অর্থনৈতিক রিপোর্টার : নতুন আইনের অধীনে লৌহ শিল্পে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলে প্রতি টন রডের দাম বাড়বে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। এতে আবাসন খাত ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের নির্মাণ ব্যয় বাড়বে। চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে লৌহ শিল্পে। শিল্পের স্বার্থে ভ্যাট হার ৩ থেকে ৫ শতাংশের নির্ধারণ করা উচিত।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে লৌহ খাতের ৩টি সংগঠনের নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পর লৌহ খাতে এর কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অটো রি-রোলিং এন্ড স্টিল মিলস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন, স্টিল মিল ওনার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলুর রহমান বকুল ও রি-রোলিং মিলস এসোসিয়েশনের মহাসচিব মাহবুবুর রশিদ জুয়েল।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে অটো রি-রোলিং এন্ড স্টিল মিলস এসোসিয়েশনের মহাসচিব শহীদ উল্লাহ বলেন, আগামী অর্থবছর থেকে স্টিলের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলে প্রতি টন রডের দাম বাড়বে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি টন রডে ৯শ টাকা ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এ করারোপের ফলে লৌহ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও আবাসন নির্মাণ ব্যয় বাড়বে। যা প্রধানমন্ত্রী ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। শিল্পের স্বার্থে ক্রয় পর্যায়ে স্ক্র্যাপের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার ও রড বিক্রি পর্যায়ে ভ্যাট ৩ থেকে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা উচিত।
সংগঠনটির সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে উপদেষ্টা মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, সরকারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একটি গ্রæপ ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে বেশি উৎসাহী। ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরো করা হলে লৌহ খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। সরকারকে বোঝানো হচ্ছে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আয় বাড়বে। কিন্তু এ উন্নয়ন ব্যয় বাড়লে তা আবার খরচও হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারের সহায়তার কারণে গত ১০ বছরে লৌহ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ২০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। ভ্যাটে ছাড় দেয়ার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। নতুন আইনের অধীনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করলে রডের দাম বেড়ে যাবে। ক্রেতারা নিরুৎসাহিত হবে। যার প্রভাব পড়বে শিল্পের ওপর। তিনি আরো বলেন, এ বিষয় নিয়ে গত এক বছর ধরে আলোচনা করে আসছি। কোন ফলাফল পাইনি।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব হুমায়ন কবির ভুইয়া বলেন, ভোক্তারা ভ্যাট দিতে চায়। তবে সব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলে পণ্যের দাম বাড়বে। এতে জনগণের ক্রয় ক্ষমতা কমবে। হাওরে বন্যা, প্রাকৃতির দুর্যোগের পর নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। তার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট জনগণের গোদের ওপর বিষফোড়া হবে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ভ্যাট বাস্তবায়ন না করা উচিত। পরের সরকার ক্ষমতায় এসে শুরু থেকেই আইন বাস্তবায়ন করতে পারবে।
রিহ্যাবের সাবেক নির্বাচন কমিশনার তামিম বলেন, গত কয়েক বছর আবাসন খাতে স্থবিরতা চলছে। ৫০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে। এ অবস্থায় রডের দাম টনে সাড়ে ৭ হাজার টাকা বাড়লে ফ্লাটের দাম আরো বাড়বে। যা বহন করতে ক্রেতারা প্রস্তুত না। আর আবাসন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর সঙ্গে জড়িত ২৫টি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই নির্বাচনের আগে এ ধরনের কোন নতুন পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি জানান, নতুন ভ্যাট আইনের কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলুর রহমান বকুল, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন