এ.টি.এম রফিক ও আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : খুলনা শহরের ব্যস্ততম ছয়টি সড়ক প্রশস্তকরণ, সৌন্দর্যবর্ধণ ও যানজট নিরসনে বিভাগীয় পর্যায়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে খুলনাঞ্চলের দৃশ্যপট আমুল পরিবর্তন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা। খুলনা শহরের রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণ, সৌন্দর্যবর্ধণ এবং যানজট নিরসনের জন্যে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত সভায় খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান, কেসিসি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনিসহ বিভাগীয় পর্যায়ের সকল দপ্তরের প্রধানগন উপস্থিত ছিলেন।
দ্রæততম সময়ে প্রশস্তকরণের পরিকল্পনায় রয়েছে কেডিএ করবে শিপইয়ার্ড সড়কটি চার লেনে ৬০ ফুট ও শেরে বাংলা রোড একশ’ ফুট প্রশস্ত ; খানজাহান আলী রোড ও পুরাতন যশোর রোড প্রশস্তকরণ করবে সড়ক ও জনপদ বিভাগ; পাওয়ার হাউজ মোড় থেকে কদমতলা মোড় পর্যন্ত এবং ক্লে রোড থেকে রেল স্টেশন পর্যন্ত রোডটি প্রশস্তকরণ করবে কেসিসি। এছাড়া রূপসা ব্রিজ থেকে বিআইডবিøউটিএ ঘাট পর্যন্ত নদী পাড়ের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে গ্যাঙওয়ে তৈরির প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয় সভায়।
বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ সুচনা বক্তব্যে বলেন, পদ্মা সেতু চালু, তেরখাদা ও বটিয়াঘাটায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন, মংলা বন্দর আরো গতিশীল, বিমান বন্দর চালু হলে খুলনা শহরে যানজটের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা এখনি পরিকল্পনা নিতে হবে। রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ফ্লাইওয়ার নির্মাণ করতে হবে। সরকারের সকল প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করলে খুলনা শহর-ই হতে পারে দেশের আর্দশ সিটি।
তার বক্তব্যের খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র (কেডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজি সাবিরুল আলম খুলনার ১৪টি সড়ক প্রশস্তকরণের প্রস্তাবণা প্রজেক্টরে উপস্থাপন করেন। এসময় কেডিএ’র চেয়ারম্যান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আহসানুল হক মিয়া প্রস্তাবনার পক্ষে চুক্তি ব্যাখ্যা করেন।
পরে খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, শহরের রাস্তার দু’পাশে কেডিএ’র অননুমোদিত ভবন ভেঙ্গে দিতে হলেও রাস্তা প্রশস্তকরণ করতে হবে। এজন্য সকলের সদ্বিচ্ছার সাথে কঠোর হতে হবে।
সংসদ সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান বলেন, যে সব রাস্তার দু’পাশে ফাঁকা জায়গা আছে, সে সড়কগুলো আগেই প্রশস্তকরণ করা হোক। এ শহর আমার, এ শহরে আমাদেরই সন্তানরা বসবাস করবে। এটি মাথায় রেখেই নগরবাসীকে ত্যাগের মন-মানসিকতা থাকতে হবে।
রেলওয়ের ভু-সম্পত্তির পাকশী বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রিয়াদ আহমেদ বলেন, খুলনা থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত ৮কিলোমিটার রেলপথের দু’পাশে দখল-দুষণের কবলে দীর্ঘদিন। এটা উদ্ধারে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
কেসিসি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি বলেন, কেসিসিতে ম্যাজিস্ট্রেট সংকট থাকায় দখলের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে সমস্যা হচ্ছে। সে জন্য দু’জন কর্মকর্তাকে বিচারিক ক্ষমতা দেবার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। শহরে বিভিন্ন ইজিবাইক সমিতির নামে অর্থের বিনিময়ে টোকেন দিচ্ছে। তারা এলাকাও ভাগ করে নিচ্ছে। পূর্বে (গত ১১ মে) নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ ধরণের প্রোপাকান্ডা চলছে। আজকের সভায় কার কি করতে হবে, সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়া হোক। রাস্তা প্রশস্তকরণ, সৌন্দর্যবর্ধণ ও যানজট নিসরণে একটি কমিটি করা হোক। সড়ক ও জনপদের রাস্তার পাশে বর্ধিত অংশ কেসিসিকে দিলে সৌন্দর্যবর্ধণের ব্যবস্থা করা হবে। গল্লামারী ব্রিজের নিচ দিয়ে একসময় সুন্দরবনের বড় নৌকা শহরে মালামাল নিয়ে আসতো। নতুন নির্মিত ব্রিজের নিচে দিয়ে কিছুই যাতয়াত করতে পারছে না। এটা কেমন ভাবে নির্মাণ করা হলো? রূপসা ব্রিজ থেকে আটরা পর্যন্ত সিটি বাইপাসটির দায়িত্ব কেসিসি নিতে চায়। শহরের সড়কগুলোতে ঠিকমতো রোড সাইন নেই। আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়াসহ প্রতিমাসে এ ধরণের একটি সভা করার প্রস্তাব দেন সিটি মেয়র।
কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কান্তি বালা বলেন, শহরের মধ্যে যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে রাখছে চালকরা। যানজট সৃষ্টির এটি প্রধান কারণ হতে পারে। কেসিসি থেকে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় পর্যন্ত যেতে আজ তার (নিজস্ব গাড়ীযোগে) ২৫মিনিট সময় লেগেছে বলে জানান তিনি।
বিআইডবিøউটিএ’র উপ-পরিচালক মো. আশরাফ হোসেন বলেন, শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য্য। রূপসা ব্রিজ থেকে বিআইডবিøউটিএ ঘাট পর্যন্ত নদী পাড়ের অবৈধ দখল করে অংসখ্য টঙ ঘর গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নগরবাসীর জন্য নদীর তীরে গ্যাঙওয়ে বা ফুটপাত নির্মাণ করা যেতে পারে।
মংলা কাস্টমস্ কমিশনার ড. আল আমিন প্রামানিক বলেন, খুলনার সরকারি অফিসগুলোতে পোস্টার-প্যানা সাইনে ভরে গেছে। এতে সৌন্দর্য ঢাকা পড়ছে। এমন সব ছবি তাতে ব্যবহার করা হয়েছে যা অপসারণ করতে পারছি না। একটা বিব্রতকর অবস্থা।
বিআরটিএ খুলনার উপ-পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান বলেন, “খুলনা শহরের প্রধান ৬টি স্থানে যানজট বাঁধে মনুষ্য সৃষ্টি কারণে। সেগুলো হল-ফেরীঘাট মোড়ে (ফুটপাতের উপর রঙের কৌটা রাখা থাকে), শিববাড়ী মোড়ের খান বিøডিংয়ের কারণে, বিএল কলেজ মোড়ে, দৌলতপুর বেবী ট্যাক্সি মোড় ও দৌলতপুর মিনাক্ষীর মোড়। কার্যকর পদক্ষেপ নিলেই শহরের যানজট দুর করা সম্ভব।” এজন্যে খুলনা জেলা প্রশাসক, কেএমপি কমিশনারকে সাথে নিয়ে শহরের যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নিতে বিআরটিএ কে নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার।
কেএমপি কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি বলেন, কেসিসি কেন সিসি ক্যামেরাগুলো কেএমপিকে দিচ্ছে না, তা আমার বোধ্যগম্য নয়। ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে। মাচা বানিয়ে বসেছে রাস্তার উপরে। এগুলো সম্মিলিতভাবে উচ্ছেদ করতে হবে। ওয়াসার রাস্তা খোঁড়াখুড়ির জন্য নগরবাসী কষ্টে আছে। আর রাস্তাগুলো সাথে সাথে ঠিক করে দিয়ে না গেলে পরে আর ঠিক করবে কিনা সে সংশয় রয়েছে।
খুলনা ওয়াসা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ পিইঞ্জ বলেন, এখনি রাস্তায় পিচ দিলে সেটা স্থায়ী হবে না। কাজ শেষে অবশ্যই রাস্তা ঠিক করে দিবো। আগামী জুনের মধ্যে বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই রাস্তা ঠিক করে দেয়া হবে। এছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন শিপইয়ার্ড, নৌ-বাহিনী, র্যাব-৬, সড়ক ও জনপদ, গণপূর্ত বিভাগ, রেলওয়ে, মংলা বন্দর কাস্টমস্, বিআইডবিøউটিএসহ বিভাগীয় পর্যায়ের সকল দপ্তরের প্রধানগন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন