শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আট বছর পর জমে উঠছে নৌকা-ধানের শীষের লড়াই

| প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিরোধ মেটাতে দুই দলের কঠোর নির্দেশনা
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্ঘ আট বছর পর কুমিল্লায় আবারো জমে উঠছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নৌকা ও বিএনপিধানের শীষের লড়াই। প্রতীক বরাদ্দ না হলেও ভোটের মাঠে নৌকা ও ধানের শীষের লড়াই এক অন্যরকম উৎসবের মাত্রা যোগ করেছে। প্রার্থিতা নিয়ে কুমিল্লার আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাদের মধ্যে মান-অভিমান থাকলেও নৌকা-ধানের শীষের প্রশ্নে দুইদলের নেতাকর্মীরা বিরোধীতা ভুলে নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামার পরিবেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যার অংশ হিসেবে কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের একটি সাংগঠনিক টিম গতকাল কুমিল্লায় এসেছেন। সব বিরোধ মিটিয়ে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হয়েছে কুমিল্লা আওযামী লীগের নেতাকর্মীদের। অন্যদিকে বিএনপির হাইকমান্ড থেকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দলীয় প্রার্থীর ধানের শীষের পক্ষে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য। সবমিলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমাকে ঘিরে নৌকা আর বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুকে ঘিরে ধানের শীষের প্রচারণা জমে উঠতে শুরু করেছে। প্রতীক বরাদ্দের পর এ প্রচারণা মোড় নেবে তীব্র লড়াইয়ের দিকে।  
নৌকা আর ধানের শীষের শেষ লড়াই কুমিল্লাবাসী দেখেছিল ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় ওই দুই প্রতীকের লড়াই আর জমে ওঠেনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রতীকের বিষয়টি ওঠে আসার পর কুমিল্লায় ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে নৌকা-ধানের শীষের লড়াই জনমনে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। আবার আগামী ৬ মার্চ কুমিল্লা সদর উপজেলার উপ-নির্বাচনেও নৌকা-ধানের শীষের লড়াই নিয়ে দুই দলে ততটা আমেজ সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু আগামী ৩০ মার্চ দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কুমিল্লা সিটি নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমা ও রাজপথের বিরোধীদল বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুকে ঘিরে জমে ওঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। আট বছর পর আবার মুখোমুখি নৌকা-ধানের শীষ। সিটি নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের আগেই দুই দলের নেতা, কর্মী, সমর্থক ও নগরীর সাধারণ মানুষের মুখে একটাই প্রশ্ন, সিটি করপোরেশনের কর্তৃত্ব আওয়ামী লীগের নৌকা নাকি বিএনপিধানের শীষের দখলে থাকবে?
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে দলীয়ভাবে মনোনয়ন ও প্রতীকের নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের এ নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীক নির্ভর হওয়ায় পাল্টে যাচ্ছে সব হিসাব-নিকেশ। সমঝোতা করে প্রার্থী দেয়া, নির্বাচনী বৈতরণী পার করে দেয়ার কোনোটাই থাকছে না এবারের হিসাবের খাতায়। কারণ একটাই দলীয় প্রতীকের নির্বাচন। দলের মধ্যে যতই ব্যক্তি বিরোধ থাকুক, সবকিছুর ঊর্ধ্বে দলের স্বার্থ এবং দলীয় প্রতীকের মর্যাদা রক্ষার এক কঠিন লড়াই শুরু হয়েছে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে। আগামী ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কুমিল্লায় এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমাকে নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি গ্রæপ সরব হয়ে ওঠলেও আরেকটি গ্রæপ এখনো মাঠে নামেনি। কেবল তাই নয়, যারা দলের কাছে মনোনয়ন চেয়ে পাননি তাদের না পাবার হতাশাও এখনো কেটে যায়নি। তাই দলের মধ্যে সকল অনৈক্য, বিরোধ, হতাশা দূর করে সবাইকে নৌকার প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমার পক্ষে কাজ করার জন্য একই প্লাটফরমে নিয়ে আনার লক্ষ্যে গতকাল কুমিল্লায় এসেছেন কেন্দিয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমের নেতৃত্বে চারজনের একটি প্রতিনিধি দল। তারা গতকাল সন্ধ্যায় নগলরি রামঘাটে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেন। মনোনয়ন পাননি এমন নেতারাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ জানান, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তাই দলের স্বার্থে দলীয় প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমার পক্ষে তথা নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য দলের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে।
অন্যদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে যাতে মনিরুল হক সাক্কু আবারও নির্বাচিত হয়ে আসতে পারে এজন্য কেন্দ্রিয়ভাবে নির্বাচন নিয়ে কুমিল্লায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রিয় হাইকমান্ড থেকেও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে দলীয় প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাজ করতে হবে। এ নির্বাচন বিএনপির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের মতো কুমিল্লাতেও কেন্দ্রিয়ভাবে টিম গঠন করে দেয়া হবে। হাইকমান্ড থেকে ধানের শীষ প্রতীকের ম্যাসেজ, প্রচার-প্রচারণা নগরীর সকল ভোটার ও সাধারণ মানুষে কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে কোনো বিরোধ না রেখে কাজ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।  
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ যা-ই থাকুক, প্রতীকের নির্বাচনে ব্যক্তি বিরোধ ভুলে দুই দলের নেতাকর্মীরাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়। যার প্রমাণ ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেখা গেছে। সব বিভেদ ভুলে প্রায় চল্লিশ বছর পর কুমিল্লা সদরে নৌকা জয়ের ফসল তুলে নেয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। ওই নির্বাচনে বিএনপি বিরোধমুক্ত হলেও দলের প্রার্থী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন জয়ী হতে পারেননি। কিন্তু প্রতীক ও দলের স্বার্থে নেতাকর্মীরা কাজ করেছেন উদার হয়ে। বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভার দুইবারের চেয়ারম্যান ছিলেন সদরের বর্তমান এমপি হাজী বাহার। তারপর বিলুপ্ত পৌরসভায় দীর্ঘসময় ধরে চেয়ারম্যান ও মেয়র পদ আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন কুমিল্লা বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক (মরহুম) কামাল উদ্দিন চৌধুরী ও বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। এভাবে বিএনপি দলীয় ওই দুই নেতা পৌরপিতা ও নগরপিতার আসনে ছিলেন দীর্ঘ সময়। এই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে নগরীর আমজনতার চোখ ৩০ মার্চের দিকে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের এ লড়াইয়ে ভোটাররা এবার নগরপিতা নাকি নগর মাতা বেছে নেবেন নগরবাসীর মধ্যে এমন ভাবনাই ঘুরপাক খাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
সাজ্জাদ খান ২ মার্চ, ২০১৭, ১২:১৫ পিএম says : 0
লড়াই জমে কোন লাভ আছে কি ?
Total Reply(0)
ফারজানা ২ মার্চ, ২০১৭, ১২:১৫ পিএম says : 1
নির্বাচনের রেজাল্ট কী হবে সেটা অবশ্য সবারই জানা আছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন