শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের পানিসীমায় দেশীয় জেলেদের নিরাপত্তাহীনতা দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। ইতিমধ্যে সরকার নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের উন্নয়ন ও সক্ষমতাবৃদ্ধি করে বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের উন্নয়ন ও লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধির প্রাথমিক লক্ষ্যই হচ্ছে নৌসীমা এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে আমাদের নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড কতটা সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। কারণ, এখনো তারা সাগরে বিদেশী নৌদস্যুদের হাতে আমাদের জেলেদের লুণ্ঠন-ডাকাতির শিকার হওয়ার ঘটনা লক্ষ্যনীয়ভাবে কমিয়ে আনতে পারেনি। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে এখন মাছ শিকারের ভরা মওসুম চললেও উপকূলীয় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সংঘবদ্ধ সশস্ত্র নৌদস্যুদের লুণ্ঠন-ডাকাতির ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকতে হচ্ছে জেলেদের। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন জেলে নৌকা নৌদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত ও লুণ্ঠনের শিকার হচ্ছে। কখনো কখনো জেলেদের হত্যা করে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে মাছ লুটে নেয়ার ঘটনা। আবার জেলেদের জিম্মি হিসেবে আটক করে মোটা অঙ্কের টাকাও আদায় করা হচ্ছে। সময় ও আবহাওয়া অনুকূল থাকা সত্তে¡ও দেশীয় জেলেরা মাছ শিকারে অনীহ হয়ে পড়ায় বিদেশী, বিশেষত: ভারতীয় জেলে ও নৌদস্যুরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমাদের মৎস্যসম্পদ লোপাট করে নিয়ে যাচ্ছে।
গত সপ্তায় একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালি ও কুতুবদিয়ার সমুদ্র চ্যানেলে নৌদস্যুদের উৎপাত বেড়েই চলেছে। গত ২০ দিনে শুধুমাত্র মহেশখালির অন্তত ৩০টি ট্রলার ডাকাতির শিকার হয়েছে। এতে বিপুল কয়েক কোটি টাকার সম্পদ লুণ্ঠন ছাড়াও দু’জন জেলে নিহত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই উপকূলীয় জেলেরা নিজেদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে আসছে। একদিকে আন্তঃজেলা ডাকাতদল, অন্যদিকে ভারতীয় নৌদস্যুদের সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার লক্ষাধিক জেলে। এসব ডাকাত সিন্ডিকেটের সাথে আপোষ করে, ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত মাসিক চাঁদা দিয়ে তাদের যাতায়াত নির্বিঘœ রাখতে বাধ্য হচ্ছে জেলেরা। কখনো টাকা দিতে ব্যর্থ হলে অথবা ডাকাত দলের আভ্যন্তরীণ বিরোধ ও আধিপত্যের লড়াইয়ের শিকারে পরিণত হতে হচ্ছে জেলেদের। বঙ্গোপসাগর উপকূলে ডাকাতের আক্রমণে দু’জেলে নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এবং নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে গত সপ্তাহে মহেশখালি উপজেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন। মাঝে মধ্যে জেলে এবং স্থানীয় জনতার হাতে ডাকাতদলের সদস্যরা ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকার হলেও কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের যেন এ নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই।
দেশের নদীনালা-খালবিল শুকিয়ে, নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি ব্যাপক দূষণের শিকার হওয়ার কারণে চাহিদা অনুপাতে আভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছের যোগান ক্রমেই কমছে। তবে সামুদ্রিক জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৎস্য সম্পদের আভ্যন্তরীণ যোগানই শুধু নিশ্চিত করছে না, মৎস্য সম্পদ রফতানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথও খুলে দিয়েছে। জেলেদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে এ খাতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আরো অনেক বেড়ে যাবে। উপকূলীয় জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে বিশাল সমুদ্র এলাকায় বিস্তৃত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল যা বুø ইকোনমিক জোন হিসেবে অভিহিত করা হয়, তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আশা করা যায় না। তবে নৌদস্যুদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, পুলিশ প্রশাসন ও কোস্টগার্ডের ছত্রছায়া বা আঁতাতের অভিযোগও আছে ভুক্তভোগিদের পক্ষ থেকে। ইতোপূর্বে একসাথে শতাধিক ভারতীয় নৌদস্যুকে আটকের পরও তাদের বিনাবিচারে ছেড়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে ভারতীয় নৌদস্যুদের বিরুদ্ধে আমাদের কর্তৃপক্ষের নমনীয় মনোভাব প্রকাশ পায়। এর খেসারত দিতে হচ্ছে জেলেদের। গত ২৬ ও ২৭ মার্চ কক্সবাজার উপকূলে কোস্টগার্ডের অভিযানে অন্তত ১৩ জন সশস্ত্র নৌদস্যু আটক হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে জিম্মি হওয়া ৭ জেলেকে উদ্ধার করেছে উপকূলরক্ষীরা। লাখ লাখ জেলে পরিবার এবং শত শত কোটি টাকার মাছ ও সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর টহল আরো জোরদার করতে হবে। সেই সাথে স্থানীয় নৌদস্যু ও আন্তঃজেলা ডাকাত সিন্ডিকেট কঠোর হস্তে নির্মূল করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন