শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

খুলনায় এক গৃহবধূ চিকিৎসকের ভয়ঙ্কর যৌন হয়রানির কথা তুলে ধরলেন সংবাদ সম্মেলনে

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২৩, ৮:৩৮ পিএম

খুলনায় যৌন হয়রানির অভিযোগে দু জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন গৃহবধূ নুসরাত আরা ময়না। তিনি তার ৬ বছরের কন্যা অথৈ কে নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন খুলনা আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহ’র কাছে। হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে তিনি নুসরাতকে হক নার্সিং হোম নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে আসতে বলেন। সাতক্ষীরায় কর্মরত স্বামী এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখ খুলনায় না থাকায় সন্তানকে নিয়ে নুসরাতই যেতেন চিকিৎসকের কাছে। আর তখনই শুরু হয় বিপত্তি। চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহ’র লোলুপ দৃষ্টি পড়ে নুসরাতের ওপর। বারবার নুসরাতকে তিনি একা দেখা করতে বলেন। মোবাইলে ক্ষুদে বার্তায় নানা অশালীন কথা লেখেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নুসরাতের সন্তান অথৈ এর চিকিৎসা করতে এক পর্যায়ে অনীহা দেখান। এসকল ঘটনার জেরে দু দিন আগে হক নার্সিং হোমে নুসরাতের স্বামী ও স্বজনদের সাথে শেখ নিশাত আবদুল্লাহ’র হাতাহাতি হয়। শেখ নিশাত আবদুল্লাহ এ ঘটনায় সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। খুলনার চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ ২৪ ঘন্টার কর্মবিরতি আহবান করেন। বিনা চিকিৎসায় সাধারণ রোগিদের চরম দূর্ভোগে পড়তে হয়। নুসরাত আরা ময়না আজ বুধবার যৌন হয়রানি, নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহ ও হক নার্সিং হোমের মালিক চিকিৎসক নুরুল হক ফকিরের নামে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন।
বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পুরো ঘটনা সবার সামনে তুলে ধরেন নুসরাত আরা ময়না। সাংবাদিকদের তিনি জানান, মাত্র এক বছর বয়সেই তাদের একমাত্র সন্তান অথৈই এর হাত আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় চিকিৎসকরা একটু বড় হলে অস্ত্রপচারের পরামর্শ দেন। কিন্তু অর্থ সংকটসহ নানা কারণে করা যায়নি। ২০২২ সালের ২১ আগস্ট খুলনার সরকারি শেখ আবু নাসের হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে গেলে সহযোগী অধ্যাপক ডা. নিশাত আবদুল্লাহ দ্রুত অপারেশন করাতে বলেন। আবু নাসের হাসপাতালে অপারেশন করাতে চাইলে ডা. নিশাত আবদুল্লাহ সেখানে না করে হক নার্সিং হোম নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে অপারেশনের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি হাতের আঙুল অপারেশন করা হয়। এরপর প্রতিদিন ড্রেসিং করাতে হয়। অপারেশনের পর হাতের অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক ২ ঘণ্টা পর পর হাতের ছবি তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠাতে বলেন। নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত ছবি পাঠাতে থাকেন। এই সুযোগে ওই চিকিৎসক হোয়াটসঅ্যাপে তাকে কুরুচিপূর্ণ এবং ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা পাঠাতে থাকেন। একপর্যায়ে একা একা দেখা করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তার কথায় রাজি না হওয়ায় তিনি অথৈ এর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন।
তিনি বলেন, ডা. নিশাত আবদুল্লাহ আমার মেয়ের চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্ট করেন। আমার মোবাইল নম্বরে তার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ৩২ মিনিটে ‘ঘুম?’ রাত ১২টা ৩৪ মিনিটে ‘রাগ?’ রাত ১২টা ৩৮ মিনিটে ‘কথা বলা যাবে?’ সহ বিভিন্ন সময় ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা প্রেরণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ফোন করে আমাকে একা দেখা করতে বলেন। আমার মেয়ের সু-চিকিৎসার কথা চিন্তা করে চিকিৎসকের মোবাইলের কল ও ম্যাসেজের বিষয়ে কাউকে কিছু জানাইনি।
সংবাদ সম্মেলনে অথৈ এর মা বলেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ আমার মেয়েকে নিয়ে শেখপাড়া হক নার্সিং হোমের চেম্বারে ড্রেসিং করানোর জন্য যেতে বলেন। সন্ধ্যায় সেখানে গেলেও আমাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। রাত সাড়ে ৮টায় আমার মেয়েকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে গেলে নিশাত আবদুল্লাহ আমাকে বিভিন্ন প্রকার আপত্তিকর কথাবার্তা বলার একপর্যায়ে আমার হাত ধরে টেনে তার কাছে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়েকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে যান। বিষয়টি ক্লিনিক মালিককে জানালে তিনি ডা. নিশাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো কাউকে না বলার জন্য চাপ দেন।
তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর একজন নার্স অথৈ এর ড্রেসিং করেন। এরপর নানা সময় বিভিন্ন রকম ওষুধ দেন। দ্রুত অবস্থার অবনতি হতে থাকে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হঠাৎ করে অথৈ এর আঙুল হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্রুত হক নার্সিং হোমে ছুটে গেলে ডা. নিশাতসহ অন্যরা কেউই অথৈ এর চিকিৎসা করতে রাজি হয়নি। রাত ১২টার পরে কোনো রকম ড্রেসিং করে বাড়ি ফিরে যান। এরপর থেকে অথৈ কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আবু নাসের হাসপাতাল, হক নার্সিং হোমে গিয়েছি, কেউ অথৈ এর চিকিৎসা করাতে রাজি হচ্ছে না। এর মধ্যে জানতে পেরেছি, ওর বাবার নামে মামলা হয়েছে।
মামলা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ সম্পর্কে বিএমএ সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, একজন চিকিৎসককে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে মারধর করা হয়েছে। এই হামলাকারীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। যদি সত্য হয় তাহলে তাকেও আইনের আওতায় আনলে চিকিৎসকদের কোনো আপত্তি থাকবে না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন