শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

প্রশাসনিক আত্মগরিমায় ভেঙে গেলো নরসিংদীর সরকারী কলেজ শহীদ মিনার

নরসিংদীতে এখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নেই

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে ঃ নরসিংদী জেলা শহরে এখন মূলত কোন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নেই। ২০১২ সালে রায়পুরার এমপি তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু ও তৎকালীন জেলা প্রশাসক অমৃত বাড়ৈ নরসিংদী সরকারী কলেজ শহীদ মিনারভিত্তিক প্রায় ৬২ বছরের কেন্দ্রিকতাকে ভেঙে দেয়ার পর নরসিংদী জেলা শহর শহীদ মিনারভিত্তিক কেন্দ্রিকতা হারিয়ে ফেলে।
জানা গেছে, নরসিংদী সরকারী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে নরসিংদী সরকারী কলেজের ছাত্ররা ব্যাপক ত্যাগ তিতিক্ষার স্বীকার করে। ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর ভাষা শহীদদের স্মরণে নরসিংদী সরকারী কলেজে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তৎকালীন থানা প্রশাসন, ১৯৭৭ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসন এবং ১৯৮৪ সালের পর থেকে নরসিংদী জেলা প্রশাসনসহ সকল সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল রাজনৈতিক দল, সকল সামাজিক সংগঠন থেকে শুরু করে সর্বস্তরের লোকজন নরসিংদী সরকারী কলেজের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে আসছে। এ উপলক্ষে নরসিংদী সরকারী কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতিবছরই শহীদ মিনারের পাদদেশসহ সামনের মাঠ ও আশেপাশের এলাকায় বিশাল প্যান্ডেল তৈরী করে। প্যান্ডেলের আশেপাশে স্থাপন করা হয় ভাষা আন্দোলন ও শহীদ মিনারভিত্তিক ব্যাপক চিত্রকর্ম। কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আয়োজন করা হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। শুধু তাই নয়, ২০ ফেব্রæয়ারী বিকেল থেকেই পার্শ্ববর্তী মঞ্চ থেকে শহীদ দিবসের গুরুত্বের উপর ধারাবাহিক বক্তৃতা প্রচার করা হয়। কলেজের শিক্ষক মন্ডলী, ছাত্র-ছাত্রী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন এখানে বক্তৃতা পেশ করার সুযোগ পায়। ২০১২ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক অমৃত বাড়ৈ নরসিংদীতে দায়িত্ব গ্রহণের পর হঠাৎ তিনি আলাদা করে নরসিংদী স্টেডিয়াম চত্বরে শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসকের এই ঘটনায় নরসিংদীর রাজনৈতিক মহলসহ হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক-জনতার মধ্যে চাপা অসন্তোষ দেখা দেয়। মানুষজন তৎকালীন ডিস্ট্রিক্ট মিনিস্টার তথা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু’র শরণাপন্ন হলে তিনি এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করেননি।
’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা করেছে এই শহীদ মিনারেই প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, মন্ত্রী-এমপি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ সকল স্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণসহ শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছে। আর এটি একটি জাতীয় দৃষ্টান্ত। এই জাতীয় দৃষ্টান্তকে অনুসরণ অনুকরণ করেই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নির্মিত হয়ে আসছে শহীদ মিনার। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক শহীদ মিনারগুলোই এলাকা সমূহে কেন্দ্রিকতা সৃষ্টি করেছে। এ ক্ষেত্রে তৎকালীন জেলা প্রশাসন কেন নরসিংদী স্টেডিয়াম চত্বরে একটি বিচ্ছিন্ন এলাকায় এই শহীদ মিনার নির্মাণ করলেন, তার কারণ জানা যায়নি। তবে সচেতন মানুষ জনের মতে প্রশাসনিক ক্যাডারের আত্মগরিমা প্রদর্শনের জন্যই এই শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। এরপর অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নরসিংদীর এমপি লেঃ কর্ণেল (অব:) নজরুল ইসলাম হীরু পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। এলাকার হাজার হাজার মানুষের দাবী নরসিংদী সরকারী কলেজ শহীদ মিনারভিত্তিক কেন্দ্রিকতা আবার প্রতিষ্ঠা করা হোক। তা হলেই নরসিংদীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে স্বীকৃতি পাবে নরসিংদী সরকারী কলেজের ঐতিহাসিক শহীদ মিনারটি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন