বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

জ্ঞানে সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠী তৈরি জরুরি

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোঃ এনামুল হক খান : এ দেশে সমাজ বলতে প্রকৃত অর্থে বুঝায় গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া মানুষের বৃহৎ সমাজ। গ্রামের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, ঈদ, পূজা-পার্বণ, মেলা, খেলাধুলা ইত্যাদিতে মিলিত হওয়ার সমাজ। হাসি-আনন্দ, দুঃখ-বেদনা ভাগাভাগী করে নেয়ার সমাজ। এ সমাজের ভিত্তি অনেক মজবুত। এ সমাজ একে অপরের সুখ-দুঃখে ঝাঁপিয়ে পড়া হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃস্টানের ঐক্যবদ্ধ সমাজ। গ্রামের সবাই একে অপরের অতি আপন। শহরে এমন দৃশ্য অনুপস্থিত। আগে গ্রামে শিক্ষা কম ছিল বলে সমাজ এগুতে পারেনি। বর্তমানে গ্রামে শিক্ষা বাড়ছে, সমাজও এগিয়ে যাচ্ছে। এই গতি আরো বাড়ানো দরকার। শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর চাইতে আমরা অনেক পিছিয়ে। আমরা জানি, শিক্ষার কারণেই ঘটে সমাজের উন্নয়ন। গ্রামের শিক্ষা যত বেশী এগুবে সমাজ-উন্নয়ন তত বেশী সম্ভব হবে। গ্রামে যাতায়াত ব্যবস্থার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আগের তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে তবে তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়।
আমাদের সমাজ আগেও মজবুত ছিলÑ এখনো আছে। কারোর দুঃখ-কষ্টে ঝাঁপিয়ে পড়তে কেউ কোন দিন কুণ্ঠাবোধ করে না। সম্মিলিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া তাদের চিরাচরিত অভ্যাস। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, তুমুল প্রতিরোধ এর এক অনন্য নজির। জন্মস্থানের প্রতি মমত্ববোধ এবং ঐক্যবদ্ধ সমাজের কারণেই নয় মাসে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়। ঐক্যবদ্ধ হওয়া, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা সবই সমাজের অবদান। বাঙালি ছোটখাটো বিবাদ-বিসংবাদে সমাজের মুরুব্বীদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। এটাই প্রচলিত নিয়ম। তবে বর্তমানে তাদের জন্য দরকার সমাজ উন্নয়নের শিক্ষা। সমাজের মানুষকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করার শিক্ষা। এই শিক্ষা শুধু পুরুষের জন্য নয়-সমভাবে নারীর জন্যও দরকার। সমাজ উন্নয়নে নারী-পুরুষের ভূমিকা সমান, কারোর পিছিয়ে থাকায় সুযোগ নেই। কারণ দেশে জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাছাড়া সুস্থ-সবল শিশু বেড়ে উঠা নির্ভর করে নারীর উপর। তাই প্রয়োজন নারী শিক্ষা নিশ্চিত করা। তাদের পরিচর্যায় একটা শিশু সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে উঠা সম্ভব। এভাবেই গড়ে উঠতে পাওে যোগ্য, সুস্থ-সবল নাগরিক সমাজ।
সমাজকে জাগিয়ে তুলতে সমাজপতিদের দায়িত্ব অনেক। আজ যারা শিল্পপতি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, দেশের উচ্চ পদের কর্মকর্তা তাদেরও নজর দিতে হবে গ্রামের দিকে। বছরে অন্তত কয়েকবার ছুটে যেতে হবে গ্রামে। একা নয়, যেতে হবে নিজের সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজন নিয়ে। যোগ দিতে হবে গ্রামের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। উৎসাহ দিতে হবে গ্রামের ছেলেমেয়েদের। এ উৎসাহ হবে পড়াশুনার মাধ্যমে তাদের গড়ে তোলার উৎসহ। সৎ-যোগ্য মানুষ হওয়ার উৎসাহ। দিতে হবে গ্রামের মেম্বার-চেয়াম্যান ও মাতব্বর শ্রেণীর লোকদের সমাজ চালানোর সুপরামর্শ। এ পরামর্শ তাদের সমৃদ্ধ করবে, ভাবতে শেখাবে, অন্যকেও অনুপ্রাণীত করবে। সমাজকে এগিয়ে নেয়া অলস-অথর্ব লোকদের দ্বারা সম্ভব নয়। দরকার পরিশ্রমী, দক্ষও জ্ঞানে সমৃদ্ধ মানুষ। আলোকিত জনগোষ্ঠী গড়তে আরো দায়িত্ব পালন  করতে পারেন গ্রামের শিক্ষকগণ, যারা রয়েছেন স্কুল-কলেজ মাদ্রসাগুলোতে। শিক্ষকের নজরদারি না থাকলে ছাত্র অছাত্র হবে। পিতামাতা ও মুরুব্বীদের নজরদারি না থাকলে সন্তান বখাটে হবে। সমাজ হবে কলুষিত। সমাজকে গড়তে, এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। ভাল খেলোয়ার হতে হলে যেমন ভাল কোচের প্রশিক্ষণ দরকার তেমনি ভাল ছাত্র তৈরি করতে হলে দরকার ভালো শিক্ষক। পিতা-মাতা, ভাইবোন ও সমাজের কর্তাব্যক্তিদের সমান নজরদারিও দরকার। কোন প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা চোখে পড়লে সমাধানের পথে যেতে হবে। সন্তান যাতে পড়ার সময় পড়ে খেলার সময় খেলে এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে সবাইকে নিয়েই সমাজ। সবার সম্মিলিত দৃষ্টি না থাকলে সন্তান নেশাগ্রস্ত হতে পারে, খারাপ লোকের প্ররোচনায় পড়তে পারে। এতে থাকে সন্তানের বিপথগামী হওয়ায় সমূহ আশংকা ।
সমাজপতিদের সঠিক পরামর্শে উল্লেখিত সমস্যা থেকে উত্তরণ, বেকারত্ব হ্রাস করা সম্ভব। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে গ্রামে কুটিরশিল্প স্থাপন, হাস-মুরগীর খামার প্রতিষ্ঠা, গবাদিপশু পালন করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়াও সম্ভব। অনেকে মৎস্য চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এখানেও শিক্ষা-প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে কোন কিছুতেই বিফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কৃষি প্রধান এ দেশে দক্ষ কৃষি শ্রমিকের অভাব। উন্নত বীজ সংরক্ষণ, সার, কীটনাশক প্রয়োগে দক্ষ লোকের অভাব। এই অভাব ঘুচাতে প্রয়োজন দক্ষতা বৃদ্ধি। কৃষি দপ্তর বন্ধুর মত কৃষককে সকল বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে। আরো রয়েছে গ্রামের খাল বিলে পানির অভাব। পানির অভাব ঘোচাতে মানুষ গভীর নলকূপের দিকে ঝুকছে, ফলে ভূগর্ভস্থ পানির  স্তর নামছে। এটা ভাল লক্ষণ নয়। ইরিগেশনের জন্য সারফেস ওয়াটার ব্যবহার উত্তম। এর জন্য দরকার খাল-বিলের গভীরতা বৃদ্ধি। আমাদের মনে রাখতে হবে সব কিছুই গ্রামের সমাজ উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত। সমাজের সার্বিক উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন। তাই গ্রামের মানুষকে ভালকাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সকল পর্যায়ের পদক্ষেপ দরকার। যাতে সঠিকভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তাদের উদ্যোগী করা যায়। গ্রামের মানুষের জন্য জ্ঞানের সমৃদ্ধি আনয়নে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের আওতায় জ্ঞানের সমৃদ্ধি আনয়ন করা যায়। দেশের পত্র-পত্রিকা ও প্রচার মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগানো যায়।
লেখক: প্রকৌশলী, সংগঠক ও দক্ষিণ মুরাদনগর কল্যাণ সমিতি, ঢাকা-এর সাধারণ সম্পাদক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন