রাজধানীর অবৈধ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে আগামী সপ্তাহে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যৌথ অভিযানে নামছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন উদ্ধার কাজ শেষে ফায়ার সার্ভিস প্রতিনিধি দলের দেশে ফেরার বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, কোনো কিছু বাস্তবায়ন করতে কিছুটা সময় লাগে। আগামী সপ্তাহেই কিছুটা বাস্তবায়ন আপনারা দেখতে পাবেন। প্রথমে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা অভিযানে যাবো, যেখানে ভবনের নিয়মগুলো মানা হয়নি। যেসব ভবনে ফায়ার সেফটি আইন মানা হয়নি সে বিষয়গুলো আমরা দেখবো। অন্য বিষয়গুলো নির্ধারিত ডিপার্টমেন্ট দেখবে।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন। আমাদের ১৪ হাজার কর্মীর সবাই প্রশিক্ষিত। তাদেরকে প্রতিনিয়তই আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি, এটা চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের উন্নত যন্ত্রপাতিও আছে। তবে বড় দুর্যোগের ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই যথেষ্ট না। তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যারা আমাদের সহযোগী সংস্থা রয়েছে, তাদের সঙ্গে কাজ করছি। এমন কোনো ঘটনা যদি ঘটে আমাদের প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ ও মহড়াগুলো অব্যাহত রাখছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের রাজধানী কতটা পরিকল্পিত এ উত্তরটা আপনাদের কাছে আছে। তবে কোন ঘটনা ঘটলে আমি কতটুকু তৈরি সেটা হচ্ছে বিষয়। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ১৪ হাজারের বেশি কর্মীর সবাই প্রশিক্ষিত। আমাদের ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরির টার্গেট ছিলো, এর মধ্যে ৫০ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরি করেছি। তারা আবার অন্যদের প্রশিক্ষিত করছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ হলে আমরা ঢুকতে পারবো কি-না সেটা বিষয় না। আমাদের ঢুকতেই হবে। এজন্যই প্রশিক্ষণ। তাই এমন কিছু হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাই না এমন কোন ঘটনা হোক। কিন্তু প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত বিল্ডিং কোড অনুযায়ী যেসব ভবন হয়নি, সেগুলো শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে আমরা সিটি কর্পোরেশন ও রাজউকের সঙ্গে কাজ করছি। আমার যে এখতিয়ার আছে তা সিটি কর্পোরেশন ও রাজউকের সঙ্গে যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাস্তবায়নের করার চেষ্টা করছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এক লাখের উপরে গার্মেন্টস কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রত্যেকে তাদের পরিবার ও নিজ কমিউনিটিকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। স্কুল-কলেজে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সম্মিলিত চেষ্টা করতে হবে। আমাদের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আছে, যেটা নাই তার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলছি।
পুরান ঢাকায় অবৈধ কেমিক্যালের দোকানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাজ অগ্নিনির্বাপণ করা, কারখানা সরানোর কাজ নয়। নিমতলি ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের পর ওই এলাকায় এমন কোন দোকানের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না। যা আছে সেগুলো অবৈধভাবে হচ্ছে।
তুরস্কে উদ্ধার অভিযান শেষে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি দলের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিনিধিদল উদ্ধার অভিযান শেষ করে গতকাল দেশে ফিরেছে। তুরস্কে তাদেরকে কাজ করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আমাদের এ কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে আজকের দিনে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের পতাকা সুউচ্চভাবে ও সুনামের সাথে উড়ছে। তিনি আরও বলেন, প্রথমবারের মতো ফায়ার সার্ভিস দেশের বাইরে উদ্ধার অভিযানে গেছে। সেখান থেকে আমরা আমাদের পেশাগত দক্ষতা অনেক উঁচুতে নিয়ে গিয়েছি। দোয়া করবেন আমাদের দেশে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, যদি ঘটে আমরা পাশে আছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন