শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে জি-২০ বিভাজন আরো গভীর

শীর্ষ সম্মেলন সম্মিলিত বিবৃতি পরিবেশনে ব্যর্থ

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গত এক বছরে খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ শৃঙ্খলাকে ব্যাহত করেছে এবং দরিদ্র দেশগুলিতে দারিদ্র্য মোকাবেলা ও ঋণ পুনর্গঠন করার পরিকল্পনা হুমকির মুখে ফেলেছে, এমনকি ভগ্নপ্রায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এবং বছর শেষে এ যুদ্ধ বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলির মধ্যে বিভাজনকে আরো গভীর করে তুলেছে। শনিবার এসব বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যখন ভারতের বেঙ্গালুরুতে দুই দিনের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে পশ্চিমা নীতিনির্ধারকরা রাশিয়ার ওপর আরো কঠোর ও বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক এই বছর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক হিসাবে দেশটিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উল্লেখ করেন যে, বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি হুমকির মুখোমুখি, তবে তিনি রাশিয়াকে উল্লেখ করেননি, পরিবর্তে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান ভূ -রাজনৈতিক উত্তেজনার দিকে ইঙ্গিত করেন। একদিকে, মস্কো ভারতে শক্তি এবং সামরিক সরঞ্জামের একটি প্রধান সরবরাহকারী এবং অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম ব্যবসায়ী অংশীদার। তাই ভারত এ সঙ্ঘাতকে একটি ‘যুদ্ধ’ হিসাবে অভিহিত করা থেকে বিরত থেকেছে এবং পরিবর্তে অন্যান্য বিষয়ে মনোনিবেশ করেছে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে পশ্চিমা দেশগুলি মস্কোর উপর নতুন নিষেধাজ্ঞার ঢল আরোপ করেছে এবং ইউক্রেনের জন্য আরও অর্থনৈতিক সমর্থন উন্মোচন করেছে, যেখানে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলি যারা সস্তা রাশিয়ান তেলের সুবিধাগুলি অর্জন করছে, রাশিয়ার সমালোচনা থেকে বিরত থেকেছে। বিভিন্ন মতামত শনিবার সম্মেলনটি ঐতিহ্যবাহী সম্মিলিত বিবৃতি পরিবেশন করতে ব্যর্থ হয়। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলিকে বাধ্য করে তাদের অনিচ্ছুক সহযোগীদের বোঝানোর চেষ্টা করার জন্য যে, ইউক্রেনকে রক্ষার জন্য ব্যয় করা গুরুত্বপূর্ণ। উত্তেজনার সুস্পষ্ট চিহ্ন সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, জি-২০ গোষ্ঠী প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জায়গা নয়, তবে সদস্যরা স্বীকার করেছেন যে, প্রতিরক্ষার বিষয়গুলি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক পরিণতি ঘটাতে পারে।

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের প্রকাশিত সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেশিরভাগ সদস্য ইউক্রেনের যুদ্ধের জোরালো নিন্দা করেছেন, তবে সার্বিক পরিস্থিতি ও নিষেধাজ্ঞাগুলোর বিষয়ে তাদের ভিন্ন মতামত এবং মূল্যায়ন ছিল। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাশিয়া ও চীন ইউক্রেন যুদ্ধের উল্লেখ রয়েছে, এমন অংশগুলিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেছে। সম্মেলনটি বৈশ্বিক অর্থনীতির এমন এক গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে ব্যাপক বিভাজনের সাথে সমাপ্ত হয়েছে, যখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ গত মাসে তার বৈশ্বিক অর্থনীতি সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে বলেছে যে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পৃথিবীর আকাশে অনিশ্চয়তার মেঘ ঘনিয়ে এনেছে। সংস্থাটি আরও উল্লেখ করেছে যে, বিশ্বে ক্রমবর্ধমান বিভাজন ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধির উপর আঘাত হানবে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য নীতি অধ্যাপক ইশ^র প্রসাদ বলেন, ‘নিশ্চতভাবে জি-২০ এ বিভাজন তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আক্রমণাত্মক ব্যবহার অন্যান্য দেশগুলির মধ্যে উদ্বেগ উত্থাপন করেছে যে, এমনকি যদিও তারা রাশিয়ার পদক্ষেপ সমর্থন করেনি, কিন্তু তারা যেকোনও সময় ওয়াশিংটনের আক্রোশের মুখোমুখি হতে পারে।’

ইউরোপীয় অনেক দেশ বিশ্বাস করে যে, যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিদ্যুৎ চালিত যানের জন্য মার্কিন ভর্তুকিগুলির তুলনায় ইউরোপীয় ভর্তুকির পার্থক্য প্রকাশ করে চলেছে, তাতে তাদের অর্থনীতির ক্ষতি হবে। এটি ২০২১ সালের একটি বৈশ্বিক কর চুক্তির প্রয়োগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে। রাশিয়ার বিপরীতে দাড়ানোর জন্য ইউক্রেনকে মাত্রাছাড়া সমর্থন অনেক দেশের জটিল ঘরোয়া রাজনীতিতে পরিবর্তন ঘটতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প সহ ক্রমবর্ধমান সংখ্যক রিপাবলিকান সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে যুক্তি দিয়ে আসছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র কিইভকে অবিরাম সমর্থন করতে পারে না। তারা দাবি করেছেন যে, গত বছর ইউক্রেনকে ১ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি সহায়তা দেয়ার পর এখন ১৯ লাখ কোটি ডলারের রেকর্ড মাত্রার অপরিশোধিত ঋণ এবং দুর্বল অর্থনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নিজের সমস্যার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেয়া।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Nazmul Hasan ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:১৬ এএম says : 0
ইউক্রেনকে রাশিয়ার সাথে অন্তভূক্ত করা হলে বিশ্বে শান্তি ফিরে আসবে,
Total Reply(0)
Mizanur Mollah ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:১৬ এএম says : 0
বাংলাদেশে জাতীয় শত্রু ইন্ডিয়া ও চায়না
Total Reply(0)
Yeasin Ahmed ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:১৬ এএম says : 0
আমেরিকার পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছে ন্যাটো ভুক্ত অনেক দেশ...
Total Reply(0)
Amir Khan ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:১৭ এএম says : 0
অনেক সত্য কথা আছে এখানে ইতিহাস আমরা জানি এ কারণে অনেকের চোখ আমেরিকার সবচেয়ে বড় যুদ্ধ অপরাধী আজকে আমেরিকাকে যদি কেউ দমাতে পারে তাহলে রাশিয়া আর এখন সেটাই হচ্ছে হওয়া উচিত
Total Reply(0)
Syed Mustakim Shopon ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:১৭ এএম says : 0
কাজেই বলা যায় এই পৃথিবীতে সন্ত্রাসবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করেছে পাশ্চাত্যরা। এখন প্রশ্ন হলো ন্যাটো এবং যুক্তরাষ্ট্র হামলা করলে সেটা ন্যায় আর রাশিয়া হামলা করলে অন্যায় হবে কেন
Total Reply(0)
Engr M. A Sayed ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:১৮ এএম says : 0
পশ্চিমা দেশগুলো এবং আমেরিকা ও ইংল্যান্ড চরম ভন্ড,স্বৈরাচার ও বর্ণবাদী। তারা সাদা চামরার মানুষকে মানুষ ভাবে বাকিরা তৃতীয় শ্রেনির মানুষ। এরা লুটেরা। সমস্ত বিশ্বে ধর্ম দিয়ে দন্দ্ব তৈরি করে আর মানবাধিকারের নামে যুদ্ধ লাগায়। বিশ্বটাকে লুটপাট করে নিয়েছে। এখন তাদের মূল ব্যবসা হলো অস্ত্র বিক্রি ও অন্যদেশের তেল,গ্যাস লুটপাট করা।
Total Reply(0)
Didar Islam Dipu ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:১৯ এএম says : 0
দুনিয়ার সব সমস্যার মূল হইলো একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এই দুই দেশ খালি যুদ্ধ করার ধান্দায় থাকে কারণ যুদ্ধ লাগলে আশে পাশের দেশ গুলাতে তাদের অস্ত্র বিক্রি কয়েকগুন বেড়ে যায়। এই দুই দেশ যতদিন দুনিয়াতে থাকবো ততদিন দুনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হইবো না। তাই দুইদেশ ধ্বংস অনিবার্য, আজ নতুবা কাল এইটা ঘটবোই। সাথে খুব তাড়াতাড়ি ইউরোপ বুঝতে পারবো যে ন্যাটো হইলো আমেরিকাকে রক্ষা করার বাহিনী, ইউরোপকে নয়। দুনিয়ার কোন পরাশক্তি চিরস্থায়ী না এইটা ইতিহাস স্বাক্ষী।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন