শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

খুলনার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট এখনো আলোর মুখ দেখেনি

| প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : খুলনার ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রয়ে থাকা একাধিক শিশুকে যৌন হয়রানি এবং নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে কমিটি গঠন এবং তদন্তের পরও তদন্ত রিপোর্ট এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এসব কর্মকান্ডের হোতা ওই প্রতিষ্ঠানের উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর মাতুব্বর এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আসলে তার খুঁটির জোর কোথায়?
সূত্রমতে, খুলনার ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের বালিকা সেন্টারে আশ্রয়ে থাকা শিশুদের নিরাপত্তাহীনতা, স্টাফদের স্বপদে কাজ করতে না দেয়া, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গার্ড কর্তৃক মেয়েশিশুকে যৌন হয়রানি, বড়দের দিয়ে ছোটদের মারধর, পর্যাপ্ত খাবার না দেয়া, মেয়াদের বেশি সময় শিশু রাখা এবং প্রস্রাব হবে বলে রাতে শিশুদের পানি পান করতে না দেয়া, প্রতি মাসে খাবার ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ শিশুদের নামে বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ, বদলি আদেশ হওয়ার পরও ক্ষেত্রবিশেষ কাউকে কাউকে ছাড়পত্র না দিয়ে নিজে ফায়দা লুটে নেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, নিজেকে রক্ষা এবং পুরো বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফর মাতুব্বর নানা কৌশলে সফলও হয়েছেন। এখনো চলছে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার তেলসমাতি মিশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনার ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের আশ্রয়ে থাকা একাধিক শিশুকে যৌন হয়রানি এবং নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় কর্মসূচি পরিচালক এ কে এম ফজলুজ্জোহার নির্দেশে সমাজসেবা অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক সুকান্ত কুমার সরকারকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে মোতাবেক উপ-পরিচালক খুলনার নির্দেশে সমাজসেবা অধিদফতর খুলনার সহকারী পরিচালক ও আঞ্চলিক সমাজসেবা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম এবং সমাজসেবা কর্মকর্তা (রেজিস্ট্রেশন) শাহেলা আক্তার ইরিন অভিযোগের তদন্ত করেন। কিন্তু সে রিপোর্ট এখনো আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত রিপোর্টটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে দফারফা হয়েছে। একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বিষয়টি পুনরায় তদন্তের দাবি তুলেছেন খুলনা নাগরিক ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই পক্ষপাতমুক্ত তদন্তের স্বার্থে জুডিশিয়াল তদন্ত করাই সমীচীন হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির মহাসচিব আজগর হোসেন বলেন, আমরা অনুসন্ধান করে অভিযোগের অনেক সত্যতা পেয়েছি। আরো অভিযোগ রয়েছে, এই গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তের বিষয়ে। এ জন্য জুডিশিয়াল তদন্তের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। অপর দিকে, গত ১১ জুলাই ২০১৬ তারিখে সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বদলি আদেশ ১৯৩ স্মারকমূলে আউট রিচ ওয়ার্কার নাজমা বেগমকে খুলনা থেকে কুষ্টিয়া বদলি করা হয় এবং তার স্থলে মুর্শিদা আক্তার মুক্তাকে বরগুনা থেকে খুলনায় বদলি কর হয়। গত ১৯ ফেব্রæয়ারি ২০১৭ মুক্তা খুলনায় যোগদান করলেও তার দায়িত্ব এখন পর্যন্ত বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। উপ-পরিচালকের আস্থাভাজন নাজমাকে এখনো রহস্যজনক কারণে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। এ ছাড়া গত ১১ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে ১৫৯ স্মারকমূলে এডুকেটর মঞ্জুরা বেগমকে খুলনা থেকে ফরিদপুর বদলিয় করা হয়। কিন্তু তার বদলি পরবর্তী ছাড়পত্র না দেয়ায় সেন্টারে এডুকেটরের সংখ্যা পাঁচজন। যা বিধি বভির্‚ত। এর আগে শারীরিক শিক্ষক সন্তোষ কুমার চক্রবর্তীকে বদলি করা হলেও তাকেও দীর্ঘদিন যাবত ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছিল না উপ-পরিচালকের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য। তিনি নিয়মিত পত্রিকার বিল সরকারি দফতর থেকে পরিশোধ করলেও কোনো পত্রিকা অফিসে রাখেন না। এ ছাড়া আগের রোপনকৃত বিভিন্ন ফলজ গাছ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কেটে উজাড় করছেন। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী বালক সেন্টারে তার অফিস করার কথা থাকলেও তিনি অফিস করেন বালিকা সেন্টারে। এ ব্যাপারে কর্মসূচি পরিচালক এ কে এম ফজলুজ্জোহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তদন্ত রিপোর্ট হাতে এসে পৌঁছায়নি। তবে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন