বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী ইসির সন্ধানে

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবু নোমান : বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে কোনো সরকারের শেষের সময়টি খুবই চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ না পেলে শেষতক রাজনীতি কোন দিকে গড়াবে, বলা কঠিন। যদিও বর্তমানের রাজনৈতিক পরিবেশ স্বস্তিদায়ক ও শান্তিপূর্ণ হলেও এই পরিবেশ আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বজায় থাকবে কিনা, সেটি নির্ভর করছে ক্ষমতাসীনদের সদিচ্ছা ও প্রেসিডেন্টের ইসি গঠনের দুরদর্শী সিদ্ধান্তের ওপর। সমঝোতা হোক বা না হোক, প্রেসিডেন্টকে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন ইসি গঠন করতে হবে। প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে এই কমিশন গঠিত হবে। ইসি যত শক্তিশালী ও যোগ্যই হোক না কেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, দল ও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সক্রিয় সহযোগিতা না পেলে তার পক্ষে কোনো ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। যার বাস্তব উদাহরণ অতীতের সংসদ, উপজেলা, ইউপি থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ নির্বাচনগুলো।
একটি দলনিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের যে সুযোগ প্রেসিডেন্টের সামনে হাজির হয়েছে প্রেসিডেন্ট তার সদ্ব্যবহার করলে তা দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা রাজনৈতিক সংকট নিরসনের সম্ভাবনার পথ খুলে দেবে। ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবে যৌক্তিক কিছু দেখলে এটি করার সুযোগ তার রয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন প্রেসিডেন্ট যেভাবে গঠন করবেন সেভাবেই হবে। বিএনপিসহ বিরোধী দল এ বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে প্রেসিডেন্টের দিকে তাকিয়ে আছে। সাধারণ মানুষ মনে করে, বিষয়টি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাধীন বিষয়, তিনি চাইলেই গ্রহণযোগ্য একটি ইসি গঠন করে দিতে পারবেন। অন্যদিকে এ কথা ঠিক, তাকে সংবিধান অনুসারে চলতে হয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিনি যে আলোচনা করছেন, তা দেখতে যত ভালোই লাগুক, এতে কাজের কাজ কতটুকু হবে, দেখার বিষয়।
এ কথা ঠিক যে, নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হোক, নির্বাচনের সময় দলীয় সরকার থাকলে কমিশন অসহায় হয়ে থাকবে। অভিজ্ঞতা বলে, কোনো নির্বাচন কমিশনই দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেনি। আর লোক দেখানো সার্চ কমিটির মাধ্যমে অনুগত নির্বাচন কমিশন গঠন করলে জনগণ তা মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যরা যে প্রস্তাব দিয়েছে সব বিবেচনা করে প্রেসিডেন্ট কমিশন গঠন করলে তা হবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ। এ ছাড়াও প্রধান পদক্ষেপ হলো, কী ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, তা ঠিক করা।
আগামী নির্বাচনে সকল দল অংশ নেবে, এটাই ভাবতে চায় দেশবাসী। বাকিটুকু ভবিষ্যৎ জানে! বাংলাদেশের রাজনীতি কখনই লেখা ও আন্দাজ, অনুমানের পথে চলে না। বলপ্রয়োগে ভালো কিছু হয় না। ইতিহাস বারবার এ সত্যটাই প্রমাণ করেছে। যারাই বলপ্রয়োগের পথ বেছে নিয়েছে তারা হেরেছে। দেশের মানুষ তাদের ভালোভাবে নেয়নি। আমাদের সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টকে আরো ক্ষমতা দিলে কি এমন কোনো ক্ষতি হবে রাষ্ট্রের? কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই বরং অন্তত একটি লাভ হবে, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ে কেউ হাস্যরস করতে পারবে না।
পৃথিবীর সমস্ত গুণী মানুষের ডানে-বামে কিছু তেলবাজ থাকে, যাদের অপকর্মের দায়ভার ওই গুণীকেই বহন করতে হয়। তেমনি আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ক্ষমতা ধরে রাখতে অনেকেই তেল মেখে কথা বলে। তেলবাজদের বিতর্কিত ইচ্ছা ভালো ফল আনবে না কখনই। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের উদ্দেশে সম্প্রতি বলেছেন, তার বয়স হয়েছে। ঘন ঘন বিদেশে যেতে হয়। কোনো ছুটির দিন নেই। প্রচুর ফাইল সই করতে হয়। দলও চালাতে হয়। এখন নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব নেওয়ার সময় হয়েছে। এ সময় দলের অন্য নেতারা না, না বলে আওয়াজ তোলেন। একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলে ওঠেন, নেত্রী, আপনাকে আমরা ছাড়ব না। আপনি ইঞ্জিন আর আমরা বগি। বগি কমতে পারে, বাড়তে পারে। আপনি হচ্ছেন আমাদের মূল শক্তি। ইঞ্জিন ছাড়া বগি যতই লাগান, বগি চলবে না।
৭০ দশকের অন্যতম জনপ্রিয় দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এর প্রকৃত শুভাকাক্সক্ষী ও শুভানুধ্যায়ীরা শঙ্কায়। আওয়ামী লীগ নেতারা সব ছাড়তে রাজি, ছাড়তে রাজি না শুধু ক্ষমতা। নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ, জনগণ, গণতন্ত্র সবকিছুকে বিসর্জন দিয়েছে দলটি। বিনিময়ে জবরদখল ধরে রেখেছে ক্ষমতা। কিন্তু এ অবস্থা তারা কত দিন ধরে রাখতে পারবে? ‘সবার ওপরে ক্ষমতা সত্য’, এই নীতি থেকে দেশের জনগণ তাদের সরে আসতে বাধ্য করবে।
জন্ম হোক যথাতথা, কর্ম হোক ভালো। এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ দেশকে ভালোবাসে তাদের চেয়ে বেশি, যারা অতীতে ক্ষমতায় ছিল। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি এই সুন্দর শান্তিময় মানুষের দেশটাকে ধ্বংস হতে দেবে না। দয়া করে শান্তি ফিরিয়ে আনুন। এদেশের মানুষ প্রতিদিন গেয়ে থাকে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রী এ সঙ্গীতটুকু মনে রাখবেন দয়া করে। দেশবাসী যেমন আজিজ মার্কা (ভুয়া ভোটার তালিকা) কমিশন চায় না, তেমনি রকিব কমিশন ১০ কোটি মানুষের ভোটাধিকার বঞ্চিত করার দায় এড়াতে ও ১৫৩টি আসনে বিনা ভোটের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হবে, সেটিও আশা করে না। সংশ্লিষ্ট সকলকে এই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
abunoman72@ymail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন