কে এস সিদ্দিকী
(৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিতের পর)
শুনেছি, বিলাতে বসবাসকারী অনেক বাংলাদেশি আল্লামা মোজাহেদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগীর প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে থাকেন। অনেকে বিভিন্ন ব্যাপারে তার দর্শন সাক্ষাৎপ্রার্থীও হন। তার বাসভবন বাংলাদেশিদের রীতিমতো মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এমন কি বাংলাদেশ হতে (সিলেটসহ) যারা বিভিন্ন উপলক্ষে বিলাতে গমন করে থাকেন তাদের অনেকে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি সেখানে বাংলাদেশিদের একজন হিতাকাক্সক্ষী মুরব্বি রূপে গণ্য হয়ে থাকেন। এদেশ থেকে সেখানে যাতায়াত করে থাকেন তাদের মুখে আল্লামা দুবাগীর জনপ্রিয়তা ও নানামুখী যোগ্যতা, প্রতিভা এবং চারিত্রিক গুণাবলীর ভূয়সী প্রশংসা শোনা যায়। এই লেখকের দেখা-সাক্ষাতের সৌভাগ্য না হলেও মাত্র কয়েক দিন আগে প্রথমবারের মতো টেলিফোনালাপের সুযোগ ঘটেছে। উল্লেখ্য, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক, মসজিদে গাউসুল আজমের খতিব এবং বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সিনিয়র সভাপতি মাওলানা কবি রূহুল আমীন খানের মুখে অনেক দিন যাবৎ আল্লামা দুবাগীর কথা শুনে আসছি এবং তিনি যে বিলাতে বাংলাদেশের কত বড় আলেম তা প্রত্যক্ষদর্শীরাই সঠিক বলতে পারবেন। বিগত একদশকে মাওলানা রূহুল আমীন খান একাধিকবার লন্ডন সফর করেছেন এবং আল্লামা দুবাগী সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি গত বছরের শেষ ভাগে বিলাত সফর করেন এবং সেখানে তার দীর্ঘ অবস্থানকালে আল্লামা মোজাহিদ উদ্দিন চৌধুরীর আতিথ্য গ্রহণ করেন বলে জানি। মাওলানা খানের কথায়, দুবাগী সাহেবের মেহমানদারি ছাড়াও তার ইসলামী তৎপরতা, জ্ঞানসাধনা-সুলুকের যে বিবরণ পাওয়া যায় তা অভাবনীয় ও বিস্ময়কর। এ পরিণত বয়সেও তিনি জ্ঞানসাধনা-গবেষণা, লেখালেখি বিরতিহীন-ক্লান্তিহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। তার নিজস্ব কুতুবখানা বা বিশাল লাইব্রেরির যে বর্ণনা মাওলানা খানের মুখে শুনেছি তা রীতিমতো অবাক করার মতো। তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন যে, আল্লামা দুবাগীর নিজস্ব কুতুবখানার স্বতন্ত্র কোনো স্থান নেই, বরং তার সমগ্র বাসভবনের প্রতি কক্ষেই সাজানো গ্রন্থভর্তি আলমারির সারি। বড় বড় এসব আলমারি মূল আরবিসহ প্রসিদ্ধ নানা ভাষার মূল গ্রন্থরাজিতে পরিপূর্ণ। তিনি প্রয়োজনে যে কোনোটা খুলে অধ্যয়ন, গবেষণা ও লেখালেখিতে ব্যস্ত থাকেন।
কোনো ব্যক্তিত্বকে যথার্থ ও সঠিকভাবে মূল্যায়ন ও অনুভূতি ব্যক্ত করতে হলে সেই ব্যক্তিত্বকে নিকট হতে দেখার ও তার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ থাকতে হয়। অথবা তার রচনাবলী থাকলে সেগুলো দেখার ও পাঠ করারও সুযোগ থাকতে হয়। আল্লামা দুবাগী সাহেবের রচনাবলী দেখার এবং কিছু কিছু গভীরভাবে পাঠ করার সৌভাগ্য অবশ্যই আমার হয়েছে। সেই আলোকেই আমার অনুভূতি ব্যক্ত করতে চাই। এখন আমার সামনে রয়েছে আল্লামা দুবাগী রচিত ‘মীলাদে বেনযীর’। ৫৬০ পৃষ্ঠার এ বৃহদাকারের পুস্তকটির প্রথম প্রকাশ জানুয়ারি ২০০৭ সাল, বাংলা বাজার, ঢাকা হতে। প্রকাশ করেছেন মোঃ অলিউর রহমান। ‘উৎসর্গ’ করা হয়েছে : ‘মাতা-পিতাসহ আদম (আ.) হতে উম্মতে মুহাম্মদী (সা.) পর্যন্ত যে সকল মুমিন মুসলমান, নর-নারী ইন্তেকাল করেছেন সকলের ইছালে ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে।’ উল্লেখ্য, আমাদের এ ক্ষুদ্র নিবন্ধে আল্লামা দুবাগী ও তার রচনাবলীর ওপর বিস্তারিত আলোচনা ও মূল্যায়নের অবকাশ না থাকায় আলোচ্য মিলাদে বেনযীর সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে কয়েকটি কথা বলে রাখতে চাই। কেননা পুস্তকটির প্রতিপাদ্যগুলো এতই তথ্যবহুল, গবেষণাধর্মী, বিস্তীর্ণ যে, সে জন্য স্বতন্ত্র আলোচনা প্রয়োজন, যা এখানে সম্ভব নয়। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আল্লামা দুবাগী বহুকাল পূর্বের একটি বহুল বিতর্কিত আলোচিত বিষয় মীলাদ ও কিয়ামের ওপর মীলাদে বেনযীর রচনা করে দারুণ আলোড়নের সৃষ্টি করেছেন। আল্লামা সাহেবের কলমে পুস্তকটির খোলাসা প্রকাশ করা হলে সাধারণ মুসলমানগণও বিশেষ উপকৃত হতে পারবেন বলে মনে করি। তার রচনাবলীর সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও আমাদের সামনে যে সর্বশেষ তালিকা রয়েছে তা এইÑ (১) মানাছুল মুফতী (উর্দু), (২) আল মাসাইলুন্নাদিরাহ, (৩) এক নজরে হজ ও যিয়ারত, (৪) এতিম প্রসঙ্গে, (৫) পুণ্যের দিশারী, (৬) ফাতওয়ায়ে মুজাহিদিয়া, (৭) ফাতেহা ও কবর যিয়ারতের মাসাইল, (৮) সুন্নাত ও নফল নামাজের জরুরি মাসাইল, (৯) দোয়ার মাহাত্ম্য, (১০) মানাছুল মুফতীর বঙ্গানুবাদ, (১১) বিবিধ মাসাইল, (১২) কদম বুছির তথ্য, (১৩) জানাজার নামাজের পর দোয়া করা মুস্তাহাব, (১৪) শবে-কদরের তাৎপর্য, (১৫) ফাদায়েলে শবে-বরাত, (১৬) শিফায়ে রূহ, (১৭) প্রশ্নউত্তর, (১৮) মীলাদে বেনযীর প্রভৃতি।
প্রকাশের পথে আছে টুপি নামের আরেকটি পুস্তক।
পুস্তকাদি ও প্রকাশিত রচনাবলীর বর্ণিত তালিকার অন্তর্ভুক্ত শুধু নামগুলোর পর্যালোচনা করলে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, আল্লামা দুবাগী সাহেব, আকাশ-সংস্কৃতির আধুনিক ছোঁয়ায় কলুষিত যে পশ্চিমা পরিবেশে অবস্থান করছেন, সেই পরিবেশ-পরিস্থিতি তিনি যথার্থভাবে আঁচ করতে পারছেন বলেই সেখানে তার ইসলাম প্রচারের কর্মসূচিকে সে আলোকেই সাজিয়েছেন। সেসব দেশে বসবাসকারী মুসলমানগণ বিশেষত বাংলাদেশি প্রবাসী মুসলমানদের মধ্যে যারা পাশ্চাত্যের আধুনিকতা প্রেমিক হতে চলছেন, তারা ইসলামের পথে এক নতুন সংকট তৈরি করছেন। ইসলামদ্রোহী-মুসলিমবিদ্বেষীরা তাদের সহজেই বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করতে সচেষ্ট এবং অনেকে বিভ্রান্তও হচ্ছেন। ইসলামের দুশমনরা তাদের নতুন ‘নোসখা’ গেলানোর তৎপরতায় লিপ্ত। আল্লামা মোজাহিদ উদ্দিন দুবাগী এহেন প্রতিকূল ও ইসলাম বৈরী পরিবেশ-পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই প্রচার কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়িত করে যাচ্ছেন। তার জবান ও কলম যুগপৎভাবে সক্রিয় এবং আধ্যাত্মিক সাধনা তার বলিষ্ঠ নৈতিকতার নিদর্শন।
সাত সমুদ্র তের নদী পর সেই দেশে আল্লামা দুবাগী রাতের নির্জন সাধনা এবং দিনের কর্মব্যস্ততা ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত রেখেছেন। সেখানকার পরিস্থিতির আলোকেই জবান ও কলমের জিহাদ চালু রেখেছেন। বিক্ষিপ্তভাবে ওয়াজ মাহফিল, ইসালে সওয়াব ও মীলাদ মাহফিল, বিভিন্ন শহরের মসজিদে গমন করে ওয়াজ বক্তৃতা বয়ান, আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনগুলোতে ভাষণ প্রদান ইত্যাদি তার প্রচার মিশনের প্রধান আকর্ষণ। এমনকি আমেরিকাসহ অন্যান্য প্রসিদ্ধ দেশেও তার পদচারণা লক্ষ্য করা যায়। ওয়ায়েজ, খতিব, বক্তা হিসেবেও তিনি খ্যাতির অধিকারী। পাশ্চাত্য জগতে ইসলাম প্রচারে আল্লামা দুবাগীর ভূমিকা অনন্য অসাধারণ যার বিস্তারিত বিবরণ তারই স্বদেশে অজানা-অজ্ঞাত রয়ে গেছে।
আল্লামা মোজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগীর বাংলা ভাষায় রচিত বিখ্যাত পুস্তক মীলাদে বেনযীর। পুস্তকটির নামকরণ হতে তার অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তুর গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। এ পর্যায়ে কিছু বলার পূর্বে আরেফ বিল্লাহ হজরত শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী (রহ.)-এর একটি বিখ্যাত উক্তির অবতারণা করতে চাই। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মোহাদ্দেস, সাহিত্যিক এবং আরেফ বিল্লাহ উপাধিতে ভূষিত। তার জীবনকাল ১৫৫১ হতে ১৬৪২ খ্রি. পর্যন্ত বিস্তৃত। তার রচিত গ্রন্থাবলির সংখ্যা অর্ধশতের কম নয়। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি সুবিখ্যাত গ্রন্থও রয়েছেÑ ‘মা সাবাতা বিসসুন্নাহ’ তার একটি। মীলাদি তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মদিবসের মহিমা-মাহাত্ম্য সম্পর্কে আবদুল হক মোহাদেস দেহলভী (রহ.)-এর অভিমত দেখা যাক। তিনি লিখেছেন : রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মের রাতটি নিশ্চিতভাবে শবেকদর হতে অধিক উত্তম। কেননা জন্মরাত তার আবির্ভাবের রাত এবং শবেকদর তাকে দান করার রাত। আর যে রাতটি তার আত্মপ্রকাশের কারণে সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ করা হয়েছে এটা সেই রাত অপেক্ষা অধিক সম্মান ও মর্যাদার রাত, যা তাকে দান করার কারণে সম্মানিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্ম রজনীকে মর্যাদার দিকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করার আরো একটি কারণ এই যে, শবেকদরে কেবল আসমান হতে ফেরেশতারা অবতরণ করে থাকেন এবং জন্ম রজনীতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মহান সত্তার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, যার নিকট আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতাগণ আসা-যাওয়া করতেন (মোসাবাতা বিসসুন্নাহ)।
সুতরাং মিলাদের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। আল্লামা দুবাগীর মীলাদে বেনযীর পাঠ করলে বহু গুরুত্বপূর্ণ দুর্লভ তথ্য জানা যায়। তার এ অনন্য সাধারণ পুস্তকে তিনি এক বিস্তারিত সূচিপত্র প্রদান করেছেন এবং মাত্র কয়েকটি অধ্যায়ে পুস্তকটি শেষ করেছেন। মীলাদ ও কিয়ামের ওপরও স্বতন্ত্র দুই অধ্যায় রয়েছে। তার প্রদত্ত প্রমাণ পঞ্জি পাঠ করলে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। এ বিখ্যাত পুস্তকে তিনি মৌলিক আরবি বিশ্বস্ত খ্যাত, অখ্যাত এবং ছোট-বড় গ্রন্থবলী ছাড়াও বিভিন্ন প্রসিদ্ধ ভাষার ২৩০টি গ্রন্থের বরাত দিয়েছেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার মত ও বক্তব্যের সমর্থনে মূল গ্রন্থ হতে উদ্ধৃতি উপস্থাপন করেছেন এবং অনুরূপভাবে প্রতিপক্ষের মত ও যুক্তি প্রমাণ দিয়ে খ-ন করেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রকাশকের কথা হতে অংশবিশেষ উদ্ভূত করে মীলাদে বেনযীরের আলোচনা সমাপ্ত করতে চাই। প্রকাশক লিখেছেন : ‘যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বে মাহফিলে মীলাদ ও কিয়াম অতি গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে। তাই প্রকৃত সত্যকে পাঠক সম্মুখে তুলে ধরতে গ্রন্থকার অক্লান্ত পরিশ্রম ও সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে কোরআন সুন্নাহ ইজমা কিয়ামের ভিত্তিতে সাহাবা তাবেয়ীন ও সলফে ছালিহীনের আমল ও বিশ্ববরেণ্য উলামায়ে কেরামের প্রজ্ঞাপূর্ণ মন্তব্যের আলোকে রচনা করেছেন।’
আমাদের দেশ ওলামা-মাশায়েখ প্রধান হিসেবে খ্যাত। দ্বীনি মছলা-মাছায়েল ও ধর্মীয় ব্যাপারগুলোতে ওলামায়ে কেরামের মতামতই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। তবে তাদের সকলেই ফকীহ বা মুফতি তা নয়। ধর্মীয় নানা বিষয়ে ফতোয়া প্রদানের দায়িত্ব যারা পালন করে থাকেন সাধারণত তাদেরকেই মুফতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। একজন বড় জবরদস্ত আলেমে দ্বীন হলেও তিনি মুফতিও হবেন জরুরি নয়। মুফতি হওয়ার অর্থাৎ ফতোয়া প্রদানের জন্য বিশেষ শাস্ত্রজ্ঞান যোগ্যতার প্রয়োজন এবং মুফতির জন্য আলাদা ‘আদাব’ তথা রীতিনীতি শর্ত শরয়েত ইত্যাদি রয়েছে। এসব পালনীয় বিষয় সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এর অর্থ হচ্ছে প্রচলিত অর্থে একজন আলেম হলেই তিনি ফতোয়া প্রদানের অধিকারপ্রাপ্ত হলেন এমন মনে করা ঠিক নয়। বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ এ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে এবং অন্যান্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে দারুল ইফতা বা স্বতন্দ্র ফতোয়া বিভাগ রয়েছে। ফতোয়া প্রদানের স্বীকৃত সনদবিহীন যারা ফতোয়া প্রদান করে থাকেন, তাদের সংখ্যাও বিপুল। আল্লামা দুবাগী রচিত মালাছুল মুফতি সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য উপাদেয় বই।
আল্লামা মোজাহিদ উদ্দিন সাহেব একাধােের মোহাদ্দেস ও ফকিহ-মুফতি হওয়ার পাশাপাশি তাজভীদ শাস্ত্রবিদ তথা কেরাত বিশারদ হিসেবেও বিশেষ খ্যাতির অধিকারী, যা সচরাচর দেখা যায় না। তার এ বিশেষ পারদর্শিতার কথা আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। এ প্রসঙ্গে আমাদের দেশের একটি বিষয়েরও উল্লেখ করতে হয়। এখানে মক্তবে কোরআন শিক্ষা করা মুসল্লিদের সংখ্যা বিপুল, তাদের মধ্যে বিশুদ্ধভাবে কোরআন পাঠে সক্ষম এমন মুসল্লিদের পরিসংখ্যান লওয়া হলে দেখা যাবে, এমন লোকদের মধ্য হতে কাউকে নামাজের ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া হলে অনেকে এ দায়িত্ব গ্রহণে সম্মত হবে না। আর কেউ কেউ ইমাম হয়ে নামাজ পড়ালেও সে নামাজ গলদ কেরাত পাঠের কারণে দোহরাতে হতে পারে এরূপ দৃষ্টান্তের অভাব নেই।
বিদেশ ভ্রমণের দিক থেকে আল্লামা দুবাগীকে ইবনে বতুতা বলে আখ্যায়িত করলে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না। ইবনে বতুতা সফরনামা রচনা করে বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। আর আল্লামা দুবাগী সাহেব দেশ ভ্রমণের সংখ্যার দিক দিয়ে ছোট-বড় কমপক্ষে পঞ্চাশটি দেশ সফর করেছেন। এসব দেশ ও শহরের মধ্যে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ও উপমহাদেশের দেশগুলোসহ বিশ্বের ছোট-বড় আরো বহু দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর প্রায় প্রতিবছরই হারামাইন শরীফাইনের জিয়ারতের জন্য গমন করে থাকেন। কোনো কোনো দেশে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়েও সফর করেন। সুতরাং দুনিয়ার বহু দেশ ও ওইসব দেশের মানুষও সমাজ সম্পর্কে তার ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। এত কর্মব্যস্ত জীবনে আল্লামা দুবাগীর কলম কখনো থেমে থাকেনি। তিনি অনবরত লিখেছেন এবং এখনও লিখে যাচ্ছেন। তার ছোট-বড় রচনাবলীর সংখ্যা কুড়ি এর কম হবে না। তার সবকটি পুস্তক-পুস্তিকা বাংলা ভাষায় রচিত, অনূদিত এবং ইসলামের নানা গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল বিষয়ের ওপর। তার প্রত্যেকটি পুস্তক গভীর চিন্তাপ্রসূত, গবেষণাধর্মী এবং তথ্যসমৃদ্ধ। রেফারেন্স হিসেবে গণ্য। তার রচনাবলীতে তথ্যসূত্রসমূহ আরবিসহ বিভিন্ন ভাষায় রচিত। প্রতিটি গ্রন্থসূত্রের পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে ইচ্ছা করলে পাঠক মূল সূত্র খুঁজে পাবেন। এ প্রবীণ লেখক অত্যন্ত পরিশ্রম এবং কঠোর সাধনা-গবেষণার মাধ্যমে তার রচনাবলী পাঠক সমাজের জন্য সহজ পাঠযোগ্য করে তুলে ধরেছেন। তার রচিত গ্রন্থাবলী অধিকাংশই সংস্কারমূলক এবং মুসলিম সমাজে প্রচলিত নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত বলা যায়। তিনি একজন ‘মোছলেহ’ অর্থাৎ সংস্কারকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। একজন মানবতাবাদী হিসেবে আল্লামা দুবাগীর সেখানে সমাজ কল্যাণমূলক নানা তৎপরতার কথা জানা যায়। তিনি মুসলিম উম্মাহর কল্যাণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তিনি জনসেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছাড়া ইসলামী সাংস্কৃতিক নানা সংগঠন সংস্থার প্রতিষ্ঠা এবং সভাপতি অভিভাবক। তারই উদ্যোগে সেখানে ইসলামী পবিত্র উৎস গুলো উদযাপিত হয়ে থাকে। এসব উপলক্ষে তার বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ, বয়ান দেশি পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়।
আন্তর্জাতিক খ্যাতির অধিকারী এ মহান ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশে-বিদেশে অসামান্য প্রশংসা ও অভিনন্দন লাভ করেছেন। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশ এবং আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বহু প-িত, মনীষী তথা খ্যাতনামা ওলামায়ে কেরাম আল্লামা মোজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগী রচিত গবেষণাধর্মী তথ্যবহুল রচনাবলী ও নানামুখী ইসলামী তৎপরতা দেখে এতই অভিভূত ও মুগ্ধ হয়েছেন যে, তারা তাদের প্রেরিত শুভেচ্ছাবাণী ও মূল্যবান অভিমতগুলোতে আল্লামা মোজাহিদ উদ্দিন দুবাগীকে মোবারকবাদ সাধুবাদ জানিয়েছেন। এতে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা, দক্ষতা, যোগ্যতা এবং জ্ঞানবিশালতার পরিচয় ফুটে ওঠে। আমরা বিদেশে ইসলাম প্রচারে নিবেদিতপ্রাণ এ মহান সাধকের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। (সমাপ্ত)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন