ইনকিলাব ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত জন লুইস। নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসি নিউজ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডেমোক্র্যাট নেতা জন লুইস বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত এই ব্যক্তিকে আমি যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ প্রেসিডেন্ট বলে মনে করি না। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার সহযোগিতার কারণেই তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। আর হিলারির পরাজয় হয়েছে। জন লুইস বলেন, যাকে ভুল বলে মনে করেন, এমন কারও সঙ্গে আপনি এক ঘরে থাকতে পারেন না। তিনি এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে উল্লেখ করে, ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকারও ঘোষণা দেন। লুইস ছিলেন মার্কিন অধিকার আন্দোলনের আইকন মার্টিন লুথার কিং-এর অন্যতম সহযোগী। ১৯৬৫ সালে অ্যালাবামার সেলমায় যে সমাবেশে কিং পুলিশি হামলার শিকার হন, সেখানে বক্তব্য রাখা একমাত্র জীবিত ব্যক্তি তিনি। লুইসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় টুইটারে ট্রাম্প লিখেছেন, কংগ্রেস সদস্য জন লুইসের উচিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অভিযোগ না করে তার নিজ নির্বাচনি এলাকার দিকে নজর দেওয়া। এই বিতর্কিত প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে ট্রাম্পকে। এই তালিকায় ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান নেতাও রয়েছেন। সাবেক রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি চেয়ারম্যান মাইকেল স্টিলি মার্কিন সংবাদমাধ্যম এমএসএনবিসি-কে বলেন, প্রথমত, এটা টুইট করবেন না। দ্বিতীয়ত, সেখানে যাবেনও না। তিনি ট্রাম্পের এই আক্রমণকে অপ্রয়োজনীয় এবং দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন। নবনির্বাচিত সিনেটর কামালা হ্যারিস বলেন, জন লুইস মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আইকন, যিনি ন্যায়বিচার ও সাম্যের পক্ষে নির্ভিক। তার সঙ্গে এমনটা হওয়া ঠিক হয়নি। এদিকে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে ওয়াশিংটন। মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মীরা ভোটাধিকার ও ন্যায়বিচার রক্ষার দাবি জানিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন। প্রসঙ্গত, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের সময়ে সপ্তাহব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শনিবার ওয়াশিংটনে ওই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। খবরে বলা হয়, তীব্র বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওয়াশিংটনের মার্টিন লুথার কিং মেমোরিয়ালে কয়েক হাজার জনতা সমবেত হন। বক্তারা সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্বাস্থ্যনীতি ওবামা কেয়ার বাতিল হওয়া রোধে লড়াই করার আহ্বান জানান। সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তা ও অধিকারকর্মী আল শার্পটন মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটদের শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা এই তীব্র বৃষ্টির মধ্যেও এখানে সমবেত হয়েছি দেশের মানুষকে বোঝাতে যে, আমরা এতদিনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যা অর্জন করেছি, তা একটি নির্বাচন জয়ের চেয়ে অনেক বেশি। আর তা আমরা হারাতে চাই না। প্রায় ৩০টি ট্রাম্প-বিরোধী গ্রুপ ওই সমাবেশের আয়োজন করে। তাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বহু বিক্ষোভকারী ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে ওয়াশিংটন পুলিশ ও সিক্রেট সার্ভিস অতিরিক্ত প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তা এবং পাঁচ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মজুদ রেখেছে। অপরদিকে, ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পরদিন সপ্তাহব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচির সবচেয়ে বড় সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে উইম্যানস মার্চ। সূত্র: বিবিসি, ইউএসএ টুডে, সিএনএন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন