গপাঙ্গদের খেলা আর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের দিন শেষ,আফগানিস্তানের মতো লেজ গুটিয়ে পলায়ন করতে হবে সব দেশ থেকে।
Total Reply(0)
Rezaul Karim ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪:১৫ এএম says : 0
আমার মনে হয় ভবিষ্যতে বিশ্বে আমেরিকার একার আধিপত্য আর থাকবে না
Total Reply(0)
ইভা ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪:১৫ এএম says : 0
রাশিয়া একটা সময় বিশ্বে শাষন করবে
Total Reply(0)
ওবায়দুল কাদের ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪:১৭ এএম says : 0
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া জয়ী লাভ করবে। এতে যতই নিষেধাজ্ঞাই দেওয়া হোক কোনো কাজে আসবে না
Total Reply(0)
ইনু ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪:১৯ এএম says : 0
সবচেয়ে বড় সমাধান হলো রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ইউক্রেন ও রাশিয়ার মাঝে একটা সমঝোতা করে দিলে ভালো হবে। নয়তো তারা রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিলেও কোনো কাজ আসবে না। এ যুদ্ধে রাশিয়ারই জয় হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন