শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

বরকতময় মুহূর্ত

| প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
ইফতারপূর্ব সময়টি বরকতের জান্নাতি চাদরে ঘেরা। ঈমানি চেতনায় সিক্ত হওয়ার মুহূর্ত; জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মুহূর্ত। আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নেয়ার মুহূর্ত। কারণ এ মুহূর্তে রোজাদারের অনুভূতি থাকে শাণিত; অন্তর থাকে বেহেশতি অনুভূতিতে আন্দোলিত। ইফতারের মুহূর্ত বরকতময় মুহূর্ত। কারণ এ মুহূর্তে রোজাদার নিজেকে করে তোলেন বরকত লাভের পাত্র। রোজাদার অপেক্ষায় থাকেন, কখন আসবে মহান রবের নির্দেশ; বাজবে অনুমতির আসমানি ঘণ্টা। এটাই হলো তাকওয়া, যা অর্জনের জন্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছে মাহে রমজানের রোজা। অন্য কথায় বলতে গেলে ইফতারের মুহূর্তে ঈমানে সঞ্চিত হয় নতুন দৃঢ়তা; তাকওয়ার বৃক্ষে উদ্গত হয় নতুন পত্রপল্লব। অনুভবে আসে মহান ¯্রষ্টার নৈকট্য; স্পর্শ পেতে থাকেন জাগ্রত ঈমানে হিল্লোলিত এক মুহূর্তের। এ কারণেই মহনবী (সা.) ইফতারের মুহূর্তকে উল্লেখ করেছেন আনন্দের এক মুহূর্ত বলে। তিনি এরশাদ করেছেন, ‘রোজাদারের আছে দুইটি আনন্দÑ ইফতারের মুহূর্তের আনন্দ এবং প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ-মুহূর্তের আনন্দ।’ (মুসলিম)।
সারা দিনের উপবাস দেহের ফিজিওলোজিক্যাল অংশকে দুর্বল করে দেয়। পশুপ্রবৃত্তির গø্যান্ডগুলো নিস্তেজ করে ফেলে। ফলে বেড়ে যায় মানসিক উপলব্ধি ও চৈতন্যের মাত্রা। স্পিরিচুয়ালিটি স্পর্শ পায় নতুন উচ্চতার। এসবের ফলে পুষ্ট হয় আত্মা। আর এ পুষ্ট আত্মা থেকে যে প্রার্থনা উত্থিত হয়, তা কবুল না হয়ে পারে না। তাই তো প্রিয় নবী (সা.) অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় নাÑ ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক; ২. রোজাদার যখন ইফতার নেয়; ৩. এবং মাজলুম ব্যক্তির দোয়া।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইফতারের সময় রোজাদারদের জন্য একটি দোয়া নিশ্চিতরূপে বরাদ্দ থাকে, যা কখনোই ফিরিয়ে দেয়া হয় না।’ (ইবনে মাজাহ)।
ইফতারের মুহূর্ত এজন্যও বরকতময় যে, এ মুহূর্তে আল্লাহর দেয়া রিজিক সম্পর্কে প্রত্যেকের অনুভূতি আন্দোলিত হয়। ভাবনায় আসে ইফতারের যাবতীয় সামগ্রী আল্লাহ তায়ালার রিজিক ভিন্ন অন্যকিছু নয়। কেননা পানীয় অথবা খাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করা হয়, তা সৃষ্টির পেছনে মানুষের আদৌ কোনো হাত নেই। এজন্যই জবান থেকে বের হয়ে আসে, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার উদ্দেশ্যেই রোজা রেখেছি এবং আপনার রিজিক দিয়েই ইফতার করেছি।’
ইফতারের বরকতময় ক্ষণে অনেককেই আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি ইফতারের সময় অনেককেই আল্লাহ তায়ালা আগুন থেকে মুক্তির ঘোষণা দেন।’ (আহমদ)। ইফতার গ্রহণের ক্ষণ বরকতময় ক্ষণ। অতএব এ মুহূর্তের খাবারও যেন বরকতময় খাবার হয়, সে ব্যাপারেও আপনার অনুভূতিকে জাগ্রত রাখতে হবে। খেজুর হলো বরকতময় খাবার, বিশেষ করে তা যদি হয় বেজোড় সংখ্যায়। খেজুর বরকতময় এজন্য যে, এতে এমন খাদ্যগুণ আছে, যা দেহের ক্ষুধার্ত কোষগুলোতে সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে সক্ষম। কারণ লিভার ও পেশিতে জমে থাকা গøুকোজই হলো শারীরিক শক্তির প্রাথমিক উপাদান। সারা দিন রোজা রাখার ফলে গøুকোজের রিজার্ভ কমে যায়। ফলে শরীর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। খেজুর গøুকোজের এ ঘাটতিকে অতিদ্রæত পূরণ করে দেয়। কেমিক্যাল এবং বায়োলোজিক্যাল নিরীক্ষা থেকে এ তথ্য বের হয়ে এসেছেÑ একটি খেজুরে পানির উপদান থাকে ২০ থেকে ২৪ শতাংশ; সুগারের উপাদান থাকে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ, যার ৫৫ শতাংশই গøুকোজ; ফ্রাক্টোজের উপাদান থাকে ৪৫ শতাংশ, যার পুরোটাই গøুকোজ; প্রোটিনের উপাদান থাকে ২ থেকে ৩ শতাংশ এবং ফাইবারের উপদান থাকে ৫ থেকে ৮ শতাংশ। খেজুর খাওয়ার পর দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই তা হজম হয়ে গøুকোজের ঘাটতি পূরণ করে দেয়।
জনৈক আমেরিকান গবেষক এ-ও দেখিয়েছেন, বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খেলে তা সুগারকে শর্করায় রূপান্তরিত করে। এর বিপরীতে জোড় সংখ্যায় খেজুর খেলে তা ক্যান্ডি ও পটাশিয়ামে রূপান্তরিত হয়, যা কিডনির কার্যকারিতায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খেতেন বলে বর্ণনায় পাওয়া যায়। আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনটি খেজুর খেয়ে ইফতার গ্রহণ করতে পছন্দ করতেন। (ইবনে হাজার)। অন্য এক বর্ণনা অনুযায়ী, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের আগে কয়েকটি তাজা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর; আর তা-ও না পেলে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।’ (আবু দাউদ ও তিরমিজি)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন