শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

ক্যান্সার প্রতিরোধে টমেটো

| প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী : শুধু পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি হিসেবেই নয়, টমেটো অনন্য ভেষজ গুণেরও আধার। টমেটো শুধু ফল আর সবজিই নয়, ওষুধও বটে। টমেটো শরীরের প্রতিরোধক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে, কিডনিকে সক্রিয় রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি একটি ক্ষারীয় তরকারি বলে শরীরের ক্ষারের পরিমাণ বাড়ায়। আর এ ক্ষার শরীরে অম- উৎপাদনকারী উপাদান যেমন- ফসফেট, ইউরিয়া এবং এমোনিয়াকে প্রশমিত করে বলে শরীরে অম- ক্ষারের সমানুপাতিক হার বজায় রেখে শরীর সুস্থ রাখে। এতে শ্বেতসার থাকে বলে যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য টমেটো উপকারী। প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ থাকার কারণে রাতকানা ও ভিটামিস ‘সি’ থাকার দরুন ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। চোখের অপটিক নার্ভের সুস্থতার জন্যও টমেটো উপকারী। এটি মূত্রথলির অম-তাকে নিরপেক্ষ রাখতে সাহায্য করে, মূত্রাশয়ের সংক্রমণ ও পাথর তৈরিতে বাধার সৃষ্টি করে। এটি বদ হজমসহ পাকস্থলির যন্ত্রণা বা আলসারের লক্ষণ দূরীভূত করে ও যকৃৎ বা লিভারকে সুস্থ রাখে। তাই পেপটিক আলসার ও জন্ডিসের রোগীর জন্য এটি উপকারে আসে। এ ছাড়া টমেটো ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং এর রস মুখম-লের ত্বককে সজীব রাখে।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ক্যান্সার-এ প্রকাশ, উত্তর ইউরোপের গবেষকরা সম্প্রতি লক্ষ্য করেছেন যে, যারা প্রতি সপ্তাহে ৭টিরও বেশি কাঁচা টমেটো খান, তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৬০% কম। টমেটোপ্রেমী মানুষের মধ্যে কোলন, রেস্টাল এবং স্টমাক ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা খুবই কম। সম্প্রতি বৃদ্ধ বয়সের আমেরিকানদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়েও একই তথ্য পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানী কোনডিজের মতে, অল্প যে কয়েকটি লাইকোপেন নামক এন্টি অক্সিজেন্ট থাকে, তার অন্যতম। এ ছাড়াও এতে থাকে ভিটামিন সি, পিকোম্যারিক ও ক্লোরোনিক এসিড, এগুলো এন্টি অক্সিজেন্ট হিসেবে কাজ করে। আমাদের শরীরে ক্যান্সার রুখতে এগুলোই কার্যকরী মহাওষুধ। হার্ট অ্যাটাকেও এটি মোক্ষম দাওয়াই বলে বিবেচিত। শরীরের রক্তবাহী নালিগুলোতে স্নেহ পদার্থ জমতে তো দেয়ই না উপরন্তু রক্তে অতিরিক্ত স্নেহ পদার্থের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী রোগ ক্যান্সারে মৃত্যুহার এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে ১৯৮১ সালে দুজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন। অপরদিকে আমেরিকার ক্যান্সার ইনস্টিটিউটও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মতামত দেয়। বিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, নিরামিষভোজীদের ক্যান্সার হওয়ার হার আমিষ ভোজীর চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম। যেসব লোক শাক-সবজি নিয়মিত আহার করেন তারা তুলনামূলকভাবে ক্যান্সার ও হার্ট অ্যাটাকে কম আক্রান্ত হন। কারণ, শাক-সবজিতে এমন কিছু বিশেষ উপাদান রয়েছে, যা শরীরের কোষ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধা দিতে সহায়তা করে। এ ব্যাপারে সারা বিশ্বের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞগণ একমত পোষণ করেন। সম্প্রতি বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস জšে§ছে যে, ক্যারোটিন সমৃদ্ধ ফল এবং সবজিতে এমন কোনো উপাদান আছে যা দীর্ঘদিন ধরে খেলে হƒদরোগের ঝুঁকি কমবে। এ উপাদানটি হচ্ছে লাইকোপেন যার কারণে টমেটো লাল হয়। আগেই বলা হয়েছে যে, লাইকোপেন বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে প্রোস্টেট কোলন এবং পায়ুপথের ক্যান্সার প্রতিরোধে এর ভেষজগুণ প্রমাণিত। উল্লেখ্য যে, আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডা. লেনোরি কোহলামিয়ার তার ১০ জন ইউরোপীয় গবেষকসহ তাদের গবেষণালব্ধ তথ্যে জানিয়েছেন যে, লাইকোপেন হলো এমন এক খাদ্য উপাদান যা হƒদরোগ এবং ক্যান্সার উভয় রোগই প্রতিরোধ করতে পারে। লাইকোপেন সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আছে টমেটোতে। কিন্তু শরীরও লাইকোপেন সহজে গ্রহণ করতে পারে না। তবে এ লাইকোপেন শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে কেবল রান্না করা হলে। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত টমেটো যেমন পেস্ট, কেচাপ, সস ইত্যাদি থেকে দেহকোষ সহজে লাইকোপেন গ্রহণ করতে পারে। টমেটো জুস থেকে সহজে গ্রহণীয় লাইকোপেন পাওয়া যায় যদি গরম করে নেয়া হয়। বোতলে ভরা বা টিনজাত টমেটো জুস যেহেতু গরম করে প্রক্রিয়াজাত করা হয় সে জন্য এর থেকেও লাইকোপেন পাওয়া যায়।
ডা. কোহলমিয়ার বলেছেন, কাঁচা টমেটো থেকে যে পরিমাণ লাইকোপেন পাওয়া যায় তার পাঁচগুণ বেশি লাইকোপেন পাওয়া যায় সমপরিমাণে টমেটো রস থেকে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, যখন কোনো খাবার প্রক্রিয়াজাত করা হয় তখন কিছু স্নেহ পদার্থ তৈরি হয়, যা মানব দেহের চর্বির সাথে সহজে রাসায়নিক বিক্রিয়া করতে পারে এবং দ্রুত আত্তীকরণও হয়। এ পদ্ধতিতেই প্রক্রিয়াজাত টমেটো থেকে লাইকোপেন মানবদেহের মেদের মধ্যে দ্রুত প্রবেশ করতে পারে। ডা. লেনোরির নেতৃত্বে গবেষক দলটি প্রমাণ করেছেন যে, হƒদরোগের ঝুঁকি কমাতে লাইকোপেনই শ্রেষ্ঠ। খাবারের সাথে লাইকোপেন গ্রহণের উপকার সম্বন্ধেই তারা শুধু নিশ্চিত কিন্তু লাইকোপেনের সাথে অন্য কোনো পুষ্টি উপাদান শরীরে প্রবেশ করে কিনা সে বিষয়েও গবেষণা চলছে।
আমাদের দেশে শীতকালে এবং তার পরবর্তী সময়ে সকল হাটে-বাজারে টমেটো পাওয়া যায়। টমেটো বাজারে প্রথম আসার সময় দাম একটু বেশি থাকলেও পরে অনেক সস্তায় সেগুলো বাজারে বিক্রি হয়। যে কেউ ইচ্ছা করলে নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় বা ছাদের ওপর টবের মাধ্যমেও টমেটোর চাষ করতে পারেন। মানবদেহে ভয়াবহ রোগের আক্রমণ প্রতিহত করতে টমেটোকে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন, এটা আমার নয় বিশেষজ্ঞের অভিমত।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট। বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার (১ম) স্বর্ণপদক প্রাপ্ত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন