স্টাফ রিপোর্টার : দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন করা হলে ৩০০ টাকায় গরুর গোশত খাওয়ানো যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম। তিনি বলেন, ভারতীয় গরু আমদানির ব্যবস্থা ঠিক করা হলে ৩০০ টাকা কেন আরও কম দামেও গোশত আমরা শহরবাসীকে খাওয়াইতে পারব। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন গোশত ব্যবসায়ী সমিতির যৌথ উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
রবিউল আলম বলেন, তাদের দাবি-দাওয়া মেনে না নেওয়া হলে সারা বাংলাদেশে অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘট ডাকা হবে। মানা হলে ধর্মঘটের আর কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি আশা করছেন ধর্মঘট আর লাগবে না। তিনি বলেন, দাবি মানা এক জিনিস আর বাস্তবায়ন করা আরেক জিনিস। বাস্তবায়ন যদি করে তো একটু সময় লাগবে। যদি গরু আমদানি ওইভাবে বাস্তবায়ন করে আনা হয় তাহলে ৩০০ টাকার কমেও গোশত খাওয়ানো সম্ভব।
বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে আলোচনার ডাক পেয়ে নতুন কোনো কর্মসূচি না দিয়ে আলোচনার টেবিলে দাবি আদায়ের প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, শনিবার পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট ছিল। আমরা তা পালন করব। আপাতত নতুন কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না। আমরা আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে।
রোববার ঢাকায় সরকার ঘোষিত মিটলেস ডে হওয়ায় এমনিতে সেদিন পশু জবাই বন্ধ থাকে। তবে শনিবার পর্যন্ত ধর্মঘটের পর এখনই নতুন কর্মসূচি না থাকায় রোববার ঢাকায় গরু ও খাসির গোশত বিক্রি করা হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে সমিতির নেতাদের কথায়।
গাবতলী গরুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় বন্ধ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাকে অপসারণসহ চার দফা দাবিতে গত সোমবার গোশত বিক্রেতাদের ছয় দিনের এই ধর্মঘট শুরু হয়। তাদের এই ধর্মঘটের কারণে ঢাকার বিভিন্ন কাঁচাবাজারের গোশতের দাকানগুলো বন্ধ রয়েছে। গরু ও খাশির গোশতের সংকটের কারণে রাজধানীতে দাম বেড়েছে মুরগীর।
বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন গোশত ব্যবসায়ী সমিতির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রবিউল জানান, শনিবার পর্যন্ত তাদের ধর্মঘটের কর্মসূচি ছিল, তা পালন করা হবে। আপাতত নতুন কোনো কর্মসূচি তারা দিচ্ছেন না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের সঙ্গে রোববার তাদের বৈঠক। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে দাবি মেনে নেওয়া হবে বলেই তারা আশা করছেন। দাবি মানা না হলে এরপর ধর্মঘট হবে সারা দেশে। আর সব দাবি পুরোপুরি মানলে গোশতের কেজি ৪০০ টাকার নিচে নেমে আসবে বলে আমি আশা করি। আর কয়েকটি দেশ থেকে ঠিকঠাক মত বৈধ পথে গরু আমদানি করা গেলে এই দাম নেমে আসবে ৩০০ টাকার নিচে।
গাবতলী গরুর হাটের ইজারা বাতিল, হুন্ডি ব্যবসায়ী কালা মইজাকে বিচারের আওতায় আনা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের দুর্নীতিবাজ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা, ট্যানারি শিল্প মালিকদের দুই ভাগে ভাগ করে সফল ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা এবং ব্যর্থ মালিকদের কারখানা বন্ধ করার দাবি রয়েছে গোশত ব্যবসায়ীদের।
রবিউল আলম বলেন, বৈধপথে নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি করতে হবে। আমাদের দেশে আগে ৬৫ শতাংশ পশু ভারত থেকে আনা হতো। এখন মাত্র ৩৫ শতাংশ আনা লাগে। আর আগামী তিন বছর আনতে হবে ৩০ শতাংশ পশু। পশু আনার জন্য আমরা যেন বৈধ পথে টাকা নিয়ে যেতে পারি, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের দাবি মেনে নিন, তা না হলে ইচ্ছেমত দামে গোশত বিক্রি করার হুকুম দিন। ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে জেল জরিমানা বন্ধ রাখুন। ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি আর দুর্নীতিকে গোশতের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন এই গোশত ব্যবসায়ী নেতা।
ভারতীয় বর্ডার পাস করতে ১৫-২০ হাজার টাকা লাগে। সীমান্ত থেকে গাবতলী পৌঁছতে একটি গরুতে ব্যয় হয় ২০-৩০ হাজার টাকা। দেশে ইজারাদার, চামড়া ব্যবসায়ী, হুন্ডি ব্যবসায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে আজ ৫০০ টাকা কেজিতে গোশত বিক্রি করতে হচ্ছে। ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার দাম কমে যাওয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব।
গরুর যে চামড়া আমরা এক সময় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, সেই চামড়া এখন ২০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। ছাগলের যে চামড়া আমরা এক সময় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছি, বর্তমান সময়ে তা ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
রবিউল আলমের দাবি, অনেক গোশত ব্যবসায়ী রাগ করে চামড়া ফেলে দিচ্ছেন, এতে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে। কুচক্রী মহল আমাদের পকেট কেটে টাকা নিচ্ছে। আর আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহর পর আমাদের কাস্টমাররা রিজিকের ব্যবস্থা করে। কিন্তু পশুর গলা কাটার পাশাপাশি আমরা কাস্টমারদের গলা কেটে টাকা নিচ্ছি, নিতে হচ্ছে।
অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারণে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, বিএসটিআই সারাদিন ঘোরে, মোবাইল কোর্ট করে, জরিমানা করে। জবাইখানা নাই, আমাদের পশু জবাই করার স্থান নাই, ম্যাজিস্ট্রেট আইয়া কয়- জবাইখানার সিল মারো নাই কেন? কোন যন্ত্রণায় যে আছি... চোখে শর্ষে ফুল দেখছি।
তিনি বলেন, এক সময় গোশত ব্যবসায়ীদের অবস্থা ভাল ছিল। কিন্তু এখন সংসার ছেড়ে পালিয়ে গেছেন- এ রকম মানুষও আছেন।
উপায় না দেখে ধর্মঘট পালন করতে হচ্ছে। কেউ শোনে নাই আমাদের কথা। ৬০০ দরখাস্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে দেওয়া আছে, একটি দরখাস্তও বিবেচনা করা হয় নাই।
হাই কোর্টে রিট আবেদন করার পর গাবতলী গরু হাটের ইজারাদার অত্যাচার বাড়িয়ে দিয়েছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী ডেকেছেন, রোববার সকাল ১১টায় আমরা তার সাথে কথা বলব। রোববার বেলা ২টায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আমাদের ডেকেছে, সেখানেও আমরা যাব। এটা আমাদের পেশা, কোনো সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে বা ক্ষমতা দখল করতে আমরা ধর্মঘটে যাই নাই।
রোববারের বৈঠকে যদি দাবি পূরণ না হয়, গাবতলী পশুর হাটের ইজারা যদি বাতিল না হয়, তাহলে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সারা দেশে গোশত বিক্রি বন্ধ করার হুমকি দেন বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম। অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর গোশত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ আব্দুল বারেক ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন