মনোনয়ন জমার শেষদিনে মুখর নির্বাচন অফিস
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লায় আওয়ামী লীগে এখন আর কোন বিরোধ নেই। এখন বিরোধিতার লড়াই নয়, এখন গণতন্ত্রের প্রতীক নৌকার মর্যাদা রক্ষার লড়াই। এ লড়াইয়ে দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকাকে বিজয়ী করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমা।
অন্যদিকে গত পাঁচ বছরে নগরীতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষার লক্ষ্যেই মানুষ ধানের শীষে ভোট দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মনোনয়নপত্র দাখিল করে গণমাধ্যমের কাছে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী এভাবেই তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তফসিল ঘোষণার হিসাব অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন। সকাল থেকেই কাউন্সিলর প্রার্থী ও সমর্থকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে কুমিল্লা নগরীর ছোটরা এলাকায় জেলা নির্বাচন অফিস প্রাঙ্গণ। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয়া দুই হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের আনজুম সুলতানা সীমা ও বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুকে ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে নির্বাচন অফিসের ভেতর বাহির। মনোনয়নপত্র জমা শেষে সীমা ও সাক্কু প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নানা ধরনের প্রশ্নের জবাব দেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
সীমার সাথে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং সাক্কুর সাথে ছিল কেন্দ্রিয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার উদ্দেশ্যে নগরীর ঠাকুরপাড়ার বাড়ি থেকে সকাল ১১টায় বের হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমা। তার পিতা বষিংয়ান রাজনীতিক অ্যাডভোকেট আফজল খানকে সাথে নিয়ে প্রথমে তিনি যান নগরীর দারোগাবাড়ি কম্পাউন্ডে অবস্থিত ইসলামী আধ্যাত্মিক সাধক ওলীয়ে কামেল শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরী (রহ.) এর মাজার শরীফে। সেখানে জিয়ারত শেষে আফজল খানসহ কৃষকলীগ নেতা আলহাজ ওমর ফারুক, আওয়ামী লীগ নেতা সফিকুল ইসলাম সিকদার, জাকির হোসেন, চিত্তরঞ্জন ভৌমিক, আবুল কাশেম রৌশন, নুর উর রহমান মাহমুদ তানিমকে নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য আসেন। বাইরে অপেক্ষমাণ থাকে দলের শত শত নেতাকর্মী। কুমিল্লা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডলের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন সীমা। তারপর গণমাধ্যমে সীমা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এবং বিগত সময়ে স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সবকটিতে জয়লাভের মধ্যদিয়ে কুমিল্লার মানুষের সাথে যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তারই প্রতিফলন ঘটবে এবারের নির্বাচনে। দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এবারে দলীয় প্রতীকের নির্বাচন। এখানে নৌকার বিরোধিতা দলের কেউই করবে না। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু আমার সাথে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের কারো কোন বিরোধ নেই। আর মান অভিমান যা ছিলো সবই দূর হয়ে গেছে। দলের কেউই নৌকা বা আমার বিপক্ষে নয়। এটি দলের মর্যাদার লড়াই। এখানে সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। এনিয়ে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবকাশ নেই। আমার বিশ্বাস, সবাই অতীতের সবকিছু ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকাকে বিজয়ী করবে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সীমা বলেন, ‘নগরবাসী পরিবর্তন চায়। কেননা কুমিল্লা নগরীতে গত পাঁচ বছরে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। তাই উন্নয়নের প্রশ্নে নগরবাসী এবারে নৌকাকেই বিজয়ী করবে। কারণ নৌকা উন্নয়নের প্রতীক, গণতন্ত্র রক্ষার প্রতীক।’ মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় তাঁর সাথে আওয়ামী লীগের আরও উল্লেখযোগ্য নেতা না থাকা প্রসঙ্গে সীমা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা দেয়া আছে পাঁচজনের বেশি লোক ভেতরে নেয়া যাবে না। তাই অনেককেই তিনি সঙ্গে আনতে পারেননি।’
এদিকে বেলা পৌনে একটায় মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার জন্য নির্বাচন অফিসে আসেন বিএনপি প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রিয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সাবেক এমপি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া ও আবদুল আউয়াল, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। এসময় বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী নির্বাচন অফিসের বাইরে ভিড় জমায়। রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডলের কাছে মনোনয়নপত্র জমা শেষে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এসময় তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার নগর গ্রাম-গঞ্জের লাখো মানুষের ভালোবাসা রয়েছে আমার প্রতি। আর সেই ভালোবাসা থেকে পেছনে ফেরার পথ নেই বলেই আমি এবারো প্রার্থী হয়েছি। সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে নগরবাসী আমাকে তাদের অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে বিপুল পরিমাণ ভোটে নির্বাচিত করেছে। তখন আমার দল বিএনপি নির্বাচন করেনি। আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৩০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। গত পাঁচ বছরে নগরীর অবকাঠামোগতসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৭৫ ভাগ উন্নয়ন সম্পন্ন করেছি। ২৫ ভাগ উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নগরবাসী আমাকে এবারেও নির্বাচিত করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এছাড়া এখন তো দলীয়ভাবে নির্বাচনটা হচ্ছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। গতবারের নির্বাচনে দলের সবাই আমার পক্ষে কাজ করার সুযোগ পায়নি। এবারে দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমার জন্য, ধানের শীষের জয়ের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে।’
অন্যদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া প্রক্রিয়ায় ঢাকা থেকে যোগ দেয়া কেন্দ্রিয় নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদায়ী রকিবউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে আমরা বহুবার প্রশ্ন তুলেছি। এবারে নতুন নির্বাচন কমিশন নিজেরাই তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করবেন। আমাদের বিশ্বাস বর্তমান কমিশন নিরপেক্ষতার জায়গাটি প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। কুমিল্লায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চাই। দলের প্রার্থী, সমর্থক, নেতাকর্মীরা যাতে অহেতুক হয়রানীর শিকার না হয় বিষয়টির ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে অনেক বেশি সগাজ থাকতে হবে। আমি মনে করি কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের মধ্যদিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ জেগে উঠবে তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য মানুষ ধানের শীষের প্রার্থী সাক্কুকে আবারো নির্বাচিত করবে। কারণ সাক্কু একজন সফল মেয়র। বিএনপি জনগণের দল। সাক্কু দীর্ঘদিন এই দলের রাজনীতি করার মধ্যদিয়ে গণমানুষের নেতৃত্বের জায়গাটি সমৃদ্ধ করেছে। এনির্বাচনে সাক্কুর জয়লাভ একদিকে কুমিল্লায় দলের সাংগঠনিক শক্তিকে আরও জাগিয়ে তুলবে এবং অন্যদিকে নগরবাসীর আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। কুমিল্লায় ঐক্যবদ্ধ বিএনপি সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের জয় নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন