চীন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্ত ছাড়াই ইউক্রেন সঙ্কটের ওপর যে কোনো একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল শুক্রবার ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক নিষ্পত্তি সম্পর্কে একটি বিবৃতিতে একথা বলেছে।
নথিতে বলা হয়েছে, ‘একতরফা নিষেধাজ্ঞা [বন্ধ করা উচিত], আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া একতরফা নিষেধাজ্ঞা প্রবর্তনের বিরোধিতা করি’।
বেইজিংয়ের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়ে ১২টি দিক তুলে ধরেছে। প্রথমত, সব দেশের উচিত সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা, জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতিসহ স্বীকৃত আন্তর্জাতিক আইনগুলো কঠোরভাবে পালন করা এবং সব দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, স্নায়ুযুদ্ধের চিন্তাধারা ত্যাগ করা উচিৎ। একটি দেশের নিরাপত্তার বিনিময়ে অন্য দেশের নিরাপত্তা হয় না। অস্ত্র বা সামরিক জোট সম্প্রসারণের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। সব দেশের বৈধ নিরাপত্তা স্বার্থ এবং উদ্বেগ গুরুত্বসহ বিবেচনা করা উচিৎ এবং সঠিকভাবে তা সমাধান করা উচিৎ। তৃতীয়ত, যুদ্ধবিরতি পালন করা উচিৎ। সংঘর্ষে বা যুদ্ধে কেউ বিজয়ী হতে পারে না। তাছাড়া, চীনের অন্যান্য অবস্থান হলো- শান্তিপূর্ণ সংলাপ শুরু করা, মানবিক সংকট সমাধান করা, বেসামরিক লোক ও যুদ্ধবন্দীদের রক্ষা করা, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, কৌশলগত ঝুঁকি কমানো, খাদ্য রফতানি নিশ্চিত করা, একতরফা নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করা, শিল্প চেইন ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং যুদ্ধোত্তর পুনর্নির্মাণ এগিয়ে নেওয়া।
পূর্ব ইউক্রেনের পরিস্থিতি কঠিন -জেলেনস্কি : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির জেলেনস্কি গতকাল শুক্রবার এক ভিডিও ভাষণে বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনের পরিস্থিতি গত দিনে খুব কঠিন ছিল। জেলেনস্কি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা ভিডিওতে বলেছেন, ‘পূর্বে, [পরিস্থিতি] খুব কঠিন, যন্ত্রণাদায়ক ছিল’। তিনি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পরিস্থিতিকে ‘বেশ বিপজ্জনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার বলেছে যে, রুশবাহিনী কুপিয়ানস্ক এলাকায় ইউক্রেনের সামরিক শক্তিকে আঘাত করে গত দিনে ৫০ জনেরও বেশি শত্রু সৈন্যকে নির্মূল করেছে। এছাড়াও, রাশিয়ান বাহিনী ক্রাসনি লিমান এলাকায় ইউক্রেনের সৈন্য এবং সরঞ্জামের ক্ষতি করেছে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে প্রায় ৮৫ শত্রু সৈন্যকে নির্মূল করেছে। ‘দোনেৎস্ক এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২১০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় কর্মী, ছয়টি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান, চারটি মোটর যান, একটি গ্র্যাড একাধিক রকেট লঞ্চার এবং একটি ডি-২০ হাউইটজার ধ্বংস হয়েছে।
‘দক্ষিণ দোনেৎস্ক এলাকায় ইউক্রেন ১০৫ জন সৈনিক, একটি ট্যাঙ্ক, দুটি পদাতিক যুদ্ধ যান, তিনটি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান এবং তিনটি হাউইৎজার হারিয়েছে। খেরসন এলাকায় আরো তিনটি হাউইটজার ধ্বংস হয়েছে। এছাড়াও, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর একটি সু ২৫ প্লেন খেরসন অঞ্চলে কিজোমিসের বসতির কাছে ধ্বংস করেছে।
আর্টিওমভস্কের বার্খোভকা গ্রাম সম্পূর্ণ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে : ওয়াগনার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বলেছেন, দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের আর্টিওমভস্ক (ইউক্রেনীয় নাম : বাখমুত) থেকে সাত কিলোমিটার উত্তরে বেরখোভকা গ্রামটি সম্পূর্ণরূপে রাশিয়ান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে।
প্রিগোজিনের প্রেস সার্ভিস গতকাল তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘বারখোভকা সম্পূর্ণরূপে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। ভ্যাগনার পিএমসি ইউনিটগুলো বার্খভকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’।
বার্খোভকা গ্রামটি আর্টিওমভস্কের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত, প্যারাসকোভিয়েভকা থেকে খুব দূরে নয়, যেটি ১৭ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছিল। আর্টিওমভস্ক ডিপিআর-এর কিয়েভ-নিয়ন্ত্রিত অংশে, গোরলোভকা শহরের উত্তরে অবস্থিত এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন। ডনবাসে ইউক্রেনীয় বাহিনী সরবরাহের কেন্দ্র। শহরের জন্য তুমুল লড়াই চলছে।
ইউক্রেনকে ২ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার ইউক্রেনের জন্য ২ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তার একটি নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সিএনএন গতকাল একথা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তহবিলের একটি বিশাল অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদনে অর্থায়নের জন্য ব্যবহার করা হবে।
সম্প্রচারকারী প্রকাশিত ইউক্রেনে সরবরাহ করা সামরিক সরঞ্জামের তালিকায় কিয়েভের অনুরোধ করা যুদ্ধবিমান অন্তর্ভুক্ত নয়। সূত্র : তাস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন