শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

টাকা লুট করেছে সবাই সর্বস্বান্ত শুধু কৃষক

হাওর অ্যাডভোকেসি প্লাটফর্মের অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরগুলো তলিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের অর্থ লোপাটকেই দায়ী করা হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হাওর অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম নামে একটি সংগঠন বলেছে, বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য যদি সুনামগঞ্জ জেলায় বছরে ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে থাকে, তাহলে বলব না টাকার কোনো অভাব ছিল। বিষয়টা খুব স্পষ্ট যে দুর্নীতির মধ্যে দিয়েই টাকাগুলো আত্মসাত করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ঠিকাদার পর্যন্ত তাদের মাধ্যমে এই টাকাগুলো ভাগাভাগি করে লুটপাট করেছে।
রোববার ‘হাওর অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলের সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ হাওর প্লাবিত হয়ে কৃষকের বোরো ধান তলিয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার বলেন, অন্যান্য বছর ফসলহানি হলেও এবারের ক্ষয়ক্ষতি ‘ব্যতিক্রম’। আগের বছরগুলোতে হাওর পানিতে ডুবে গেলেও ধান পাকা থাকে। তখন পানির তল থেকে হলেও কিছু না কিছু ধান কেটে আনা হয়। এবার ধানক্ষেতে থোর আসেনি। এমন বিপর্যয় আমি দেখিনি।
হাওর অ্যাডভোকেসির যুগ্ম-আহ্বায়ক শরিফুজ্জামান জানান, তারা গত ১১ থেকে ১৩ মার্চ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে বাঁধ সংস্কারের কাজে অব্যবস্থাপনা দেখেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ, বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া, অনেক বাঁধের কাজ শুরু না হওয়া, সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়া, অপ্রয়োজনীয় জায়গাতে বাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও অসঙ্গতির কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
তিনি বলেন, হাওরে বহু বিল রয়েছে, এসব বিলের সঙ্গে খালগুলো যুক্ত। অকাল বন্যার পানি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। পাহাড়ি ঢলে সুরমা, কুশিয়ারা, ঝুনুসহ অন্যান্য নদী দিয়ে পানি বাংলাদেশে নেমে আসে। বর্তমানে এসব নদী পাহাড়ি ঢলের পানি বহনের ক্ষমতা নেই। সবগুলো নদী ভরাট হয়ে গেছে।
শরিফ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, এবার সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে এক লাখ ৭১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জেরই এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া নেত্রকোনায় ৩৮ হাজার ১১৫ ও কিশোরগঞ্জে ২০ হাজার হেক্টর ধানের জমি পানিতে ডুবে গেছে। এতে ওই তিন জেলায় ২ কোটি ৫ লাখ মণ ধান কৃষকের ঘরে উঠছে না। এতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।
মোস্তফা জব্বার বলেন, হাওরগুলো তলিয়ে যাওয়ায় এবার দেশে ধান উৎপাদন ২৫ শতাংশ কম হবে। হাওর অঞ্চলের দুই কোটি মানুষ তাদের নিজেদের খাওয়া-দাওয়া পুরো এক বছর জোগাড় করতে পারবে না। দেশের উৎপাদিত ধানের ২৫ শতাংশ হাওর এলাকা থেকে আসে। এর মানে হচ্ছে দেশের ২৫ ভাগ ধান এবার উৎপাদিত হল না। হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার সমস্যার কোনো সমাধান গত ৪৬ বছরেও পানি উন্নয়ন বোর্ড খুঁজে না পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মোস্তফা জব্বার। এই সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান চান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের দুই কৃষক ধান হারানোর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপুতা হাওর এলাকার কৃষক নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, আমি জন্ম নেয়ার ফর (পর) এমন পাইছি না, ধানের মধ্যে ফুল ধরছে, এর আগে এমন অবস্থায় পানি। ধানক্ষেত ঘাসের মতো অবস্থায় আছে, যদি ফাইক্কা (পাকা) ডুবতো, তাহলে পানির নিচ থেকে হইলেও ডুবাইয়া ডুবাইয়া কিছু তুলতা পারতাম। হাওর প্লাবিত না হলে এবছর আড়াই হাজার মণ ধান তুলতে পারতেন বলে জানান নারায়ণ। এই ধান দিয়ে তাদের পরিবারের ২৮ জন সদস্যের খাওয়া-দাওয়া এবং সারা বছরের ব্যয় এবং পরবর্তী বছরের বোরো আবাদের ব্যবস্থা হত। কিন্তু এখন তিনিসহ এই অঞ্চলের কৃষকরা অসহায় হয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে বলে জানান নারায়ণ।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওর এলাকার কৃষক মাফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এবার নিজের ও নগদ জমায় অপরের জমিসহ মোট ৬ একর জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু বাঁধ ভেঙে সব শেষ হয়ে গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন