নাইমুর রহমান নাবিল : শতভাগ অনাবাসিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন খাতে রয়েছে চরম সঙ্কট। টাকা দিয়েও ২০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৭ হাজার শিক্ষার্থীই পরিবহনসেবা থেকে বঞ্চিত। প্রতিনিয়ত সকাল-বিকাল বাদুড়ঝোলা হয়ে ঝুঁঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার একযুগেও কাটেনি এ বেহাল অবস্থা। অনুসন্ধানে জানা যায়, শতভাগ অনাবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সুবিধা ভোগ করে খুব কম শিক্ষার্থী। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ৬০০ টাকা করে পরিবহন ফি আদায় করা হয়। এ হিসাবে পরিবহন বাবদ বছরে এক কোটি ২০ লাখ টাকা আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বাস রয়েছে মাত্র ১৪টি। এর মধ্যে ভাড়ায় চালিত বিআরটিসির দ্বিতল বাস রয়েছে ১২টি, নিজস্ব দু’টি। সম্প্রতি ব্যক্তি উদ্যোগে দেয়া দু’টি বাস যোগ হয়েছে। এই বাসগুলোর ধারণক্ষমতা রয়েছে প্রায় তিন হাজার। আর বাকি ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য নেই কোনো পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে প্রতিদিন ধারণক্ষমতার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি শিক্ষার্থী যাতায়াত করছেন। কাক ডাকা ভোরে বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে আসেন আবার ক্লাস-পরীক্ষা শেষে ক্লান্ত শরীরে বাদুড়ঝোলা হয়েই বাসায় ফেরেন তারা। এতে করে ঘটছে দুর্ঘটনাও। ২০১৫ সালের নভেম্বরে সাভারে বিশ্ববিদ্যালয় বাস থেকে পড়ে মিশুক নামের এক শিক্ষার্থী আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই বছরের মার্চ মাসে বাসের দরজায় দাঁড়ানো অবস্থায় অপর একটি বাসের ধাক্কায় এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছিলেন। এসব দুর্ঘটনার পরও বাস ও ট্রিপের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়নি। পরিবহন দফতর সূত্র জানায়, ভাড়ায় চালিত বিআরটিসির মোট ১৫টি বাস শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহনে ব্যবহার করা হয়। এ জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। প্রতিদিন বিআরটিসিকে ভাড়া বাবদ এক লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়। সে হিসাবে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হয় কর্তৃপক্ষকে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিআরটিসি থেকে বাস ভাড়া করে চালাচ্ছেন। ভাড়া হিসাবে যে টাকা গুনতে হচ্ছে তা দিয়ে প্রতি মাসেই গাড়ি কেনা সম্ভব। প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বাসের সংখ্যা বাড়েনি। ডাবল ট্রিপের দাবি করা হলেও তা চালু করা হয়নি। ফি দিয়েও পরিবহন সুবিধা না পাওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাধ্য হয়েই পাবলিক বাসে যাতায়াত করেন এবং হাফ ভাড়াকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা। মারামারি ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা ক্ষতিপূরণের মধ্যমে মীমাংসা করা হয়। এর স্থায়ী সমাধানের দাবি শিক্ষার্থীদের। এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের ভেতরে দু’টি মিনিবাস দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এর বিভিন্ন যন্ত্রনাংশ চুরি হয়ে গেছে, আর যেগুলো বাকি রয়েছে তা মরিচা পড়ে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর কোনো ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ। এ ব্যপারে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ডাবল ট্রিপ চালু, বাসের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ পরিবহনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বারবার আন্দোলন করেছি। কিন্তু প্রশাসন কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। পরিবহন পুলের সহকারী রেজিষ্ট্রার আবদুুল আজিজ জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অকেজো গাড়ি দু’টি পরিদর্শনে এসেছিলেন বিআরটিএ প্রতিনিধি দল। তারা গাড়ি দু’টি বিক্রির পরামর্শ দেন। এজন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জবি ভিসি ড. মীজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি অপরিকল্পিতভাবে স্বল্প জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে নানা ধরনের সঙ্কট রয়েছে। এর মধ্যে পরিবহন সঙ্কট অন্যতম। এ সঙ্কটের সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিবহন সেক্টরে মেঘনা গ্রুপের দেয়া চারটি গাড়ি যোগ হয়েছে। এতে সঙ্কট কিছুটা হলেও কমেছে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে এ বিষয়ে প্রশাসন আন্তরিক রয়েছে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন