শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে ভারত-চীন দ্ব›দ্ব

অণুনিবন্ধ

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী : হেগ আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনাল পরিষ্কারভাবে দক্ষিণ চীন সাগর (এসসিএস) কেন্দ্রিক বিবাদ নিয়ে ফিলিপাইনের পক্ষে রায় দেয়। দক্ষিণ চীন সাগরের একটি বড় অংশকে ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক পানিসীমা এবং কয়েকটি দেশের একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইএফডেজএস) হিসাবে রায়ে উল্লেখ করেছে। রায় সমর্থন করেছে ভারত।
ইউএনসিএলএস-এর সদস্য হওয়া ছাড়াও আরও তিনটি কারণ রয়েছে যে দক্ষিণ চীন সাগরে ভারতের একটা ভূমিকা থাকা দরকার। যদিও দক্ষিণ চীন সাগরে ভারত মোটেই সরাসরি দাবিদার নয়, তবে ভারতের ৫৫ শতাংশ অর্থনৈতিক কাজকর্ম চলে দক্ষিণ চীন সাগরে। দ্বিতীয়ত, অ্যাক্ট ইস্ট পলিসিকে শক্তিশালী করার জন্য মনে হচ্ছে ভারত একটা অবস্থান ধরে রাখতে চাইছে।
অতএব, ভারত পরিষ্কারভাবে জাহাজ ও বিমান চলাচলের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে এবং বাধাহীন বাণিজ্য যার ভিত্তি হবে আন্তর্জাতিক আইনের নীতি-নির্দেশিকা, ইউএনসিএলওএস-এর সিদ্ধান্তে যা প্রতিফলিত হয়েছে। দাবিদার দেশগুলোর পক্ষে রয়েছে ভারত, এটা খুবই স্বাভাবিক, যাতে সরাসরি সে-দেশগুলোর কোনো রকম হুমকির মুখে পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে না হয়। ভারত এটাও বিশ্বাস করে যে, এর সঙ্গে জড়িত দেশগুলোর মধ্যে কেউ যদি রাজি নাও থাকে তাদের যদি কোনো রকম হুমকির মুখে পড়তে হয় তাহলে জটিলতা বাড়বে এবং এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব পড়বে।
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিতর্ক উঠলে তাতে সুযোগসন্ধানী অথবা বিরোধাভাসের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্নভাবে। ভারত যথারীতি ভিয়েতনামকে সামরিক সহায়তা দেবে বলেছে, যে দেশটা দক্ষিণ চীন সাগরের সরাসরি এবং গুরুত্বপূর্ণ দাবিদার। ভারত ভিয়েতনামের সঙ্গে দুটি প্রধান নৌ প্রকল্প চুক্তি করেছে এবং ব্রাহ্মোস ও বরুণাস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ব্যাপারে আলোচনাও করেছে এবং সেগুলো বসানোর কাজও চলছে। ভিয়েতনামের ডুবোজাহাজের আধুনকীকরণের জন্য তাদের সামরিক যন্ত্রপাতি আপগ্রেড করার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। সেই সঙ্গে তাদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে। ওদিকে ফিলিপাইনের সামরিক যন্ত্রপাতি হচ্ছে অনেক পুরনো এবং সেকেন্ড হ্যান্ড। তাই তারা ভারত থেকে ক্র্যুইজ মিসাইল এবং অন্যান্য সামরিক ব্যবস্থা কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে অনেক আগেই।
দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অংশীদার হিসাবে দেখা যাবে ভারতকে, বিশেষ করে সেসব দেশ যাদের সঙ্গে চীনের বিবাদ রয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিবাদকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হলে ভারতের পক্ষে একটা গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এসে যাবে পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে। চীন পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুর্নবিবেচনার কথা ভাবছে, এ-কারণে তারা প্রথমোক্ত রায় মানতে অস্বীকার করেছে। ফলে এটা ভারতের কাছে এই অঞ্চলে অবস্থানের গুরুত্ব বৃদ্ধির দৈবাৎ সুযোগ বলে গণ্য হতে পারে।
আমেরিকার এশিয়া নীতির বেলায় ভারত একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে এবং তাতে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের অনেক বেশি সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের পথে অগ্রসরমান, পরমাণু শক্তিধর ভারতের দিকে সে নজর ফেরাচ্ছে এই অঞ্চলে চীনের আধিপত্য বিস্তারের জবাব দিতে।  
আমেরিকার এশিয়ায় পুনরায় সাম্যাবস্থা সৃষ্টির চেষ্টার পেছনে বড় তাগিদ রয়েছে তাদের নিজের। আমেরিকার এই নীতির পেছনে মূল চারটি ব্যাপার রয়েছে। এক, মার্কিনী নেতৃত্বের অবস্থান নিশ্চিত করা। দুই, জোট ও অংশীদারিত্বকে আরও চাঙা করা। তিন, বহুমুখী সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করা এবং চার, আর্থিক কাঠামোর উন্নয়ন সাধনের জন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফিটিএ) সমূহের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা। অতএব, আমেরিকার এই যে পুরনায় সাম্যাবস্থার নীতি কৌশল সেটা অনেক বেশি মার্কিন স্বার্থে, সেটাকে কোনোমতেই সর্বসাধারণের হিতার্থে বলা যাবে না।
২০১৬ সালের জুন মাসে পরমাণু সরবরাহকারী দলে (এনএসজি) ভারতের প্রবেশ চীন আটকে দিয়েছিল। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে সেটা নিছক প্রযুক্তিগত ভিত্তিতে, যদিও চীন উল্লেখ করেছে যে, এটা মোটেই ভারতের বিরুদ্ধে নয় যে তাদের এনএসজিতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ-নিয়ে আরও কথাবার্তা বা আলাপ-আলোচনা শুরু হতে পারে আবার। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে যে বিাবদ চলেছে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের পক্ষ অবলম্বন করলে আবারও এনএসজিতে প্রবেশের স্বপ্ন নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে চীন। দক্ষিণ চীন সাগর বিতর্কে ভারতের পক্ষভুক্ত হওয়া ছাড়াও চীন সাস্প্রতিককালে ভিয়েতনামের কাছে ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রয়ের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন