এ.টি.এম. রফিক ও আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : বিভাগীয় শহর খুলনা মহানগরীর ব্যস্ততম সড়ক, মোড় থেকে শুরু করে অলিগলিতে তীব্র যানজটে ভোগান্তির সীমা নেই। ছুটির দিন ব্যতীত সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা আর সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যানজটের ভোগান্তি নিত্যদিনের। অনিয়ন্ত্রিত মোটরচালিত রিকশা, অগণিত ইজিবাইক, বেপরোয়া মাহেন্দ্রা-থ্রি হুইলারের মধ্যে ওয়াসার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। এ যেন গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে ক্ষুব্ধ নগরবাসী। প্রধান প্রধান সড়কে মোটর চালিত রিকশা বন্ধ, ইজিবাইকের সংখ্যা ও রুট নির্ধারণসহ একেরপর এক পরিকল্পনা নিলেও কার্যত শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা ফিরছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর শিববাড়ী, পাওয়ার হাউজ, ফেরিঘাট, ডাকবাংলো, শান্তিধাম, ময়লাপোতা মোড়, শামসুর রহমান রোড, কমার্স কলেজ মোড়, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, সিমেট্টি রোড, স্যার ইকবাল রোড, পিটিআই মোড়, টুটপাড়া কবরখানা মোড়, সাতরাস্তার মোড়, ফুলমার্কেট, ক্লে রোড, মহারাজ চত্বর, কদমতলা স্টেশন রোড, কালীবাড়ি রোড, গল্লামারী মোড় ও দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ডসহ নগরীর ব্যস্ততম সড়কে প্রতিদিনই আটকে পড়ছেন কর্মব্যস্ত মানুষ। এসব স্থানে মোটরচালিত রিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও বেপরোয়া মাহেন্দ্রা দখল নিয়েছে। অফিস, স্কুল-কলেজে প্রবেশ ও ছুটির সময়ে যানজটে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন কর্মজীবী ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। কাটার প্লাস দিয়ে ব্যাটারি সংযোগ কেটে দিয়েও যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কেএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ।
একাধিক ট্রাফিক সদস্য জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অন্তত হাজার হাজার অটোরিকশা আর ইজিবাইকের গতিরোধ করে ভিন্ন পথে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। একটি ইজিবাইকের গতিরোধ করে কথা বলার সময় অন্যগুলো ফাঁকি দিয়ে চলে যায়।
কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) তারেক আল মেহেদী জানান, জেলা প্রশাসন, কেসিসি, কেএমপি যৌথ উদ্যোগে শহরে নির্দিষ্ট পাঁচ হাজার ইজিবাইক চলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য সিটি কর্পোরেশনকে তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্ব দেয়া হলেও দীর্ঘ সময়ে তা সম্পন্ন হয়নি। ফলে ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। দিনের বেলায় আমরা বন্ধ রুটে ইজিবাইক থামিয়ে যাত্রী নামিয়ে দেই। কিন্তু সন্ধ্যার পরে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ছেড়ে দেই। ট্রাফিকের ডিউটি এখন ১ ঘণ্টা বাড়িয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের সূত্রমতে, শহরে লাইসেন্সধারী (পায়ে চালিত) রিকশা ১৭ হাজার হলে চলাচল করে ২০ সহ¯্রাধিক। এছাড়া অগণিত মোটরচালিত রিকশা চলাচল করছে। এক হাজার ৯৬৩টি অনুমোদিত হলেও শহরে ইজিবাইক চলাচল করে কমপক্ষে ২০ হাজার। বিআরটিএ’র সূত্র বলছে, শহরে অনুমোদিত মাহেন্দ্রার সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। এসব মিলে ১৫ লাখ মানুষের বসবাস খুলনা শহরের ৬৪০ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার সড়কে অপরিকল্পিত ও মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করছে।
যানজটে আটকে পড়া কয়েকজনের সাথে কথা বললে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন তারা। তাদের অভিযোগ, খুলনা মহানগরীর যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসী যানজটের দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হলেও স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। যানজটের কারণে কর্মস্থলমুখী অনেকেই এখন গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও ব্যস্ততম সড়ক এড়িয়ে চলছেন। তাতেও সুফল মিলছে না; এখন অলিগলিতেও সর্বদাই জট বাঁধছে যানবাহনের। এতো দূর্ভোগের মধ্যেই খানজাহান আলী রোডসহ শহরের কয়েকটি সড়ক খোঁড়াখুড়ির জন্য বন্ধ করে রেখেছে ওয়াসা।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ নাজমুল আহসান বলেন, শহরের যানজট নিরসনে কেসিসি, কেএমপি, জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন সকলের সমন্বয়ে কাজ করা জরুরি। নগরবাসীর নির্বিঘেœ চলাচল নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে শহরের যানজট থাকবে না বলে আশা করছি।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি বলেন, করপোরেশনের পক্ষ থেকে যানজট নিরসনে শহরের ব্যস্ততম কয়েকটি মোড় প্রশস্ত করাসহ ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখার কার্যক্রম চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন