কনসোর্টিয়াম নিউজ পোর্টালের সাথে এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন অনুসন্ধানী সাংবাদিক সেমুর হার্শ বলেছেন, রাশিয়ার সাথে সঙ্ঘাতে মার্কিন প্রশাসনের ইউক্রেনের বিজয়ের আশা ‘আত্মঘাতী’।
‘এটা চিন্তা করা আত্মঘাতী ছিল যে, আপনি সেই যুদ্ধে জিততে পারবেন, ইউক্রেন সেই যুদ্ধে জিততে পারবে। সেখানে খুব বেশি দুর্নীতি হয়েছে। এটি একটি খুব, খুব খারাপ সিদ্ধান্ত ছিল। আমাদের শান্তির জন্য চাপ দেয়া উচিত ছিল, আমাদের একটি চুক্তি করা উচিত ছিল’ বলেছেন হার্শ, যিনি এর আগে রাশিয়ার নর্ড স্ট্রিম এবং নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপলাইনকে লক্ষ্য করে বিস্ফোরণের বিষয়ে তার ফলাফল প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘রুশ সরকারকে এখনই আশ্বস্ত না করা নিছক বোকামি যে, আমরা ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করতে আগ্রহী নই। দুর্নীতির কারণে ন্যাটো যেভাবেই হোক ইউক্রেনকে চায়নি। সেখানে অনেক খারাপ ভুল হয়েছে। এটা বিশ্বাস করা অসম্ভব। এ নেতৃত্ব কতটা নির্বোধ ছিল এবং তারপরে তারা যুদ্ধে লেগে থাকে’।
সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে হার্শ গত ৮ ফেব্রুয়ারি একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন যে, ইউএস নৌবাহিনীর ডুবুরিরা ২০২২ সালের জুনে বাল্টপস অনুশীলনের আড়ালে নর্ড স্ট্রিম ১ এবং ২ গ্যাস পাইপলাইনের নিচে বিস্ফোরক ডিভাইস স্থাপন করে এবং নরওয়েজিয়ানরা তিন মাস পরে বোমাগুলো সক্রিয় করে। সাংবাদিকের মতে, হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সাথে নয় মাস আলোচনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্যক্তিগতভাবে অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন তাস-কে দেয়া এক মন্তব্যে বলেছেন যে, হার্শের অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং সম্পূর্ণ কল্পকাহিনী।
রাশিয়াকে ধ্বংস করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পশ্চিমারা - ক্রেমলিন : ইউক্রেনে রুশ হামলার এক বছর হতে আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। এমন সময় পশ্চিমা শক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য দিলেন জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেঞ্জিয়া। গত শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে এ মন্তব্য করেন নেবেঞ্জিয়া। তিনি বলেন, দেশরক্ষা ব্যতীত আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। নিজেদের পরিচয় আর ভবিষ্যৎ রক্ষা করাই মস্কোর লক্ষ্য। বৈঠকে মিনস্ক চুক্তি ভঙ্গের জন্য ইউক্রেনকে দোষারোপ করেন নেবেঞ্জিয়া। একইসঙ্গে ফ্রান্স ও জার্মানিসহ পশ্চিমাদের ওপরও যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ করেন ভ্যাসিলি নেবেঞ্জিয়া। তার দাবি, পশ্চিমারা মস্কোকে ধ্বংস করে দিতে চায়।
প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানকে অযৌক্তিক ও মানবতাবিরোধী আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘে ফ্রান্সের প্রতিনিধি। তিনি রাশিয়ার এ যুদ্ধকে ঘৃণিত আখ্যা দিয়েছেন। গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এখনও চলছে এ অভিযান। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অস্ত্র ও অর্থসহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধবিমান হস্তান্তরে মিত্রদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবে যুক্তরাষ্ট্র : হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের সমন্বয়ক জন কিরবি শুক্রবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের কেউ যদি ইউক্রেনের কাছে যুদ্ধবিমান হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ওয়াশিংটন সেটাকে স্বাগত জানাবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা কখনই অন্য অংশীদারকে নির্দেশ করিনি যে, তারা [কিয়েভকে] কী দিতে পারে বা দিতে পারে না’। ‘যদি আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের কেউ ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট দিতে চায় আমরা সেটাকে স্বাগত জানাব’।
ইউক্রেনে মার্কিন ফাইটার জেট সরবরাহের সম্ভাবনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, কিরবি উত্তর দেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতোমধ্যেই এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন তার সাথে যোগ করার কিছু নেই।
পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকির সর্বশেষ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য এসেছে যে, দেশটি অন্যান্য ন্যাটো দেশগুলোর সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ইউক্রেনে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে পারে। তবে, মোরাউইকি বলেন যে, ওয়ারশ তার এফ-১৬ বিমান ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত নয়, কারণ তাদের সীমিত সংখ্যক রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৩১ জানুয়ারি বলেছেন যে, ওয়াশিংটন কিয়েভ সরকারের কাছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান হস্তান্তর করবে না। সূত্র : তাস, আলজাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন