রেজাউল করিম রাজু : রাজশাহী অঞ্চলে শীত এখনো তেমন জাঁকিয়ে না বসলেও হিমালয় ছুঁয়ে আসা হিমেল হাওয়া জনজীবনকে বিপর্যস্ত করছে। পৌষের শেষ প্রান্তে এসে এবার তাপমাত্রা অন্যবারের চেয়ে বেশি। তবে ঠান্ডা বাতাস হাড় কাঁপাচ্ছে। তাপমাত্রা এখনো দুই অংকের ঘরে ওঠানামা করছে। কোনো দিন গাঢ় কুয়াশায় মোড়ানো সকাল আবার কোনো দিন রোদ্র ঝলমলে ভোর। আবহাওয়ার মতিগতি বোঝা ভার। যেদিন কুয়াশায় মোড়া সকাল হচ্ছে সেদিন আধাবেলার আগে আর সূর্যমামার মুখ দেখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে মানুষকে ভোরবেলাতে ছুটতে হচ্ছে রুটি রুজির সন্ধানে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট বেড়েছে। কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঝাড়াফিরা সেরে নাকেমুখে কিছু গুঁজে ছুটছে কর্মের সন্ধানে শহর পানে। গাঢ় কুয়াশার মধ্যেও ভাড়া খরচ কম হওয়ার কারণে বাসের ছাদে চেপে যাত্রা। শ্রম বিক্রির বাজারগুলোয় আগেভাগে পৌঁছতে না পারলে সেদিন আর কাজ পাওয়া যাবে না। আর কাজ না পাওয়া মানে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার। নগরীর শ্রম বিক্রির স্থানগুলো ঘুরে দেখা যায় বাসে-ট্রেনে-সাইকেলে চেপে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছে কাজের সন্ধানে। কিন্তু কাজের বড্ড অভাব। কম মজুরি দিয়ে কাজ পাওয়া যায় না। কাজ না পেলে যাতায়াত ভাড়াটাও লোকসান। রিকশাচালক, ভ্যানচালকদের অবস্থাও তেমনই। ফুটপাথে যারা ব্যবসা করেন তারাও মালের পসরা সাজিয়ে বসছেন অনেক দেরিতে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তেমন ক্রেতা নেই। সকালবেলা অফিসগামীরাও প্রকৃতির বিরূপতায় পড়ছেন বিপাকে। এখন চলছে বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির মওসুম। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে অভিভাবকরা ছোটাছুটি করছেন। পিতা কর্মস্থলে ব্যস্ত। তাই এ গুরুদায়িত্ব পড়েছে মায়েদের ওপর। ভোরবেলা উঠে কিছু মুখে দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরের বাইরে আসা। কেউ কেউ সন্তানকে স্কুলের ভেতরে পাঠিয়ে বাইরে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। স্কুলগুলোর বাইরে অভিভাবকদের বসার মতো কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই। ফলে এখানে-ওখানে দাঁড়িয়ে বসে সময় কাটাতে হয় ছুটির ঘণ্টার অপেক্ষায়। কখনো কনকনে ঠাÐা আবার কখনো খানিকটা গরম। আবহাওয়ার এমন মতিগতিতে শীতজনিত রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। হাড়ের ব্যথা, বাতের ব্যথা আর শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ নিয়ে বয়স্করা ভিড় করছেন চিকিৎসকদের কাছে। মেডিক্যালপাড়া বলে খ্যাত ল²ীপুর মোড় এলাকায় ঘুরে দেখা যায় চিকিৎসকদের চেম্বারে প্রচন্ড ভিড়। বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেখানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বসেন। সেখানে ঠাঁই নেই অবস্থা। অনেকের সিরিয়াল দিনে দিনে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক সর্বত্র প্রচÐ ভিড়। শিশু বিশেষজ্ঞদের চেম্বারেও প্রচÐ ভিড়। শিশুরা আসছে নিউমোনিয়া, টায়ফায়েড ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঠাঁই নেই অবস্থা। এমনিতে সব সময় ভিড় থাকে। কিন্তু এখন চাপটা আরো বেড়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুদের ওয়ার্ড ১০, ২৪, ২৬, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ঠাÐাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের অবর্ণনীয় অবস্থা। বিছানা, মেঝে, বারান্দা কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী যোগ হচ্ছে। হিমশিম খাচ্ছেন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানালেন শিশু ওয়ার্ডগুলোর বেডসংখ্যা সাড়ে তিনশ’ হলেও এখন রয়েছে হাজার দেড়েক রোগী। অবস্থা সহজে অনুমেয়। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে নবজাতকদের নিয়্।ে
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, এখন দিনের সর্ব্বোচ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হিমালয় ছুঁয়ে আসা হিমেল বাতাস। এর সাথে নামছে কুয়াশা। সব মিলিয়ে বিরূপ আবহাওয়া মানুষকে কষ্টে ফেলেছে। পৌষে শীতের তেমন তীব্রতা অনুভব না হলেও মাঘে বাঘ ডাকা শীত নামতে পারে। শীতের আবহাওয়ার রকমফেরে মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলে দিলেও অন্যদিকে জমজমাট চলছে শীতের অন্যতম অনুষঙ্গ পিঠাপুলি, পায়েসসহ রকমারি আয়োজন। নানা নামে বাহারি ডিজাইনে বসছে পিঠামেলা। শীত মানে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাওয়া প্রকৃতি। শুরু হয়েছে ফুল মেলার বাহারি আয়োজন। মানুষ বিশেষ করে এ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণ প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। আর কাকডাকা ভোর হতে অনেক রাত পর্যন্ত চলছে ভাপা পিঠা, কলাইয়ের রুটি, বেগুন ভর্তা আর মরিচের ঝাল। গরু খাসির ভুড়ি দিয়ে তৈরী বট-পরোটার দোকানগুলো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন