শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

নানামুখী সীমাবদ্ধতায় সেবা ব্যাহত

দক্ষিণাঞ্চলে ফায়ার সার্ভিসের হালচাল

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

জনবল সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দক্ষিণাঞ্চলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। অথচ প্রতিষ্ঠানটি মানুষের জানমাল ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশাল সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২ উপজেলার ৪টিতে এখনো পৌঁছাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। আর পুরো বিভাগে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি অ্যাম্বুলেন্সের অধিকাংশই বিকল। দুুটি রিভার ফায়ার স্টেশনেই কোন সচল অ্যাম্বুলেন্স নেই। গোটা বিভাগে ডুবুরি মাত্র ৩ জন।

পাশাপাশি জনবল সঙ্কটসহ অবকাঠামোর দুর্বল অবস্থা সঠিক সেবা প্রদানকে বাধাগ্রস্থ করছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৩টি প্রথম শ্রেণি ও ৩৫টি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশন ছাড়াও দুটি রিভার ফায়ার স্টেশনে মোট মঞ্জুরিকৃত প্রায় ৯৭৫ জনবলের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র সাড়ে ৭শ’র মত। বিপুল জনবল ঘাটতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সেবা কার্যক্রম যথেষ্ট ব্যাহত হলেও এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোন মন্তব্য করেননি। তাদের মতে, জনবল নিয়োগ একটি নিয়মিত ও চলমান প্রক্রিয়া। সদর দফতরসহ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সার্বক্ষণিকভাবেই কাজ করছে। অদূর ভবিষ্যতে এ সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা যাবে বলেও মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল সূত্র।
নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলে নৌ ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা মাত্র দুটি। বরিশাল বিভাগীয় সদরের একমাত্র রিভার ফায়ার স্টেশনে ৩০ বছরে পুরানো অগ্নি নির্বাপন নৌযান চলছে জোড়াতালি দিয়ে। বরিশাল ও পটুয়াখালী রিভার ফায়ার স্টেশনেই রিভার অ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে আছে আরো ২০ বছর আগে থেকে। আর পুরো বিভাগে ডুবুরির সংখ্যা মাত্র ৩ জন। পটুয়াখালী রিভার ফায়ার স্টেশনে কোন ডুবুরি নেই। অথচ প্রতিটি জেলায় ৬ জন ডুবুরিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট গঠনের সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে।
প্রতি বছরই দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৫শ’ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৫-৩০ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ পুড়ে গেলেও ফায়ার সার্ভিসের অভিযানে শত কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটির কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হচ্ছে না। প্রতি বছর কয়েকশ’ সড়ক দুর্ঘটনা পরবর্তী উদ্ধার অভিযানেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অংশ নেয়। দুর্ঘটনায় হতাহতদের উদ্ধারসহ সড়ক-মহাসড়ক সচল রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে।
এখনো বরিশালের আগৈলঝাড়া, পটুয়াখালীর দুমকি ও রাঙ্গাবালীতে পৌঁছাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। মুলাদী, গলাচিপা এবং তালতলীতেও ফায়ার স্টেশন নেই। তবে নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলে ফায়ার স্টেশনসহ সব ধরনের অবকাঠামোরই অত্যন্ত করুণ হাল। বেশিরভাগ ফায়ার স্টেশনের নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। তহবিল সঙ্কটে গণপূর্ত অধিদফতর কাজ করতে পারছে না। নানামুখী সীমাবদ্ধতায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও সামান্য মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে বেশিরভাগ ফায়ার স্টেশনের অবকাঠামোর অবস্থা ক্রমশ নাজুক হচ্ছে।
তবে বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৭ বছর পরে ফায়ার সার্ভিসের বিভাগীয় দফতরসহ সরঞ্জাম মেরামত কারখানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হলেও এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কবে শুরু হবে তা বলতে পারছেন না কেউ। দেশের সব বিভাগীয় সদরে ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বরিশালের দপদপিয়া এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে আছে আইনি জটিলতায়।
অপরদিকে ১৯৫০-এর দিকে বরিশাল শহরে দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশনটিও প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হবার পাশাপাশি নগরীর কাশীপুরে আরেকটি প্রথম শ্রেণির ফায়ার স্টেশন চালু হয়েছে। তবে মহানগরীর রূপাতলী এলাকায় অনুরূপ আরেকটি প্রথম শ্রেণির ফায়ার স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি থমকে আছে আইনি লড়াইয়ে। গত ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিষয়টি নিয়ে নিম্ন ও উচ্চ আদালতের পরে এখন বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন