ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা ও তার চার সহযোগিকে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। অভিযুক্তদের ১ মার্চ বেলা ১২টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে বলে হল প্রশাসন। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দিনের বিভিন্ন সময়ে অভিযুক্তরা হল ছাড়েন বলে জানিয়েছেন হলের শাখা কর্মকর্তা হামিদা খাতুন। নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, শাখা ছাত্রলীগ সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি ও ফিন্যান্স বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান।
হল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে হল ছাড়েন মোয়াবিয়া জাহান। হলের গণরুম প্রজাপতি-১ এ থাকতেন তিনি। বাবার সঙ্গেই তিনি ক্যাম্পাস ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। পরে দুপুরে নিজের মালপত্র গুছিয়ে হল ছাড়েন অভিযুক্ত ইসরাত জাহান মীম। তারা উভয়ই ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী মেসে উঠেছেন বলে জানা গেছে।
তবে হল প্রশাসনের নির্দেশনার আগেই হল ছেড়েছেন আকতার ঊর্মী। ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হলে গা ঢাকা দেন তিনি। এই অভিযুক্তও ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী মেসে উঠেছেন বলে জানা গেছে। মীম ও ঊর্মী হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে ছিলেন।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হাইকোর্টের নির্দেশে হল ছাড়ে ছাত্রী নির্যাতনের ‘মূলহোতা ও হুকুমদাতা’ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগী তাবাসসুম ইসলাম। অন্তরা হলের দক্ষিণ ব্লকের ৪০৮ নম্বর কক্ষে ও তাবাসসুম প্রজাপতি-২ তে (গণরুম) ছিলেন।
এ বিষয়ে হলের শাখা কর্মকর্তা হামিদা খাতুন বলেন, মঙ্গলবার সকালে মোয়াবিয়া ও দুপুরে মীম হল ছেড়েছে। হল ছাড়ার নির্দেশনার কপি তাদের কাছে পৌছাতে গেলে মীমকে তার রুমে পাই। এ সময় তাকে প্রস্তুতি নিতে দেখেছিলাম। তবে মোয়াবিয়াকে রুমে পাইনি। তার রুমমেটরা জানিয়েছে সকালে হল ছেড়েছে সে। তবে ঊর্মী আগেই হল ছেড়েছেন। প্রভোস্ট স্যারের নির্দেশনায় তাকে ডাকতে গেলে রুমে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শামসুল আলম বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই অন্তরা ও তাবাসসুম ওইদিন সন্ধ্যায় হল ত্যাগ করে। পরে হলের পক্ষ থেকে আবাসিকতা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানালে মঙ্গলবার বাকিরা সবাই হল ছেড়েছে। বুধবার (১ মার্চ) বেলা ১২টার মধ্যে তাদের হল ত্যাগের নির্দেশনা ছিল।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন মঙ্গলবার হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। হাইকোর্টের তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের ঘটনায় চারুকলা বিভাগের শারমীন আক্তার লিমা নামে আরেকজন জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি দেখে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি দুই দফায় হলের গণরুমে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিং, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ ও শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন