শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চকরিয়ার ২৫ হাজার একর জমিতে ডাকাত আতঙ্কে চাষিদের ঘুম হারাম শত কোটি টাকার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কক্সবাজার জেলা সংবাদদাতা : কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চিংড়ি জোন খ্যাত চরণদ্বীপ মৌজায় প্রতি বছর ২৫ হাজার একর জমিতে সাদা সোনা খ্যাত রফতানিযোগ্য বাগদা চিংড়ির চাষ হয়। এতে আহরিত চিংড়ি রফতানি করে শতকোটি টাকা আয় হলেও চাষিদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ভুক্তভোগী চাষিদের অভিযোগ, এলাকায় অন্তত চারটি চিহ্নিত ডাকাত দলের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার চিংড়ি ঘের মালিক ও চাষি। প্রতিনিয়ত ডাকাত দলের তান্ডব ও নির্যাতনে চিংড়ি ঘেরে বিনিয়োগকৃত পুঁজি আহরণ করতে না পেরে বেশির ভাগ চিংড়ি চাষি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে চিংড়ি হাতে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
চিংড়ি চাষিরা জানান, উপজেলার চিরিংগা ইউনিয়নের সওদাগরঘোণা ও চরণদ্বীপ এলাকায় প্রায় ২৫ হাজার একর চিংড়ি ঘের রয়েছে। এসব চিংড়ি ঘেরে ইজারাদার ও মালিক মিলে প্রায় তিন হাজার এবং তাদের অধীনে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক ঘের কর্মচারী চিংড়ি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
সূত্রমতে চিংড়ি উৎপাদন শুরু হতে না হতেই ঘের এলাকায় প্রতি জোতে (জোয়ারের সময়) মাছ ধরতে গেলেই চারটি দলে বিভক্ত ডাকাত দলের সর্দারদের হাতে তাদের চাহিদামতো মাসোহারা পরিশোধ করতে হয়। চাহিবা মাত্র চাঁদা না দিলে রাতের আঁধারে সশস্ত্র ডাকাতদলের সদস্যরা ঘেরের মালিক ও কর্মচারীদের নির্মমভাবে পিঠিয়ে নৌকা, মাছ, জালসহ বাসার মালামাল এমনকি চাল, ডাল পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে বাধা দিলেই প্রাণহানিসহ ভয়াবহ নির্যাতন জোটে কপালে।
প্রাণের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অসংখ্য চিংড়ি চাষি দাবি করেছেন, সন্ধ্যার পরপরই পুরো চরণদ্বীপ এলাকা চলে যায় ডাকাত দলের নিয়ন্ত্রণে। ডাকাতদলের গুলির আওয়াজে সন্ধ্যা শুরু যেমন হয়, তেমনি ওই ডাকাতদের গুলিতেই ফজর শুরু হয়। যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ অজুহাত দেখিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। শুনেও না শুনার মতো করে থাকে। ফলে বেশির ভাগ চিংড়ি চাষি লাভের আশায় চিংড়ি চাষ করলেও বছর শেষে পুঁজি হারিয়ে শূন্য হাতে ঘরে ফিরছে। কিছুদিন আগে র‌্যাব চরণদ্বীপ এলাকায় অভিযান চালিয়ে অসংখ্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করলেও ডাকাতদলের মূল হোতা অধরা থাকায় ডাকাতদলের সদস্যরা পুনরায় অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে পুরনো কায়দায় ঘেরে লুটপাট অব্যাহত রেখেছে।
চরণদ্বীপ এলাকার বেশির ভাগ চিংড়ি চাষি দাবি করেছেন, র‌্যাবের অভিযানের পর বেশ কিছুদিন ডাকাতদলের সর্দার ও সদস্যরা অস্ত্র মামলায় আসামি হওয়ার ভয়ে শঙ্কিত থাকলেও প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের আশ্রয়ে ও অর্থপূর্র্ণ উদারতায় তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। সে কারণে পেশাদার ডাকাতরা পুনরায় বেপরোয়া হয়ে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়া অস্ত্র পুনরায় সংগ্রহ করতে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা আদায় করতে চিংড়ি চাষিদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলছে। চিংড়ি চাষিদের মতে, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুমখালী-কাটাখালী, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা-চরণদ্বীপ, পালাকাটা এলাকার উশৃঙ্খল একদল যুবক চারভাগে বিভক্ত হয়ে প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পুরো চিংড়ি ঘের এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব ডাকাতদল চিংড়ি ঘেরে ডাকাতির পাশাপাশি ঘের এলাকায় লালনপালন করা গরু, মহিষ, ভেড়া-ছাগলগুলো লুপাট করে নৌপথে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে। চরণদ্বীপ এলাকার এসব চিংড়ি ঘেরে ডাকাতি ও লুটপাট ডাকাতদলের নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডাকাতের ভয়ে ঘের মালিক ও চাষিরা মুখ খুলছেন না।
চরণদ্বীপ এলাকায় চিংড়ি চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের মৎস্য চাষ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন। এতে লাভবান হচ্ছে দেশ এবং হাজার হাজার মৎস্য চাষি। মৎস খাতে সরকার কোটি কোটি টাকা আয় করলেও চাষিদের নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সাগরের তীরবর্তী এসব চিংড়ি জোন এলাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন সেখানকার মৎস্য চাষিরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিংড়ি চাষি বলেন, ডুলাহাজারা এলাকার ডাকাত বেলাল ও ছরওয়ার, চরণদ্বীপের মোহাম্মদ করিম পটো, কোরালখালীর লুৎফুর ও চিরিঙ্গা ইউনিয়নের নুরুল আমিন প্রকাশ আমিন ডাকাতের নেতৃত্বে গড়ে উঠছে চারটি ডাকাত বাহিনী। ওই চার বাহিনীর নেতৃত্বে প্রতিনিয়ত চিরিঙ্গা এলাকার চরণদ্বীপ, ডুলাহাজারা, খুটাখালীসহ উপক‚লীয় এলাকায় চিংড়ি জোনে ডাকাতি ও লুটপাট চালিয়ে আসছে। প্রতিবাদ করলে মারধর ও হামলা করছে ডাকাতদল। তাদের অত্যাচারে অসহায় হয়ে পড়েছেন ওই এলাকার শতশত চিংড়ি চাষি। এসব ডাকাতদলের সদস্যসহ বাহিনী প্রধানের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, লুটপাট ও গুমের মতো অপরাধে চকরিয়া থানায় প্রায় শতাধিক মামলা রয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশ তাদের ধরার জন্য হন্যে হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি র‌্যাব-৭ ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আস্তানা থেকে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এসব চিহ্নিত ডাকাতদের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। চকরিয়া থানা ও আদালতে থাকা একাধিক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়াতে এসব ডাকাতরা নিরাপদ আস্তানা হিসেবে চিংড়ি ঘের বেছে নিয়েছে।
এদিকে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ জসিমউদ্দিন বলেন, ডাকাতরা চিংড়ি জোনে ডাকাতি ও লুটপাট করছে মাছসহ বিভিন্ন মালামাল। এসব ডাকাতবাহিনীর ব্যাপারে একাধিকবার র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনীকে বলা হয়েছে এবং উপজেলা পরিষদে আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকে তাদের গ্রেফতারের জন্য বলা হয়েছে। এসব বাহিনীর অত্যাচারে কোনো ঘের মালিক মাছ চাষ করতে পারছেন না। তারা প্রতিনিয়ত ডাকাতি ও লুটপাট করছে বলে জানান তিনি। চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি শুনেছি ওইসব এলাকায় ডাকাতরা কয়েকটি গ্রুপে চিংড়ি ঘেরে তান্ডব ও লুটপাট করছে। ডাকাতদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। তিনি আরও বলেন, চিংড়ি ঘের মালিক ও চাষিরা যাতে নির্ভয়ে মাছ চাষ করতে পারেন সেজন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন