শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

সেচ প্রকল্পের নালার উপর দিয়ে পাউবোর বাঁধ! *পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেটে চৌচির কৃষকের রোপনকৃত ২০০ একর জমি*

নিকলী (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১০:৩৫ পিএম

পানি উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করে উন্নয়ন কাজ করবে-

এমনটাই হওয়ার কথা।কিন্তু কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় ঘটেছে এর উল্টো ঘটনা। এ উপজেলারদামপাড়া এলাকায় একটি সেচ প্রকল্পের নালার উপর দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করায় ওই এলাকার রোপনকৃত বোরো জমিতে এক সপ্তাহ ধরে সেচ দিতে পারছে না কৃষক। এতে প্রায় ২০০ একর ধানখেত শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষকেরা হয়ে পড়েছেন দিশেহারা।বিভিন্ন অফিস আদালতে ঘুরেও মিলছে না এর সুরাহা।জানা গেছে, দামপাড়া ইউনিয়নের রানিকান্দি-খনকারিকান্দা মৌজা এলাকার ওই সেচ প্রকল্পটির ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকার কৃষকেরা জমিতে সেচ দিয়ে আসছে। সেচ প্রকল্পটির ওপর নির্ভরশীল কয়েক হাজার কৃষক।গত এক সপ্তাহ আগে ওই সেচ প্রকল্পের নালার উপর দিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড আড়াআড়ি ভাবে ডুবো বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করে ।এতে বন্ধ হয়ে যায় কৃষকের জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা।হাওর এলাকার বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প'র আওতায় কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এই ডুবোবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে।পানি উন্নয়ন বোর্ড কাণ্ডে সেচ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে গতকাল সকাল আটটার দিকে যাওয়া হয় প্রকল্প এলাকায়।এ সময় কথা হয় কয়েকশো কৃষকের সাথে।তারা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ডুবোবাঁধ করতে গিয়ে সেচ নালা বন্ধ করে দিয়েছে। নালার মধ্যে কোনরকম কালভার্ট দেওয়া হয়নি।কৃষকেরা জানান, এই নালা বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।কৃষকেরা বলেন, ৪০ বছর ধরে তারা এই সেচনালা ব্যবহার করছেন।এবারও বোরোর আবাদ শুরুর সময় তারাঅনেক আনন্দ নিয়ে নরসুন্দা নদী থেকে এই সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে জমিতে পানি দিয়েছেন। পানি পেয়েধানের চারাগুলো তড়তড়িয়ে বেড়ে উঠেছিল। কিন্তু সপ্তাহ ধরে সেচনালার গলা টিপে ধরায় পানির অভাবে ধানগাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। অথচ এ সময় ধানগাছের গোড়ায় পানি রাখতে হয়।কৃষকেরা জানান, দামপাড়া, মজলিশপুর, জালালপুর, নবীনপুর, টেঙ্গুরিয়া গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক এই সেচ প্রকল্পের সাথে জড়িত। এসব গ্রামের কৃষকেরা ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে এ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে নরসুন্দা নদীর পানি দিয়ে বোরো আবাদ করে আসছেন। সেচ নালা বন্ধ করে ডুবোবাঁধ করায় তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।কৃষকেরা জানান,সেচ প্রকল্পটি এলাকার কয়েক হাজার কৃষকের জমি বাঁচিয়ে রেখেছে। সেচ প্রকল্পের ক্ষতি করে ডুবো বাঁধ নির্মাণ করায় তারা হতভম্ব।সেচ প্রকল্পটি সম্পর্কে খোঁজ জানা গেছে, আগে এটি ডিজেল চালিত ইঞ্জিনে চলত।বিগত ১০ বছর ধরে এই প্রকল্পটি পল্লী বিদ্যুতের আওতায় চলছে। এ প্রকল্পকে ঘিরে পাম্পস্টেশন, ২০০ ঘোড়া শক্তি সম্পন্ন দুটি মোটর, ছোট-বড় অসংখ্য সেচখাল, নিষ্কাশন খাল খনন করা হয়েছে। এগুলো সব করা হয়েছে কৃষকের টাকায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড বিনা নোটিশে কৃষকদের মালিকানাধীন সেচ প্রকল্পের নালাটি বন্ধ করে দিয়েছে।এখন পানির অভাবে চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমি ফেটে চৌচির। গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সেচ প্রকল্পেটির অধীন সবগুলো জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। সেচের পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক কাঁদছেন।কোনো কোনো কৃষক আশপাশের খাদ থেকে জমিতে পানি সেচ দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এটা আর কতদিন।এতে তাঁদের চাষের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আর যেসব কৃষক এ ব্যবস্থা করতে পারেননি, তাঁদের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।পশ্চিম টেঙ্গুরিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, 'উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের সেচ নালা বন্ধ করে দেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড, এটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।'নবীনপুর গ্রামের কৃষক সুরেন্দ্র দাস বলেন, 'সরহার যে আমরার জল বন্ধ কইরা দিলো, আমরা এহন কী কইরা জমি বাঁচায়াম'।দামপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ লোকমান বলেন, 'এই স্কিমে আমরার জমি আছে ২০ একরের মত ভাইয়েসারি বেহে মিলাইয়া। পানির কারণে সব জমি নষ্ট হওয়ার বাও হইছে। পানির লাইন বন্ধ করে দিছে। রাস্তার নিচে নালার মধ্যে কালভার্ট দিলে তো আর এই সমস্যা হতো না।'আলিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, 'পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচিত ছিল আমাদের সেচ নালা বন্ধ না কইরা রাস্তা করা। সেচ নালার জায়গায় বক্স কালভার্ট দিলে নালাও বন্ধ হইতো না রাস্তাও সুন্দর হইত। কিন্তু কে শুনে কার কথা, আমাদের সর্বনাশ করে ফেলেছে।'এ ব্যাপারে নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, 'বিষয়টির আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। কৃষকদের ক্ষতি করে কারোরই কোনো কাজ করা উচিত নয়। ক্ষতি হলে কৃষকের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে আমাদের সাথে সমন্বয় না করেই। সমন্বয়টা থাকলে ভালো হতো।'ডুবোবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ভৈরব) আজিজুল গনি আকাশ বলেন, 'কৃষকদের সমস্যার কথা আমাদের কানে এসেছে। আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে কেউ কেউ। আমরা বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করছি, স্থায়ীভাবে কিছু করা যায় কিনা।'

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন