শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

ঘনবসতির ঢাকা

| প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইফতেখার আহমেদ টিপু : ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘনবসতির নগরী। জাতিসংঘের বসতি সম্পর্কিত উপাত্তে ঢাকার শিরস্ত্রাণে ঘনবসতির এই পালকটি সংযোজিত হয়েছে। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান জাতিসংঘের বসতি সম্পর্কিত উপাত্তের বরাত দিয়ে বলেছে, ঢাকার পরেই ঘনবসতি ভারতের বাণিজ্যিক নগরী মুম্বাই। তৃতীয় স্থান কলম্বিয়ার মেডেলিন, চতুর্থ স্থান ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার।
দুনিয়ার যেসব নগরীর জনসংখ্যা হু হু করে বাড়ছে ঢাকা তার মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে গত বছর ঢাকায় প্রতিদিন যুক্ত হওয়া নতুন মুখের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন। গ্রাম ও জেলা শহর থেকে যারা কর্মসংস্থানের জন্য আসছেন তারা স্থায়ী হয়ে যাচ্ছেন এই শহরে। ফলে বেড়েই চলেছে ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকার জনসংখ্যা। ঢাকা মহানগরীতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করছেন ৪৪ হাজার ৫০০ লোক। ভারতের মুম্বাইতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩২ হাজার ৪০০ জনের বেশি লোকের বসবাস। মুম্বাইয়ের চেয়ে ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১২ হাজারেরও বেশি লোকের বসবাস। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকা ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
জনসংখ্যা মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজধানী ঢাকার নাগরিক সেবার খাতগুলো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। ঢাকার অস্তিত্বের স্বার্থেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিকে সামাল দিতে হবে। রাজধানীর জনসংখ্যা কমাতে তৈরি পোশাক শিল্প ঢাকার বাইরে নেওয়ার কথা ভাবতে হবে। ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির নগর, এ পরিচিতি গর্বের নয়, হতাশার। জাতীয় অগ্রগতির স্বার্থেই দেশের রাজধানীর সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকা যাতে অচল নগরীতে পরিণত না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসন বিকেন্দ্রিকরণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
উন্নয়নকাজ অনেক হচ্ছে; কিন্তু রাজধানী ঢাকার বসবাসযোগ্যতার খুব একটা উন্নয়ন হচ্ছে না। এখনো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম শহরগুলোরই একটি রয়ে গেছে ঢাকা। এর একটি প্রধান কারণ হচ্ছে অসহনীয় যানজট। অনেক সময়ই ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে দু-তিন ঘণ্টা লেগে যায়। মানুষের কর্মঘণ্টার একটি বড় অংশই যানজটে অপচয় হয়। অর্থনৈতিক ক্ষতিও কম নয়। অনেক মুমূর্ষু রোগীও হাসপাতালে নেওয়া যায় না, যানজটে আটকে থেকে রাস্তায়ই মৃত্যু হয়। বছরের পর বছর এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে; কিন্তু অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং কোনো কোনো রাস্তায় যানজটের তীব্রতা আরো বেড়েছে।
ঢাকায় এমন অসহনীয় যানজটের কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা অনেক কথাই বলেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্রমাগতভাবে ছোট যান বা ব্যক্তিগত গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। এখনো ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক গাড়ির নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে, যার বেশির ভাগই হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি। এক হিসাবে দেখা গেছে, সারা দেশে যত ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে তার ৭৮ শতাংশই চলে ঢাকার রাস্তায়। সে তুলনায় গণপরিবহন বাড়ছে না বললেই চলে। প্রশাসনিক কর্মকান্ডের মূল কেন্দ্র এখনো ঢাকা। কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের সুযোগ-সুবিধাও এখানেই বেশি। তাই জনসংখ্যার ঢাকামুখী স্রোতও ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। ধারণা করা হয়, স্থায়ীভাবে বাস করা ও ভাসমান জনসংখ্যা মিলিয়ে ঢাকার লোকসংখ্যা এখন দুই কোটি ছুঁই ছুঁই করছে। সে তুলনায় ঢাকায় সড়কের সংখ্যাও অনেক কম, আবার সড়কগুলোয় গণপরিবহনের সংখ্যা আরো কম। অথচ ব্যক্তিগত গাড়ি, ছোট ছোট গাড়ি, অযান্ত্রিক যানবাহন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলেছে। ফল যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। রাস্তা গাড়িতে ছেয়ে যাচ্ছে অথচ সাধারণ মানুষ চলাচলে যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
এসব কারণে বিশেষজ্ঞরা বারবার গণপরিবহন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের মতে, ঢাকায় যানবাহনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে মেট্রো রেল, বিআরটির মতো সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার মেট্রো রেল নির্মাণের কাজে হাত দিলেও এর কাজ এগোচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। কবে নাগাদ এর কাজ শেষ হবে, বলা মুশকিল। গাজীপুর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটির সুযোগ সৃষ্টি করার কথা অনেক দিন থেকেই বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি এখনো দৃশ্যমান নয়। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ঢাকামুখী জনস্রোত অনেকাংশেই কমাবে। ঢাকার বাইরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সম্প্রসারণ করা গেলেও ঢাকার ওপর জনসংখ্যার চাপ অনেকটা কমবে। সরকারকে এসব বিষয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সঙ্গে সড়কে যানবাহনের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করা, সড়ক দখলমুক্ত করা, অবৈধ পারাপার বন্ধ করা, কম গতির ও বেশি গতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করাসহ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া গেলে এখনো যানজট অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ, চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন