জনবল সংকট সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দক্ষিণাঞ্চলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স । অথচ প্রতিষ্ঠানটি এ অঞ্চলের কোটি মানুষের জানমাল ছাড়াও সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিশাল সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এখনো দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২ উপজেলার ৪ টিতে দমকল বাহিনী পৌছতে পারেনি। আর পুরো বিভাগের ৬টি জেলা ও ৪২টি উপজেলাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি এ্যাম্বুলেন্সের অধিকাংশই বিকল। এমনকি এ অঞ্চলের দুুটি রিভার ফায়ার স্টেশনেই এখন আর কোন সচল এ্যাম্বুলেন্স নেই। গোটা বিভাগে ডুবুরী মাত্র ৩জন।
পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটির জনবল সংকট সহ অবকাঠামোর দূর্বল অবস্থা সঠিক সেবা প্রদানকে বাধাগ্রস্থ করছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৩টি প্রথম শ্রেণী ও ৩৫ টি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ফায়ার স্টেশন ছাড়াও দুটি রিভার ফায়ার স্টেশনে মোট মঞ্জুরীকৃত প্রায় ৯৭৫ জনবলের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র সাড়ে ৭শর মত। বিপুল জনবল ঘাটতি নিয়ে অতি স্পর্ষকাতর ও জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটির সেবা কার্যক্রম যথেষ্ঠ ব্যহত হলেও এব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগীয় উর্ধতন কর্মকর্তাগন কোন মন্তব্য করেননি। তাদের মতে, জনবল নিয়োগ একটি নিয়মিত ও চলমান প্রক্রিয়া। সদর দপ্তর সহ মন্ত্রনালয় এ বিষয়ে সার্বক্ষনিকভাবেই কাজ করছে। অদর ভবিষ্যতেই এ সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে বলেও মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহল।
এমনকি নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলে নৌ ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা মাত্র দুটি। খোদ বরিশাল বিভাগীয় সদরের একমাত্র রিভার ফায়ার স্টেশনে এখনো ৩০ বছরে পুরোনা অগ্নি নির্বাপন নৌযান চলছে যোড়াতালি দিয়ে। বরিশাল ও পটুয়াখালী রিভার ফায়ার স্টেশনেই রিভার এ্যামস্বুলেন্স বিকল হয়ে আছে আরো ২০ বছর আগে থেকে। আর পুরো বিভাগ যুড়ে দমকল বাহিনীর ডুবুরীর সংখ্যা সর্বসাক’ল্যে মাত্র ৩জন। পটুয়াখালী রিভার ফায়ার স্টেশনে কোন ডুবুরী নেই। অথচ প্রতিটি জেলায় ৬জন ডুবুরী সহ একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট গঠনের সরকারী সিদ্ধান্ত রয়েছে।
প্রতি বছরই দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৫শ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ২৫-৩০ কোটি টাকারও বেশী সম্পদ পুড়ে গেলেও দমকল বাহিনীর অভিযানে শত শত কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটির কাঙ্খিত উন্নয়ন হচ্ছেনা। এমনকি প্রতি বছরই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে কয়েকশ সড়ক দূর্ঘটনা পারবর্তি উদ্ধার অভিযানেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অংশ নিয়ে থাকেন। গত বছর এ ধরনের দূর্ঘটনায় প্রায় ৮০ জন নিহত ও আরো ৪ শতাধীক যাত্রী ও পরিবহন কর্মী সহ সাধারন পথচারী আহত হন। দূর্ঘটনায় হতাহতদের উদ্ধার সহ সড়কÑমহাসড়ক সচল রাখতে দমকল বাহিনী যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে।
এখনো দক্ষিণাঞ্চলে অগ্নিকান্ডের একটি বড় অংশ যুড়েই রয়েছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট। তাই বিশেষজ্ঞগন সরকারীÑবেসরকারী সব প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা সহ আবাসিক ভবনে বিদ্যুৎ লাইন ছাড়াও সবধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের বিষয়ে অধিকতর মনযোগী হবার পরামর্শ দিয়েছেন। জনবল সংকটের মধ্যেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের মাধ্যমে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ্য করে দিক নির্দেশনা প্রদানেরও তাগিদ রয়েছে ওয়াকিবাহাল মহলের।
তবে এখনো বরিশালের আগৈলঝাড়া, পটুয়াখালীর দুমকি ও রংগাবালীতে দমকল বাহিনী পৌছতে পরেনি। মুলাদী, গলাচিপা এবং তালতলীতেও ফায়ার স্টেশন নেই। তবে নির্মান কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
অপরদিকে গোটা দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে ফায়ার স্টেশন সহ দমকল বাহিনীর সব ধরনের অবকাঠামোরই অত্যন্ত করুন হাল। বেশীরভাগ ফায়ার স্টেশনের নিয়মিত মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন হচ্ছে না। তহবিল সংকটে গনপূর্ত অধিদপ্তর কাজ করতে পারছে না। এমনকি নানামুখি সীমাবদ্ধতায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও সামান্য মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে বেশীরভাগ ফায়ার স্টেশনের অবকাঠামোর অবস্থা ক্রমশ নাজুক হচ্ছে।
তবে বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৭ বছর পরে ফায়ার সার্ভিসের বিভাগীয় দপ্তর সহ সরঞ্জাম মেরামত কারখানা ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ভ’মি অধিগ্রহন করা হলেও এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কবে শুরু হবে তা বলতে পারছেন না কেউ। দেশের সব বিভাগীয় সদরে ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের পারিকল্পনার অংশ হিসেবে বরিশালের দপদপিয়া এলাকায় ভ’মি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া আটকে আছে আইনী জটিলতায়।
অপরদিকে ১৯৫০-এর দিকে বরিশাল শহরে দ্বিতীয় শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনটিও প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হবার পাশাপাশি নগরীর কাশীপুরে আরেকটি প্রথম শ্রেণীর ফায়ার স্টেশন চালু হয়েছে। তবে মহানগরীর রূপাতলী এলাকায় অনুরূপ আরেকটি প্রথম শ্রেণীর ফায়ার স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্যে ভ’মি অধিগ্রহনের বিষয়টি থমকে আছে আইনী লড়াইয়ে। গত ৫বছরেরও বেশী সময় ধরে বিষয়টি নিয়ে নি¤œ ও উচ্চ আদালতের পরে এখন বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন