মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

বিএনপির ভিশন ২০৩০ এবং আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি

| প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান
বেগম খালেদা জিয়া গত ১০ মে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক ও নাগরিক সমাবেশে বিএনপির ভিশন ২০৩০ উপস্থাপন করেছেন। গত বছর ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে তিনি ভিশন ২০৩০-এর একটি রূপরেখা পেশ করেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, অচিরেই পূর্ণাঙ্গ ভিশন ২০৩০ প্রকাশ বা ঘোষণা করা হবে। যে কোনো কারণেই হোক এক বছরেরও বেশি সময় পর পূর্ণাঙ্গ ভিশন ২০৩০ প্রকাশ করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া নিজেই জানিয়েছেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশেষজ্ঞ ও দলীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর পূর্ণাঙ্গ রূপটি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত তিনি উল্লেখ করেছেন, আপনাদের মতামত ও পরামর্শ সাপেক্ষে এটিকে আরও পরিশীলিত করার সুযোগ রয়েছে।
কেন এই ভিশন, সে সম্পর্কে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, জনগণই হবে সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। যেসব বাধা জনগণের মেধা, শ্রম, উদ্যোগ এবং উৎসাহকে দমিয়ে দেয় সেগুলোকে দূর করে বিএনপি বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে ভিশন ২০৩০ প্রণয়ন করেছে। ৩৭টি বিষয়ে ২৬৫ দফা সম্বলিত এই বিশালাকার ভিশনে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বস্তুত, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনের এমন কোনো দিক নেই যা এতে উক্ত হয়নি বা গ্রাহ্যতা পায়নি। অনেকেই বলেছেন, বিএনপির ভিশন ২০৩০ এমন একটি দলিল যেখানে রাজনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্ঠির এবং অর্থতীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে দৃঢ় অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রæতি রয়েছে। একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র-নির্বাসনের অপচেষ্টা রোধ, প্রতিহিংসা ও প্রতিরোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোয় বিদ্যমান ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা দূর, সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ সংশোধনীতে বাতিল বা সংযোজিত কিছু বিষয় পুনঃপ্রবর্তন বা সংশোধন, কার্যকর সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অখÐতা সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান, মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রতিরোধ, সামাজিক নিরাপত্তাবলয় সম্প্রসারণ, উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস রোধে আইনের শাসন ও জাতীয় ঐকমত্য গঠন, কালা কানুন বাতিল, জীবনমুখী শিক্ষার প্রসার, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ, শিল্পখাতের বিকাশ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগে শামিল হওয়াসহ ছোট বড় আরও বহু বিষয় ভিশন ২০৩০-এ রয়েছে।
একটি রাজনৈতিক দলের নীতিÑআদর্শ, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী থাকেই। গঠনতন্ত্রে যেমন তার উল্লেখ থাকে, তেমনি থাকে ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচীতে। দেশের অন্যতম বৃহৎ দল হিসেবে বিএনপির একটি গঠনতন্ত্র আছে। সেই সঙ্গে আছে ১৯ দফা কর্মসূচী। বলা যায়, ভিশন ২০৩০ তার গঠনতন্ত্র ও ১৯ দফা কর্মসূচীর আলোকে প্রণীত হয়েছে। কালক্রমে পরিবর্তিত জনগণের আকাক্সক্ষার নিরিখে রাজনৈতিক দলের নীতি-আদর্শ, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-কর্মসূচীতে পরিবর্তন বা সংস্কার সাধন কোনো নতুন বিষয় নয়। তারপরও বিএনপি তার গঠনতন্ত্র ও ১৯ দফা কর্মসূচীতে কোনো পরিবর্তন না এনেই জনগণের আকাক্সক্ষার আলোকে ভিশন ২০৩০ প্রণয়ন করেছে। এ ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যটি উল্লেখের দাবি রাখে যেখানে তিনি বলেছেন, কোনো দেশের জনগণ বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ছাড়া এগুতে পারে না। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ স্বপ্ন দেখে একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের। পরিকল্পনা দ্বারা জাতি পায় কর্মস্পৃহা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রচনা করতে পারে সুখ-শান্তির নীড়। রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হলো, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে ভবিষ্যতের দিকগুলোতে উন্নত সোপানের পথে পরিচালিত করা। বলা বাহুল্য, বিএনপি ভিশন ২০৩০ প্রণয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের সেই দায়িত্বটিই পালন করেছে। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, এ ভিশন বা পরিকল্পনা কি বিএনপি বাস্তবায়ন করতে পারবে? বাস্তবায়ন করতে হলে বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে হবে। ক্ষমতায় আসা নির্ভর করে নির্বাচনে জনগণের রায় প্রাপ্তির উপর। নির্বাচনে বিজয়ই যথেষ্ট নয়, দু-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ সহজতর হতে পারে। এরপর আসে তার আন্তরিকতা এবং সক্ষমতার কথা। আমাদের অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয়, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসার জন্য অনেক কথাই বলে, অনেক অঙ্গীকার ঘোষণা করে ও প্রতিশ্রæতি দেয়। কিন্তু ক্ষমতায় এসে সেই অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে তার আন্তরিকতার অভাব দেখা দেয় কিংবা অনেক কিছুই উপেক্ষা করতে দেখা যায়। তার সক্ষমতায় অভাব বা ঘাটতিও দেখা যায়। অনেকের ধারণা, বিএনপি ভিশন ২০৩০-তে যে পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে, তার বাস্তবায়নে পূর্বশর্তগুলো নিশ্চিত হলেও ২০৩০’র মধ্যে এর পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। অনুকূল সুযোগ ও পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলেও এ জন্য আরও সময় প্রয়োজন হতে পারে। তবে তারা মনে করেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখনই নয়। তারপরও নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এ ক্ষেত্রে এগিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতারা ভোট প্রার্থনা শুরু করে দিয়েছেন। বড় দল হিসেবে বিএনপিও একেবারে বসে নেই। সেও তলে তলে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ মনে করেন, বিএনপির ভিশন ২০৩০ আসলে আগাম নির্বাচনী ইশতেহার মাত্র। বিএনপি এ অভিমতের সঙ্গে সহমত পোষণ করে না। দলের মহাসচিব ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন ভিশন ২০৩০’র সঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি যাই বলুন না কেন, এ ভিশনের সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে কোনোরূপ সম্পর্ক নেই তা হলপ করে বলা যায় না। দলীয় নেতাদের কারো কারো মতে, নির্বাচনের আগে বিএনপি যথারীতি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে। আর সেই নির্বাচনী ইশতেহার ভিশন ২০৩০’র ভিত্তিতেই প্রণীত হবে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একটা কঠিন সময়ের মধ্যে রয়েছে। দলটি ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ভয়াবহ শিকার। মামলা, হামলা ও দমন-পীড়ন এমনভাবে চালানো হচ্ছে, যাতে মনে হতে পারে দলটির অস্তিত্বই বুঝি বিপন্ন হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক দল তার কর্মসূচীর মধ্যেই অস্তিত্বের জানান দেয়, সক্রিয়তা প্রমাণ করে। বিএনপি কোনো কর্মসূচিই পালন করতে পারে না। কর্মসূচী দিলেও অনেক সময় নেতাদের নিষ্ক্রীয়তায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাই প্রায়ই ঠাট্টা করে বলেন, বিএনপির কোনো জনভিত্তি নেই, এটি কেবল বিবৃতিস্বর্বস্ব দলে পরিণত হয়েছে। সেই ‘বিবৃতি সর্বস্ব’, ‘নিষ্ক্রীয়’ এবং নির্বিচার জুলুম-পীড়নে পর্যদস্তু দলটি ভিশন ২০৩০ প্রকাশ করে রীতিমত বিস্ময় ও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের ভিশন ২০৩০ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া থেকেই বুঝা যায়, তাদের ধারণা বড় রকমে চোট পেয়েছে। দলটি যে শেষ হয়ে যায়নি, ভিশন ২০৩০ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ক্ষমতাসীনদের লাগাতার বৈরি প্রচারণায় জনমনে বিএনপি সম্পর্কে কিছুটা নেতিবাচক ধারণাও তৈরি হয়ে থাকতে পারে। ভিশন ২০৩০ সে নেতিবাচক ধারণা অপনোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। সবচেয়ে বড় কথা, এই ভিশনের মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা জনগণ, নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক মহল লাভ করতে পেরেছে। এটিই হয়তো ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের উদ্বেগ ও মাথা ব্যথার প্রধান কারণ। তারা ভিশন সম্পর্কে কোনো গঠনমূলক সমালোচনা তুলে ধরতে পারেননি। এর ভালো-মন্দ নিয়ে চুলচেরা কোনো বিশ্লেষণ তাদের তরফে পাওয়া যায়নি। বরং তারা একটি কুতর্কে লিপ্ত হয়ে আত্মপ্রসাদ লাভের চেষ্টা করছেন। আশ্চর্যের বিষয়, ভিশন ২০৩০ প্রকাশের পরপরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্যের সূচনা করেন। তিনি বলেন, এই ভিশন ২০৩০ একটি ফাঁকা প্রতিশ্রæতির ফাঁপানো রঙিন বেলুন। এই বেলুনটি অচিরেই চুপসে যাবে। জাতির সঙ্গে এটি তামাশা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।--- একটি রাজনৈতিক দল কতটা দেউলিয়া হলে অপর একটি রাজনৈতিক দলের দেয়া আইডিয়া এবং ভাবনা-চিন্তা চুরি, নির্লজ্জভাবে চুরি করতে পারে। তিনিই নন আরও কেউ কেউ বলেছেন, আওয়ামী লীগের রূপকল্প ২০২১ থেকে নকল বা চুরি করে বিএনপি ভিশন ২০৩০ প্রণয়ন করেছে। এই অহেতুক কুতর্কে না গিয়ে ক্ষমতাসীনদের বরং উচিৎ ছিল ভিশন ২০৩০’র ভালো-মন্দ বা ইতিবাচক-নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা ও আলোচনা করা। ইতিবাচক দিকগুলোর প্রশংসা করা এবং নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে পরামর্শ ও মতামত দেয়া। ‘সুজন’-এর সম্পদক বিদিউল আলম মজুমদার বিএনপির ভিশন নিয়ে বিতর্ক ও কুতর্ক সম্পর্কে এক নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করে একটি প্রণিধানযোগ্য মন্তব্য করেছেন। তার মন্তব্যটি এরকম: ‘বিএনপির রূপকল্পেও গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার তথা শাসন কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন, কার্যকর সংসদ বিকেন্দ্রীকরণ, দুর্নীতি দূরিকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নের কথা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারেও বিএনপির রূপকল্পে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির রূপকল্পে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় সংসদের উচ্চ কক্ষ স্থাপন ও গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রূপকল্পে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। তাই বলে কি বিএনপিকে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করা যায়?
গণতন্ত্র, সুশাসন, বিকেন্দ্রীকরণ, ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির ধারণা আওয়ামী লীগ উদ্ভাবন করেনি এগুলো বহু শতাব্দীর অভিজ্ঞতার আলোকে পÐিতেরা উদ্ভাবন করেছেন। এগুলো নিয়ে বহু দেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে, যার মাধ্যমে এসব ধারণা পরিশীলিত ও যুগোপযোগী হয়েছে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কারোরই এগুলোর ওপর মেধাসত্ত¡ নেই।’
বিএনপির ভিশন ২০৩০-তে ক্ষমতাসীন দল ও মহল যে বিচলিত, সেটা সহজেই আন্দাজ করা যায়। আসলে এতে কারোরই বিচলিত হওয়ার হেতু নেই। রাজনীতিতে পারস্পারিক শ্রদ্ধা, সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান খুবই প্রয়োজন। দল বিভিন্ন হলেও রাজনীতির মূল লক্ষ্য দেশের উন্নয়ন ও জনকল্যাণ। এই মূল লক্ষ্যের প্রতি দৃঢ়তা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠতা থাকলে সংঘাত, বৈরিতা ও প্রতিহিংসা কোনোভাবেই তৈরি হতে পারে না। আমাদের রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির এতটাই অবনমন ঘটেছে যে, বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা, ভালোকে ভালো বলার অপারগতা সাধারণ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। আজ দেশে গণতন্ত্র উধাও। কর্তৃত্ববাদী শাসনের কবলে দেশ ধুকছে। আইনের শাসন নেই। বিচারহীনতার সংস্কৃতি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতার মালিকানা জনগণের হাত ছাড়া। নাগরিক নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। নাগরিকরা নানাভাবে শোষিত, বঞ্চিত ও পীড়িত। এ অবস্থায় কোনো দেশ চলতে পারে না। তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়িত ও অর্জিত হতে পারে না। দেশে উন্নয়ন ও জনকল্যাণই যদি মুল কথা হয়, তাহলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোকে আত্মশুদ্ধির পথে যেতে হবে। প্রত্যেকটি দলকে প্রকৃত রাজনৈতিক দলে পরিণত হতে হবে। সহনশীল, শ্রদ্ধাশীল, রাজনীতির প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনীতিতে বিবাদ, সংঘাত ও উৎসাদনেচ্ছা দেশ ও জনগণের জন্য প্রত্যাশিত সুফল ও কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন