স্টাফ রিপোর্টার : আগামী নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টির আগে ফয়সালা করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গতকাল (বুধবার) জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুতে এক শোক সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি একথা বলেন। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন একটা রোডম্যাপ দিয়েছে। ভালো কথা। আমরা সর্বশেষ কথা বলে দিতে চাই, আপনারা যত রোডম্যাপ দেন, আমাদের সাথে আলোচনা করতে চান, আমরা আলোচনা করতে রাজি আছি। কিন্তু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হলে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। ওই নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা আগে করতে হবে। শেখ হাসিনা বা এই সরকারের অধীনে ২০১৪ সালে নির্বাচন হয় নাই, এবারো সেটা হবে না- এটা আমাদের স্পষ্ট কথা। রমজানের পরই বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করবেন বলে তিনি জানান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশ্যে ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, আপনি যতই আইন সংস্কার করেন না কেনো, যতই ভালো ভালো কথা বলেন, প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন পরিচালিত হয় সরকারের কর্মকর্তাদের দিয়ে। জেলায় ডিসি-এসপি, উপজেলায় ইউএনও-থানার ওসি দিয়ে। সরকার থাকবে আওয়ামী লীগের আর এই কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ হবে- এটা কোনোদিন সম্ভব নয়। এটা আমাদের কথা নয়, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনাও (প্রধানমন্ত্রী) এই কথা বলেছেন, কেনো দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারেনা। তিনি নির্বাচনী আইনের সংস্কারের দাবির কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা দেখেছি, ১/১১ পরে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য বিএনপিকে বেকাদায় ফেলার জন্য অনেকগুলো প্রায় ৭১/৭২টা নির্বাচনী এলাকা ইচ্ছামতো কাঁটছাট করে জনপ্রিয় নেতাদের পরাজিত করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছিলো। সেইসব এলাকা পুন:নির্ধারণ করতে হবে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। আপনারা যে বলছেন, ইভিএম’র কথা। ইভিএম আমরা বিশ্বাস করি না, এটা আমরা মানি না। পৃথিবীর অনেকে দেশে ইভিএম ছিলো, তা বাতিল করে দিয়েছে। আপনারা ইভিএম নিয়ে চিন্তাও করবেন না। জনগণ নিজের ভোট নিজে দেবে, আগের পদ্ধতিতে ভোট হতে হবে।
ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে পত্র-পত্রিকায় এসেছে, ভারতের হাইকমিশনার বলেছেন, তারা আমাদের নির্বাচনে সহযোগিতা করবে। আমাদের প্রশ্ন কী ধরণের সাহায্য? তারা আমাদের বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র, ভারতের সহযোগিতা আমরা চাই। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে যেভাবে ভারতের সরকার, সরকারের পররাষ্ট্রসচিব একটা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবার জন্য সারা বিশ্বে ক্যাম্পিং করেছেন এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার জন্য সহযোগিতা করেছেন। সে ধরনের সহযোগিতা আমরা চাই না। আমরা চাই, এদেশের জনগণ তাদের ইচ্ছামতো ভোট দেবে, যাকে ইচ্ছা তাকে দেবে এবং সেই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যদি আপনারা সহযোগিতা করতে চান, আমরা স্বাগত জানাই। আর যদি কোনো একটি দলকে আবার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে আপনারা সাহায্য-সহযোগিতা করেন, তাহলে জনগণ সেটা গ্রহণ করবেনা। জাগপা প্রধান শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তার রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য জীবনের কথা তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, শফিউল আলম প্রধান আমার ছাত্র ছিল। তিনি যে কথাগুলো বলতো তা ছিল আমাদের মনোভাবেরই প্রতিফলন। আসলেই প্রধান আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, কথা বলেছে। তার শিষ্টাচার ছিল প্রশংসনীয়। প্রধান জাতীয়তাবাদের চিন্তা চেতনাকে লালন করতো। বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা পালন করতো। সে ছিল মূল্যবান সম্পদ। আজ আমরা এক দু:সময়ে তাকে হারিয়েছি। দেশ এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিমÐলে এসময় তার দরাজ কণ্ঠ খুবই প্রয়োজন ছিল। আল্লাহ যেন তাকে মাফ করে দিয়ে জান্নাতে স্থান দেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এই স্মরণসভার আয়োজন করে স্বাধীনতা ফোরাম। সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গানি, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, স্বাধীনতা ফোরামের সেক্রেটারি আজিজুল ইসলাম সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। গত রোববার রাজধানীর আসাদগেইটে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন শফিউল আলম প্রধান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন