শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

হেরার আলোয় আলোকিত রমজান

| প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


আলী এরশাদ হোসেন আজাদ : পবিত্র রমজান মাস চারটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে মর্যাদাবান: (ক) এ মাসে কুরআন নাযিল হয়, (খ) এ মাসেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ ‘লাইলাতুল কদর’, (গ) এ মাসে শয়তান বন্দি থাকে, (ঘ) এ মাস মহান আল্লাহ্র রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহিমায় সমুজ্জ্বল। ‘রহমতের সওগাত’ এ মাসকে হাদিসে ‘শাহরুল আযিম’ ও ‘শাহরুম মুবারাকাত’ বলা হয়েছে।
রমজান ও মহাগ্রন্থ আল কুরআনের আলোকচ্ছটায় সমুজ্জ্বল সৎপথের ঠিকানা হেরা পর্বতের গুহা। পবিত্র কুরআন সর্বপ্রথম এ পর্বত গুহায় অবতীর্ণ হয়। অনাচার, অসভ্য, অসত্যের নিকষ অন্ধকারের অবসান ঘটাতে মহাসত্যের চিরন্তন জ্যোতিষ্ক মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল হয় পবিত্র রমজান মাসের শ্রেষ্ঠতম রজনী ‘লাইলাতুল কদরে’, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদের (স.) প্রতি সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান মক্কার হেরা পর্বতের গুহায়। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘মহিমান্বিত রমজান মাস, এতে মানব জাতির পথপ্রদর্শক এবং সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে’ (বাকারা: ১৮৫)।
পবিত্র কাবা ঘর থেকে পূর্ব-উত্তর কোণে তায়েফ, (বর্তমান সায়েল) সড়কে হারাম শরিফ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আলোকোজ্জ্বল এ পর্বত গুহা। পবিত্র এ গুহাটি ৩.৭ মি. বা ১২ ফুট দীর্ঘ। অন্য মতে দৈর্ঘ্য ৩ মিটার। গুহাটি ১.৬ মি. বা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি প্রশস্ত। সমতল ভূমি থেকে হেরা পর্বতের গুহা মূল পর্বতের ২৮১ মিটার উঁচুতে, তবে প্রসিদ্ধ মতে ২৭০ মি. বা ৮৯০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। পার্বত্য ঐ এলাকার আয়তন ৫ কিলোমিটার এবং চূড়াটি দেখতে উটের কুঁজের মতো। গুহামুখের ফাঁকা অংশ পবিত্র কাবা ঘরের দিকে বিস্তৃত এবং সেখান থেকে পবিত্র মসজিদে হারাম দেখা যায়।
হেরা পর্বতের গুহা এমন এক ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত স্থান যেখানে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বিশ্বমানবতার মুক্তি অন্বেষায় তাঁর নবুওয়াত পূর্বকালে দীর্ঘ ১৫ বছর একাগ্রচিত্তে ধ্যানমগ্ন ছিলেন। ‘হেরাগুহা’য় দীর্ঘ ধ্যানমগ্ন সাধনার পরই প্রিয়নবী (স.)-এর প্রতি পবিত্র কুরআন নাযিলের শুভসূচনা ঘটে ৬১০ খ্রিস্টাব্দে। ফেরেশতা জিব্রাঈল (আ.) ওহি নিয়ে আসেন এবং বললেন, ‘ইকরা’ (পাঠ করুন), প্রিয়নবী (স.) বললেন, ‘মা আনা বি-ক্বারি’ (আমি তো পড়তে জানি না)। জানা যায়, ফেরেশতা জিব্রাঈল (আ.) প্রিয়নবী (স.)-এর সঙ্গে তিনবার আলিঙ্গন করলেন এবং বললেন, ‘ইকরা’। তখনই প্রিয়নবী (স.) পড়তে শুরু করলেন ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযি খালাক্...’ অর্থাৎ, ‘পাঠ করো মহিমান্বিত প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন..... তিনি তো মানুষকে তাই শিখিয়েছেন যা সে জানতো না’ (আলাক: ০১-০৫)। এভাবেই শুরু হয়ে ২৩ বছরের দীর্ঘকাল পরিক্রমায় মক্কা-মদীনায় অবতীর্ণ হয় (৯২+২২) ১১৪টি সুরা এবং আল কুরআনের সবশেষ আয়াত হিসেবে বিদায় হজ্বের সময় অবতীর্ণ হয় সুরা মায়েদার তিন নম্বর আয়াত।
অলৌকিকত্বের অপার বিস্ময়ের নাম হেরা পর্বত। এ হেরা পর্বত প্রিয়নবী (স.)-এর কথা শুনে, তাঁর আদেশ মেনেছিল। এ পর্বতকে প্রিয়নবী (স.) বলেছিলেন ‘স্থির হও হে হেরা’। মুসলিম শরিফে আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদিসে আছে ‘একদা নবী (স.) হেরা পাহাড়ে অবস্থান করছিলেন। তখন পাহাড় নড়াচড়া শুরু করে। এসময় নবী (স.) বলেছিলেন স্থির হও হে হেরা। তোমার ওপর একজন নবী, একজন সিদ্দিক ও শহিদ রয়েছেন’। তখন প্রিয়নবীর (স.) সঙ্গে ছিলেন আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী, তালহা, যুবায়ের ও সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রা.)।
বস্তুতঃ রমজান মাস অধ্যাত্ম চেতনার মধ্যে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়। এ মাস মানুষের মধ্যে ধর্মভীরুতা সৃষ্টি করে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘যেন তোমরা ধর্মভীরুতা অর্জন করতে পার’ (বাকারা: ১৮৩)। তাইতো মহান আল্লাহ্র ইবাদতের মাধুর্যে হেরার জ্যোতি তথা পবিত্র কুরআনের শিক্ষা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবার বিশেষ শক্তি অর্জিত হয় পবিত্র রমজানে। কেননা, এ মাসে ঘোষণা করা হয় ‘হে ভালোর অন্বেষী অগ্রসর হও মন্দের অন্বেষী থামো’ (তিরমিযি, ইবনু মজাহ্)।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন