অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় গত এক বছরে অলস টাকা বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি। এ সময় সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি সব খাতের ব্যাংকেই বেড়েছে অলস অর্থ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৭৩ কোটি টাকা, ২০১৫ সাল পর্যন্ত যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। ফলে ১ বছরের ব্যবধানে এ খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়েছে ১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এ সময়ে উদ্বৃত্ত তারল্যের পাশাপাশি অলস অর্থও বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে অলস অর্থ ছিল ৭ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। ফলে ১ বছরের ব্যবধানে অলস টাকা বেড়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ সময় দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোয় সবচেয়ে বেশি অলস অর্থ রয়েছে, যার পরিমাণ ৬ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমার পরও বিনিয়োগ বাড়ছে না। এতে ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে অলস টাকা। এর জন্য বিনিয়োগের যথাযথ পরিবেশের অভাবকে দায়ী করছেন তারা।
এর আগে গত ১১ মার্চ সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহে অলস টাকার পরিমাণ ৩ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা। এই স্থিতির ওপর ব্যাংকগুলো কোনো সুদ প্রাপ্ত হয় না বিধায় এই পরিমাণ অর্থকে অলস অর্থ হিসেবে বিবেচনা করা যায়; যদিও ৫৭টি ব্যাংকের মোট আমানত বিবেচনায় এ অর্থ অস্বাভাবিক নয়।
মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, অলস টাকা কাজে লাগাতে এবং ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ উদ্দেশ্যে, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হ্রাস করা হয়েছে। ঋণের সুদের হার হ্রাসের মাধ্যমে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সংসদে অর্থমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, ব্যাংকগুলোর বিনিয়েগ কমে যাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। বিগত ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকিং খাতে মোট বিনিয়োগ বা ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। যা ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ৬ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ৭ বছরের ব্যবধানে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৭১ শতাংশ।
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সকল টাকা বিনিয়োগ (ঋণ) হিসেবে বিতরণ সম্ভব নয়। দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন, আমানতকারীদের নগদ অর্থের চাহিদা পূরণ এবং লাভজনক নতুন বিনিয়োগের জন্য কিছু নগদ অর্থ সবসময় ব্যাংকের হাতে এবং আইনগত বাধ্যবাধকতা পরিপালনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে গচ্ছিত থাকে।
বিগত ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে রক্ষিত নগদ জমার অতিরিক্ত অর্থের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে এই অতিরিক্ত অর্থের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন