রাজশাহী ব্যুরো : আড়াই প্যাঁচের জিলাপী এবারো রাজশাহীর ইফতারির প্রধান আকর্ষণ। নানা রকম ভাজা পোড়ার সাথে মিষ্টি জিলাপি ছাড়া যেন চলেই না। ইফতারীর প্লেটে আর যাই কিছুই থাকুক জিলাপী থাকা চাই। আর তাই এই রমজানেও এর কদরও বেশী। ছোট বড় সর্বত্র মিলছে এটি। রাজশাহীতে জিলাপীর মধ্যে রানী বাজার বাটার মোড়ের ভাই ভাই জিলাপী তাদের সুনাম ধরে রেখেছে আজ অবধি। বছর জুড়েই জিলাপী রসিকদের রসনা মিটিয়ে আসছে। রমজান এলে তাদের চাহিদা আরো বেড়ে যায়। এরপর রয়েছে বড় মসজিদ চত্ত¡রের শামীম সুইটের জিলাপী। ক্রেতাদের পছন্দের দিকে লক্ষ্য রেখে বড় বড় ফাস্টফুডের দোকানগুলো নানা নামের ও দামের জিলাপী এনেছে। চিলিস নামের খাবার দোকানটি বরাবর ইফতারীতে নতুন কোন আইটেম যোগ করে। তারা রেশমী ও বোম্বে জিলাপী নামে এনেছে। দামও কম নয়। রেশমী জিলাপী ৩০০ টাকা কেজি আর বোম্বের জিলাপী ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। অন্যান্য সব দোকান গুলোয় জিলাপীর দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে রয়েছে। এবারো ঐতিহ্যবাহী রহমানীয়া তাদের শাহী ফিরনী এনেছে। সেই পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকে তারা এটি বিক্রি করছে। শুরুতে এর দাম ২৫পয়সার কম থাকলেও এখন দাম বেড়ে প্রতি বাটি হয়েছে ২৫ টাকা। তবে এর মান সেই আগের মত রয়েছে। রমজানের শুরুর দিন থেকেই দিনভর তাপাদহের পর দুপুরে হঠাৎ করে নামছে ঝুপঝাপ বৃষ্টি। এতে রোজাদারদের মাছে স্বস্তি আসলেও। ইফতারীর বাজারে ছন্দপতন ঘটাচ্ছে। ইফতারী সামগ্রী শুধু হোটেল রেস্তরা কিংবা মিষ্টির দোকানে নয়। মহল্লার চায়ের দোকান থেকে ফুটপাত সর্বত্র পেয়াজু, বেগুনী, ছোলাভুনা, মুড়ি, জিলেপী, বিক্রি হচ্ছে। আর নামী দামি দোকান গুলোয় এসব কমন আইটেমের সাথে রেশমী কাবাব সুতী কাবাব, কিমা পরোটা, কাটি কাবাব, চিকেন বল, সাসলিক, হালিম, তেহারী, খাসীর রান, আস্ত মুরগী গ্রীল, বিরিয়ানীসহ নানা মুখরোচক খাবারের সমাহার ঘটিয়েছে। দিনভর রোজা রাখার পর রোজাদাররা সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে ইফতারী কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবার পরিজনদের সাথে বসে ইফতার করার জন্য। ইফতারের ঘন্টাখানেক আগ থেকে সর্বত্র বেড়ে যায় ভীড়। এবারো তাপাদহের মধ্যে শুরু হয়েছে মাহে রমজান। আর রোজাদারদের প্রশান্তির জন্য আল্লাহ পাকের নিয়ামত পাকা আম লিচু চলে এসেছে বাজারে। কাঁচা পাকা আমের সরবত কিংবা দু’টুকরো পাকা আম রোজাদারদের স্বস্তি দিচ্ছে। রয়েছে বাঙ্গি তালশাস, জাম। এসবও থাকছে ইফতারের প্লেটে। ক’বছর ধরে রমজান মাসে ঘোল মাঠা বিক্রেতাদের সংখ্যা বাড়ছে। নগরীর প্রানকেন্দ্র সাহেব বাজার বড় মসজিদ চত্ত¡রসহ গুরুত্বপুর্ণ মোড় গুলোয় দুপুরের পর থেকে এদের আনাগোনা বেড়ে যায়। পরিত্যাক্ত বিভিন্ন পানিও জুসের বোতলে ভরে বিক্রি হচ্ছে। ইফতারীর বাজার ঘুরে দেখা যায় গতবারের চেয়ে এবার কোন কোন সামগ্রীর দাম খানিকটা বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান চিনি, সোয়াবিন তেল, মশল্লা, বেসনের দাম বাড়ার কারনে তাদের দাম কিছুটা বাড়াতে হয়েছে। তবে সব আইটেমে নয়। বড় হোটেল রেস্তারার কর্তৃপক্ষ বলছেন তাদের পন্যের মান ধরে রাখতে হিমসীম খেতে হচ্ছে। তারপরও চেষ্টা করছেন দাম কম রাখতে। ইতোমধ্যে হাটেল ফাস্টফুডের দোকান গুলো ইফতারীর প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সর্বনি¤œ ৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকার মধ্যে নানা আইটেম দিয়ে সাজানো হয়েছে ইফতারীর প্যাকেট। কমিউনিটি সেন্টার গুলোতে বুকিং দেয়া শুরু হয়েছে ইফতার পাটির জন্য। কোন কোনটি ইতোমধ্যে পুরো বুকিং হয়েগেছে। আর ক’দিন পর থেকে শুরু হয়ে যাবে ইফতার পাটির আয়োজন। প্রস্তুতি নিয়েছে রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো। সামনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজনের মাত্রাটা তাদের বেশী হবে। কোন কোন রাজনীতিক শুরুর দিন থেকেই নেমে পড়েছেন। কোথাও এতিমখানায় ইফতার করছেন আবার কোথাও দু:স্থদের মাছে ইফতারী ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছেন। প্রচারের জন্য এসব সচিত্র বিবরণ দিয়ে প্রেস রিলিজও আসছে। এবারের ইফতার রাজনীতি ভালই হবে তা শুরুটা বলে দিচ্ছে। এর মধ্যে এলিট নামে চালু হওয়া নতুন রেস্তরা সেহরী ফ্রি খাওয়ানোর আয়োজন করে বেশ আলোচনায় এসেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন