রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি খুলনার ৯ পাটকলে

প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৪ এএম, ২৮ মার্চ, ২০১৭

খুলনা ব্যুরো : খুলনা অঞ্চলে ষাটের দশকে স্থাপিত তাঁত দিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল। দীর্ঘদিনেও হয়নি বিএমআরই, লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। আর দেশে-বিদেশে পাটের বহুমুখী পণ্যের চাহিদা থাকলেও খুলনার পাটকলগুলোতে তা তৈরির উপযোগী মেশিন নেই। আর বিকল রয়েছে অসংখ্য তাঁত। এ সব তাঁত বন্ধ থাকায় পাটজাত পণ্যের উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। পাটকলগুলোতে যেমন রয়েছে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব, তেমনই পাটের সংকট। মূলত এ সব কারণে টার্গেট অনুযায়ী পাটজাত পণ্যের উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছে এ সব পাটকল। একইসঙ্গে পাটকলগুলোর লোকসানে পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থায় মেশিনগুলো বিএমআরই করা প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্রে জানা গেছে, খালিশপুর, আটরা-গিলাতলা ও যশোরের অভয়নগর শিল্পাঞ্চলে আলিম, ক্রিসেন্ট, পাটিনাম, স্টার, ইস্টার্ন, খালিশপুর, দৌলতপুর, কার্পেটিং ও জেজে আই নামক ৯টি পাটকল রয়েছে। এসব পাটকল ষাটের দশকে ভৈরব নদীর তীরে স্থাপন করা হয়। ১৯৭২ সালে এসব পাটকল বিজেএমসি’র আওতায় আনা হয়। এসব পাটকলে স্যাকিং (মোটা বস্তা), হেসিয়ান (পাতলা চট), সিবিসি (কার্পেট বেকিং ক্লথ) এবং ইয়ার্ন (সুতা) চার ধরনের পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত এ সব পণ্য সিরিয়া, ইরাক, ইরান, সুদান, মিসরসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়।
পাটকল সূত্রে জানা যায়, খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলে ৫ হাজার ১০৯টি তাঁত রয়েছে। গত ২৫ ফেব্রæয়ারির তথ্যানুযায়ী, ৪ হাজার ২শ’টি তাঁত চালু থাকার কথা। কিন্তু চালু রয়েছে মাত্র ২ হাজার ৬৭২টি তাঁত। বাজেটে মোট চাহিদার ১ হাজার ৫২৮টি তাঁতই বন্ধ রয়েছে। তাঁত বন্ধ, অর্থসংকট, পাটের অভাবসহ নানা কারণে বাজেট অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে না এসব পাটকলে। দৈনিক ৩৭২ দশমিক ১৪ মেট্রিকটন পাটপণ্য উৎপাদন হওয়ার কথা। সেখানে গত ২৫ ফেব্রæয়ারি উৎপাদন হয়েছে ২২৮ মেট্রিক টন। নির্ধারিত টার্গেটের ১৪৪ দশমিক ১৪ মেট্রিক টন উৎপাদন কম (হ্রাস) হয়েছে। শুধু ২৫ ফেব্রæয়ারিই নয়, দৈনিক টার্গেট অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে না খুলনা অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে।
এ দিন আলিম জুট মিলে ১৮ দশমিক ১৯ মেট্রিক টন উৎপাদনের টার্গেটে হয়েছে ৯ দশমিক ০৩। কার্পেটিং জুট মিলে ৯ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন উৎপাদনের টার্গেটে হয়েছে ৬ দশমিক ১৪। ক্রিসেন্ট জুট মিলে ৮৭ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন উৎপাদনের টার্গেটে হয়েছে ৫৭ দশমিক ৬৮। দৌলতপুর জুট মিলে ১৯ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন উৎপাদনের টার্গেটে হয়েছে ৭ দশমিক ০২। ইস্টার্ণ জুট মিলে ২৩ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের টার্গেটে হয়েছে ১৫ দশমিক ৮৮। জেজেআই জুট মিলে ৩১ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন উৎপাদনের টার্গেটে হয়েছে ২২ দশমিক ৫২। খালিশপুর জুট মিলে ৬৭ দশমিক ০৭ মেট্রিক টন উৎপাদনের টার্গেটে হয়েছে ৩৭ দশমিক ০৬। প্লাটিনাম জুট মিলে ৬৯ দশমিক ৯৮ মেট্রিক টন উৎপাদনের টার্গেটে হয়েছে ৪৫ দশমিক ০২ এবং স্টার জুট মিলে ৪৫ দশমিক ০২ মেট্রিক টন উৎপাদনের টার্গেটে হয়েছে ২৮ দশমিক ৬৫।
প্লাটিনাম ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মিলের মেশিনগুলো পুরাতন হওয়ায় এগুলো থেকে পরিপূর্ণ উৎপাদন হচ্ছে না। এ ছাড়া মাঝে মধ্যেই মেশিনগুলো বিকল হয়ে যায়। পরে খুচরা যন্ত্রাংশ লাগিয়ে তা ঠিক করে পুনরায় চালাতে হয়।
প্লাটিনাম জুট মিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান বলেন, মিলের তাঁতগুলো দীর্ঘদিনের পুরাতন। এসব মেশিন বিএমআরই করা প্রয়োজন। একই সুরে কথা বলেন, ইস্টার্ন জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন। তারা বলেন, মিলের অর্থ সংকটের কারণে শ্রমিকরা নিয়মিত মজুরি পাচ্ছে না। ফলে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান আবুল কালাম হাজারী বলেন, পুরাতন মেশিনে উৎপান সক্ষমতা কমেছে। মেশিনগুলো বিএমআরই ও মেইনট্যানেন্স করা দরকার। এ লক্ষে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ বনিজ উদ্দিন মিঞা জানান, মিলের তাঁতগুলো ৬০ বছরের বেশি পুরনো। মিল প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএমআরই করা হয়নি। তবে বর্তমান সরকার মিলটি বিএমআরই করার উদ্যোগ নিয়েছে। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিজেএমসির এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম অঞ্চলের দু’একটি মিলে আধুনিক মেশিনে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন হলেও খুলনা অঞ্চলে তা নেই।
খুলনা পাট অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল করিম বিশ্বাস বলেন, সরকার পাট ও পাট শিল্পকে রক্ষায় পাটের মোড়কীকরণ বাধ্যতামূলক আইন বাস্তবায়নে কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সফলতা অর্জন করেছি। যেটুকু বাকি রয়েছে তাও অচিরেই বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, এ আইন বাস্তবায়ন হলে পাটকলগুলো আবার লাভবান প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে। পাটকলগুলো পূর্বের চেয়ে বর্তমানে ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। মিলগুলোর পুরাতন মেশিন বিএমআরই করার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। শিগগিরি পাটকলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন