মোঃ জোবায়ের আলী জুয়েল : আজকাল আমরা বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে বিএ ও এমএ পাস করতে দেখি। কিন্তু আজ থেকে দেড়শ বছর আগে অবিভক্ত বাংলায় মুসলমানদের বিএ ও এমএ পাস করা ছিল অত্যন্ত দুরূহ ও কঠিন ব্যাপার। তখন হয়তো কালেভদ্রে দু-একজন মুসলমান বিএ পাস করতো, তাঁদের কৃতিত্ব নিয়ে চারদিকে হইচই পড়ে যেত। আজ থেকে প্রায় ১৬০ বছর আগে স্থাপিত হয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (১৮৫৭ খ্রি.)। সেকালে পাঞ্জাব, যুক্ত প্রদেশ ও বিহারে কোন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। ওইসব প্রদেশের কলেজগুলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। বাংলার প্রাচীন কলেজগুলোর মধ্যে প্রেসিডেন্সী কলেজ, হুগলী মহসিন কলেজ, ঢাকা কলেজ, বহরমপুর কলেজ, কৃষ্ণনগর কলেজ, এলহাবাদের মুইর সেন্ট্রাল কলেজ, খ্রিস্টান মিশনারীদের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, ফ্রি চার্চ ইনস্টিটিউট, ক্যাথার্ডাল কলেজ, সিটি কলেজ ও ক্যানিং কলেজ সেকালের খ্যাতনামা কলেজগুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এন্ট্রান্স পরীক্ষা গৃহীত হয়। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ৫-১০ এপ্রিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বিএ পরীক্ষার সূত্রপাত। এই ঐতিহাসিক বিএ পরীক্ষায় সংস্কৃতি, বাংলা ও হিন্দির পরীক্ষক মনোনীত হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১ খ্রি.)। অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষকরা ছিলেন যথাক্রমে- ডব্লিউ গ্রাপ্রেল, ডব্লিউ নাসাউলীস, এডওয়ার্ড বাইলস্ কাউএল, এইচ স্কট স্মিথ এবং আলেকজান্ডার ডাফ। ১৩ জন বিএ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১০ জন ছয়টি বিষয়ে তাদের পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। কিন্তু কার্যত তারা সবাই অকৃতকার্য হন। এই ১৩ জন ছাত্রের মধ্যে কেউই বিএ পাস করতে পারেননি। এই অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের তালিকায় ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪ খ্রি.) ও যদুনাথ বসু (১৮৩৬-১৯১২ খ্রি.)। পাঁচটি বিষয়ে এই দু’জন কৃতিত্বের পরিচয় দেখালেও ষষ্ঠতম বিষয়ে তারা উভয়েই পাসের নম্বরের চেয়ে গড়ে সাত নম্বরের মতো কম পান। এই ষষ্ঠতম বিষয়টি ছিল “মানসিক ও নীতি বিজ্ঞান” এবং ওই বিষয়ের পরীক্ষক নির্বাচিত হন পূর্বোক্ত আলেকজান্ডার ডাফ। পরীক্ষক পর্ষদের সুপারিশে শেষাবধি বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে এই উপমহাদেশে অবিভক্ত বাংলার প্রথম বিএ ডিগ্রি লাভের গৌরবোজ্জ্বল বিরল সম্মানে ভূষিত হন এবং সেই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক পর্ষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, অনুরূপ “গ্রেস মার্ক” ভবিষ্যতে আর কখনোই দেয়া হবে না। অবিভক্ত বাংলার প্রথম গ্র্যাজুয়েট বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু যৌথভাবে এক সঙ্গে বিএ পাস করেন ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে। বাংলার ইতিহাসে তাঁদের এই সাফল্য স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হয়ে আছে। বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু কর্মজীবনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু কেউই ভারতীয় আইসিএস (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) ছিলেন না।
অবিভক্ত ভারতে সর্বপ্রথম আইসিএস (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) অফিসার ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪২-১৯২৩ খ্রি.)। পূর্ববঙ্গে প্রথম আইসিএস অফিসার ছিলেন কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্ত (১৮৫১-১৯২৬ খ্রি.)। দুজনই বাঙালি এবং ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী। তাঁদের পিতা যথাক্রমে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ভক্ত কালী নারায়ণ গুপ্ত ছিলেন ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্ম সমাজের পুরোধা ব্যক্তি। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে আর স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্ত ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে আইসিএস পীরক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই ছিলেন সতেন্দ্র নাথ ঠাকুর। কর্মজীবনে সতেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন আহমেদাবাদের জেলা জজ। স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ্র গুপ্ত পূর্ববঙ্গের সর্বত্র কেজি গুপ্ত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি এতই মেধাবী ছিলেন যে, তার পরে কোনো ছাত্র মেধাসম্পন্ন হলে বলা হতো তার “কেজি গুপ্তের মাথা”। এ অসম্ভব প্রতিভাবান ব্যক্তিটির স্কুলজীবন শুরু হয়েছিল ঢাকা পোগজ স্কুলে। পরে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে এফএ (ফাস্ট আর্টস)। এরপর কিছুদিন একই কলেজে বিএ ক্লাসে পড়াশোনা করে সিভিল সার্ভিস কোর্স করার জন্য ইংল্যান্ডে যান এবং ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাস কওে দেশে ফেরেন। ইংল্যান্ডে থাকা কালীন তিনি “লিঙ্কন ইন” থেকে “বার এট-ল” পরীক্ষার উত্তীর্ণ হন। স্যার কেজি গুপ্ত ৩৫ বছর জেলা প্রশাসক, আবগারী কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার, বোর্ড অব রেভেনিউর সদস্যসহ সরকারের আরো অনেক উচ্চ পদে আসীন ছিলেন। তিনি মারা যান ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মার্চ। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের কৃতিমান মানুষ। সে সময় ৩ জন আরো একত্রে (১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে) আইসিএস (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারা হলেন রমেশ চন্দ্র দত্ত (১৮৪৮-১৯০৯ খ্রি.), সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী (১৮৪৮-১৯২৬ খ্রি.), বিহারী ললাল গুপ্ত (১৮৪৬-১৯২২ খ্রি.)।
পূর্ববঙ্গের প্রথম মুসলমান আইসিএস ছিলেন গজনফর আলী খান (১৮৭২-১৯৫৯ খ্রি.)। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন সিলেটের বিরাইমপুর গ্রামে। তার পিতার নাম ছিল মোহাম্মদ আবিদ খান। গজনফর আলী খান ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মাদ্রাসা থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাস করেন। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে এফএ এবং ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে বিলাতের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএ পাস করেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তখন বিলেত থেকে আইসিএস পরীক্ষা দিতে হতো সবাইকে। গজনফর আলী খানের চাকুরীস্থল ছিল ভারতের মধ্যপ্রদেশে। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি নাগপুর ডিভিশনের কমিশনার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ গজনফর আলী খান ইন্তেকাল করেন।
ভারতবর্ষে মুসলমানদের মধ্যে প্রথম বিএ পাস করেন জনাব আহমদ (১৮৪০-১৯১২ খ্রি.) পরবর্তীতে তিনি দেলওয়ার হোসেন আহমদ নাম গ্রহণ করেন। কলকাতা মাদ্রাসার এ্যাংলো পাসির্য়ান ডিপার্টমেন্ট থেকে তিনি এন্ট্রান্স ও ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম বিএ পাস করেন। প্রেসিডেন্সী কলেজ ছিল সেকালে কলকাতার সবচেয়ে নাম করা সরকারি কলেজ। দেলওয়ার হোসেন আহমদ এর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার দাদপুর থানা সংলগ্ন আরসা পরগনা অন্তর্ভুক্ত “বাবনাল” গ্রামে। তিনি কর্মজীবনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি গ্রহণ করে রেজিস্ট্রেশন বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেলের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি খান বাহাদুর খেতাবে ভূষিত হন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি সেকালে ভারতীয় (বাংলাদেশের) আইন সভারও সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কলকাতা মহানগরীর ১০২নং রিপন স্ট্রিটে তিনি সপরিবারে বসবাস করতেন। তার পাঁচ পুত্র ছিল এবং তার বংশের অনেকে আজ বাংলাদেশে বসবাস করছেন। খান বাহাদুর দেলওয়ার হোসেন আহমদ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
সমগ্র ভারত বর্ষে দ্বিতীয় ও বাংলাদেশের প্রথম মুসলমান গ্র্যাজুয়েট ছিলেন মোহাম্মদ দায়েম। তিনি সিলেট জেলার জালালপুর পরগনার বাসিন্দা ছিলেন। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বিএ ও ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে বিএল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি সিলেট শহরে ওকালতি করতেন। উকিল হিসেবে তিনি বিশেষ সুনাম অর্জন করতে পারেননি। দায়েম সাহেবের পরে তৃতীয় মুসলিম গ্র্যাজুয়েট ছিলেন স্বনামধন্য বিচারপতি আমির আলী। তিনি ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে হুগলী কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এছাড়াও তিনি হুগলী কলেজ থেকে মুসলমানদের মধ্যে সর্ব প্রথম ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে অনার্সসহ ইতিহাসে এমএ পাস করেন। এছাড়াও আমীর আলী হুগলী কলেজ থেকে ওবায়েদুর রহমান বহরমপুর কলেজ থেকে একত্রে এই দু’জন ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম মুসলমানদের মধ্যে বিএল (ওকালতি) পাস করেন।
আমীর আলী জীবনের নানা ক্ষেত্রে কৃতিত্ব রেখে গেছেন। তিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম মুসলিম বিচারপতি ছিলেন। সাহিত্যের ক্ষেত্রেও আমীর আলীর অবদান অপরিসীম। তার লেখা “দি স্প্রিরিট অব ইসলাম” আজও ইংরেজি ভাষায় মহানবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনী রূপে পরিচিত। তাঁর লিখিত “হিস্টোরি অব দ্য সেরাসেন্স আরব জাতির ইতিহাস সম্বন্ধে একটি বিখ্যাত প্রামাণ্য গ্রন্থ। এছাড়াও আমীর আলী ছিলেন সর্বভারতীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম “প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য” (প্রিভি কাউন্সিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিচারালয়)। তারই নামানুসারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের নাম রাখা হয়েছে “আমীর আলী হল”।
আমীর আলীর সঙ্গে একই বছরে ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে বিএ পাস করেন কুমিল্লা জেলার সিরাজুল ইসলাম। তিনি কুমিল্লা জেলার ও ঢাকা কলেজের (১৮৪১ খ্রি. প্রতিষ্ঠিত) প্রথম মুসলমান গ্র্যাজুয়েট। তিনি প্রথম জীবনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন ও পরে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করতেন। ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক তিনি “নওয়াব” খেতাবে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি যৌথভাবে বাংলার তৃতীয় মুসলমান গ্র্যাজুয়েট ছিলেন। ময়মনসিংহ জেলার প্রথম মুসলমান গ্র্যাজুয়েট আহম্মেদ হামিদ উদ্দিন। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে বিএ পাস করেন। তিনি ময়মনসিংহ শহরে ওকালতি করতেন। বরিশাল জেলার প্রথম মুসলমান গ্র্যাজুয়েট ছিলেন শেরে বাংলার পিতা মোহাম্মদ ওয়াজেদ (১৮৪৩-১৯০৯ খ্রি.)। তিনি ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে বিএ পাস করেন। তিনি বরিশালের সরকারি উকিল ছিলেন। রংপুর জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট ছিলেন তসলিম উদ্দিন আহমেদ (১৮৫২-১৯২৭ খ্রি.)। পরে খান বাহাদুর উপাধি পান। উকিল হিসেবে তার যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। সাহিত্য ক্ষেত্রে তার উল্লেখযোগ্য অবদান পূর্ণাঙ্গ “কোরআন শরীফের” বাংলা অনুবাদ। তিনি ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে বিএ এবং ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিএল পাস করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। তিনি মারা যান ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে রংপুরের মুন্সিপাড়ায়। ফরিদপুর জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট ফজলুল করিম (১৮৫৫-১৮৯৯ খ্রি.)। তিনি ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে হুগলী কলেজ থেকে (১৮৩৬ খ্রি. প্রতিষ্ঠিত) বিএ পাস করে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হন। যশোর জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট ছিলেন আব্দুস সালাম (পরে খান বাহাদুর)। তিনি ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট জের্ভিয়াস কলেজ থেকে বিএ পাস করে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হন। আব্দুস সালামের “রিয়াজুল সালাতীন” নামক ফারসি ভাষায় বাংলাদেশের ইতিহাসের সঠিক অনুবাদ ঐতিহাসিকদের কাছে সমাদৃত। ঐ বছরই ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার প্রথম মুসলমান গ্র্যাজুয়েট রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ এলাহাবাদের মুইর সেন্ট্রাল কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। তখনও এলাহাবাদে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেনি। রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ চট্টগ্রামে ওকালতি করতেন। তাঁর নামে চট্টগ্রাম শহরে একটি বাজার আছে ‘রিয়াজউদ্দিন বাজার’। দিনাজপুর জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট একিন উদ্দিন আহমেদ (পরে খান বাহাদুর উপাধি পান) (১৮৬২-১৯৩৩ খ্রি.)। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বিএ এবং একই কলেজ থেকে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে বিএল পাস করেন। তিনি দিনাজপুরে ওকালতি করতেন ও সেখানকার বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন রংপুরের প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট খান বাহাদুর তসলিম উদ্দিনের আপন ভাগনে। বগুড়া জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট রিয়াজ উদ্দিন কাজী। তিনি ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট জের্ভিয়াস কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। তিনি ক্ষেতলাল থানার কাজীপাড়া গ্রামের এক বনেদী বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বগুড়া জেলা বোর্ডের প্রথম মুসলমান চেয়ারম্যান ছিলেন।
বর্তমান যুগে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বহু বিশ্ববিদ্যালয় আছে। মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান বাংলাদেশে মোট ১৩৪টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে, (প্রথম আলো, ১৮ অক্টোবর ২০১৬ খ্রি.)। এছাড়াও কয়েক হাজার কলেজ রয়েছে। আজ থেকে একশ বছর আগে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশে একটিও বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। সেদিন ছাত্রদের উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য অবিভক্ত ভারতের কয়েকটি হাতেগোনা কলেজে যেয়ে লেখাপড়া করতে হতো। সে যুগে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে তারা দেশের সামনে উচ্চশিক্ষা লাভের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
লেখক: সাহিত্যিক গবেষক ও ইতিহাসবিদ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন