বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে দাঁড় করিয়ে আদালতে আনা ও নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। অতিদ্রæত রুহুল কবির রিজভীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান শুক্রবার (০৩ মার্চ) এক বিবৃতিতে বলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী প্রায় ৩ মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন। তিনি একজন মার্জিত, পরিচ্ছন্ন ও সুপরিচিত রাজনীতিবিদ। তিনি গত ৭ ডিসেম্বর থেকে কারাগারে মিথ্যা মামলায় বন্দি আছেন। এরইমধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে দাঁড় করিয়ে পুরানো ঢাকার সিএমএম কোর্টে আনা হয়। একইভাবে তাকে নিয়েও যাওয়া হয়েছে।
নেতৃদ্বয় বলেন, এমনিতেই রুহুল কবির রিজভী অসুস্থ। তার ওপর তাকে প্রিজনভ্যানে দাঁড় করিয়ে কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা ও নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রিজভীর স্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, রুহুল কবির রিজভী একজন বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি। তাকে সর্বদা লাঠির ওপর ভর দিয়ে চলতে হয়। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হলে অন্যের সাহায্য দরকার হয়। এমন একজন ব্যক্তিকে সেই কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুরনো ঢাকার আদালতে প্রিজন ভ্যানে দাঁড় করিয়ে আনা হয়েছে এবং দুপুর পৌনে ১২টার দিকে একইভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আসলেই অমানবিক, অসাংবিধানিক ও নিষ্ঠুর আচরণ এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
ইউট্যাবের নেতৃদ্বয় বলেন, এরআগে ২৩ জানুয়ারি কারাগারে রুহুল কবির রিজভী পেটে প্রচÐ ব্যথা অনুভব করেন এবং বমি করেন। এমনিতেই তিনি নানা রোগে আক্রান্ত। মহামারী করোনাকালেও তিনি কয়েকবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় চার মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাকে চিকিৎসকের পরামর্শে খুবই মেপে জীবন যাপন করতে হয়। অথচ কারাগারের ভেতরে রিজভীকে অসহনীয় পরিবেশে থাকতে দেওয়া হয়েছে। তাকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে নেওয়ার পর সপ্তাহে প্রায় তিন থেকে চারদিন আদালতে আনা নেওয়া করা হচ্ছে। একজন বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিকে এভাবে বার বার কারাগার থেকে আদালত এবং আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার কারণে রিজভী আরো বেশি অসুস্থ হয়েছেন বলেই সর্বমহলে আলোচনা।
তারা আরও বলেন, আমরা জেনেছি, রিজভীর স্ত্রী আরজুমান আরা আইভী কারাগারে গেলে তাকে অনেক সময় স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় না। আদালতেও তাকে স্বামীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয় না। এ ধরনের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। একজন অসুস্থ ব্যক্তির স্ত্রীকেও দেখা করতে না দেওয়াটা চরম অমানবিক। তার ওপর তাকে প্রিজন ভ্যানে দাঁড় করিয়ে আনা নেওয়া অসাংবিধানিক।
নেতৃদ্বয় বলেন, রুহুল কবির রিজভী শুধু রাজনীতিবিদন নন তিনি একজন আইনজীবীও বটে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক নির্বাচিত ভিপি। তিনি ৯০’র দশকে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে নিজের জীবনবাজি রেখে প্রাণপন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। রিজভীর ন্যায় অসংখ্য ছাত্রনেতা সেসময় রাজপথে নেমে এসেছিলো স্বৈরতন্ত্রের পরিবর্তে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করতে। রিজভী পরবর্তীতে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা শিক্ষক সমাজ মনে করি যে, রিজভীর মতো একজন সজ্জন রাজনীতিবিদকে কারাগারে এ ধরণের অমানবকি আচরণ করা ন্যাক্কারজনক। অবিলম্বে রিজভীর নি:শর্ত মুক্তি এবং কারাগারের বাইরে বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় রুহুল কবির রিজভীর কিছু হলে তার দায় সম্পূর্ণভাবে কারা কর্তৃপক্ষ এবং সরকারকেই বহন করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন