সমাবর্তন প্রতিটি বিশ^বিদ্যলিয়ের ভাবগাম্ভীর্যময় একটি অনুষ্ঠান। এটি একটি প্রতীকী অনুশাসন যার মাধ্যমে বাস্তবতার মুখোমুখি হন গ্র্যাজুয়েটরা। এই সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের সকলকে স্মার্ট নাগরিক হতে হবে। স্মার্ট শিক্ষাই স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। আর স্মার্ট নাগরিকরা তৈরি করবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অষ্টম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। ১২ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে (কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ) সমাবর্তনটি অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় সদ্য কৃষিবিদদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী আরোও বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলের জন্য সমাবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। সমাবর্তন গ্র্যাজুয়েটদের সামাজিক দায়বদ্ধাতা নিয়েও সচেতন করে। আমি যদি ভুল না করি তাহলে এই প্রথম বাকৃবির সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করছেন একজন কৃষিবিদ। এই বিষয়টি সমাবর্তনে ভিন্ন একটি মাত্রা যোগ করেছে। সমাবর্তনকে ঘিরে গ্র্যাজুয়েটদের অনেক স্বপ্ন জড়িয়ে থাকে। আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। আমাদেরকে সততা, সহমর্মিতা, পরমতসহিষ্ণুতা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। এই চেষ্টাগুলো নিয়েই আমাদের দেশ গঠনে এগিয়ে যেতে হবে।
বিশ^বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ১১ টায় কৃষি অনুষদের করিডোর থেকে একটি সমাবর্তন র্যালি শুরু হয়। র্যালিটি বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে গিয়ে শেষ হয়। র্যালি শেষে জাতীয় সংগীত, অতিথিদের আসন গ্রহণ, কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং অন্যান্য ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা হয়। পরবর্তীতে কৃষিমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবর্তনের সূচনা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। এসময় তিনি বলেন, কৃষির সম্প্রসারণ, এবং কৃষির সবুজ বিপ্লব আজ গতি পেয়েছে কৃষিবিদদের অবদানে। কৃষিবিদদরা এখন দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধান করছে। দেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিশ^ব্যাপী পরিচিত। স্মার্ট বাংলাদেশ হবে উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নতির জন্য এখন বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচিত হবে। ২০৪১ সালে দেশ হবে সুখী, সমৃদ্ধ দেশ। কৃষিবিদ হিসেবে তোমাদের দায়িত্ব অনেক। কৃষির সকল সেক্টরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গ্র্যাজুয়েট এবং শিক্ষকসহ সকলে কাজ করে যাচ্ছে।
পরবর্তীতে বাকৃবির উচ্চশিক্ষা কো-অর্ডিনেট এবং স্ব-স্ব অনুষদের ডিনগণ ডিগ্রি প্রদানের জন্য অনুষ্ঠানের সভাপতির নিকট আবেদন করেন। এ সময় ¯œাতক, ¯œাতকোত্তর ও পিএইচডি মিলিয়ে মোট ৬ হাজার ৫’শ ২১ জনকে ডিগ্রি এবং ২’শ এক জনকে স্বর্ণপদক প্রদানের ঘোষণা করা হয় ।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ গ্রহণের মাধ্যমে নবীন গ্র্যাজুয়েটরা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। আমাদের সকল কার্যক্রম কৃষিকে কেন্দ্র করে। কৃষির সম্ভাবনা অনেক বেশি। ১৯৭৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেন। সেই ধারাবাহিকতায় কৃষির উন্নয়নে কৃষিবিদরা কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ধান উৎপাদনে বিশে^ বাংলাদেশ ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য় এবং চা উৎপাদনে ৪র্থ। বর্তমানে সবজির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ। আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। সকল প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবিলা করে আমাদের সকলকে এগিয়ে যেতে হবে।
বাকৃবি ৮ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় আরোও উপস্থিত ছিলেন উচ্চশিক্ষা কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, বিশ^বিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন ও অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। এছাড়া ৬ হাজার ৫’শ ২১ জন গ্র্যাজুয়েটসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন