শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

আকর্ষণীয় নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মান ও ডিগ্রি কলেজের চেয়েও খারাপ

| প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আকর্ষণীয় নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও ডিগ্রি কলেজের চেয়েও দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও আগামীর ভাবনা নিয়ে ‘অ্যাজেন্ডা ২০৩০ : শিক্ষার নতুন দিগন্ত’ শীর্ষক এক সভায় তিনি একথা বলেন। হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা বিষয়ে অনেক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। তবে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করলে দেখা যাবে মানসম্মত শিক্ষা নেই। এক সময় জমির মালিকানা ছিল আমাদের সমাজে বৈষম্য তৈরির অন্যতম সুযোগ। আজকে মানসম্মত শিক্ষার এক্সেস আছে কিনা, এটা হয়ে গেছে বৈষম্য তৈরির অন্যতম সূচক। মানসম্মত শিক্ষা বাংলাদেশে নেই তা কিন্তু নয়। তবে এটি আইল্যান্ড।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘সার্বজনীন নিম্নমানের শিক্ষার কারণে শিক্ষার পরও বেকার থেকে যাচ্ছে। এ কারণেই পরিসংখ্যানে বেরিয়ে আসছে ক্লাস ফাইভ সার্টিফিকেট পাওয়ার পর তার কোনো সুফল নেই। নিম্নমানের সার্বজনীন শিক্ষার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা প্রতিটি গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় করে ফেলতে চাচ্ছেন, করেও ফেলেছেন। আপনি যদি পটুয়াখালি যান সেখানেও সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, বাট অনলি নামটাই আকর্ষণীয়। বাস্তবটা হলো ডিগ্রি কলেজের থেকেও দুর্বল একটা অবস্থা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তুলে ধরে জিল্লুর রহমান বলেন, একটার পর একটা ডিপার্টমেন্ট খুলছে। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে গ্লোবাল র‌্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান কোথায়? কয়টা ছাত্র আছে সেই সূচক জানার, মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করার।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষা নিয়ে আমাদের খাতভিত্তিক চিন্তা আছে। কিন্তু বৃহৎ চিন্তা নেই। অবকাঠামো নিয়ে আমরা বৃহৎ চিন্তা করছি, পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল, বহুকিছু চিন্তা করছি। শিক্ষা নিয়ে বৃহৎ চিন্তা করার জন্য সুশীল সমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে বলেন, যদি পদ্মাসেতু নিজেদের টাকায় করা সম্ভব হয়, তবে এক হাজারটি সম্পূর্ণ সরকারি খরচে মানসম্মত মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও করা সম্ভাব।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা প্রচ- চাপে আছি। নানা ধরনের বার্গেনিং (দেনদরবার) আছে। যে রিসোর্স (সম্পদ) আমাদের হাতে আছে এগুলোর ওপর এতো চাপ বিভিন্ন মহল থেকে, সেগুলো যে কোনো রাজনৈতিক সরকারের পক্ষে মোকাবেলা করা কষ্টকর।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ৬৫ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল কোনো ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়াই চলছে। আমরা আশা করি, শিক্ষা আইনে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হওয়ার বিধান রাখা হবে।’
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘আমরা যে উন্নয়ন বাজেট করি, কোনো মন্ত্রণালয় এর ৮০-৮১ শতাংশের বেশি খরচ করতে পারে না। কাজেই বাস্তবায়ন ফলপ্রসূ না করে বাজেট বরাদ্দ বাড়ালেই কাজে আসবে না।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর সাধারণ যোগ-বিয়োগ করতে পারে না। আর মেধাবী শিক্ষকের যে কথা বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে বলব, প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হতে হবে, কোনো তদবির-সুপরিশ চলবে না। তাহলে মেধাবীরা শিক্ষাকতা পেশায় আসবেন।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মনজুর আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের দক্ষ শিক্ষকের ক্ষেত্রটি খুবই দুর্বল। ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করছে। আবার স্কুলের অবকাঠামোও খুবই দুর্বল। স্কুলের খাতায় যাদের নাম আছে তারা সবাই স্কুলে গেলে বসার জায়গা পায় না। অনেক স্কুলে দুই শিফটে ক্লাস হয়। অনেক স্কুলের খেলার মাঠ ও সীমানা প্রাচীর নেই।’ গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চলনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন