মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম : ইসলাম ধর্মে পবিত্রতা একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। কারণ, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ। আবু মালিক আশয়ারিরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পবিত্রতা অর্জন করা হচ্ছে ঈমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম, মিশকাত হাদিস,২৮১)। তিনি আরো বলেন, ‘জান্নাতের চাবি হলো সালাত এবং সালাতের কুঞ্জি পবিত্রতা।’ (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, দারেমি, ইবনে মাজা, মিশকাত/৩৯ ও ৪০ পৃ:)। পবিত্রতা নবি–রাসুলগণের বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্য। তাঁদের পরিচয় বিবৃত করে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তারা এমন লোক, যারা অতি পবিত্র হতে চায়।’ (সূরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৮২; সূরা-২৭ নমল, আয়াত: ৫৬)। এছাড়াও সমস্ত শরীর ও লেবাস-পোশাককে সব রকম নাপাক জিনিস থেকে পাক রাখা এবং সালাতের রুকন যথা রুকু, সেজদা প্রভৃতি দ্বারা শরীরকে শোভিত করা, এটা হলো সর্বসাধারণ মুসলমানদের পবিত্রতা। কারণ মুসলমান ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্যই হলো এই সালাত। সুতরাং এই পবিত্রতাও ঈমানের অর্ধেক। (বাজলুল মানফায়াহ লি ইজাহিল আরকানিল আরবা›আহ/পৃ: ৯,) দ্বিতীয় হচ্ছে, পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা। পরিবেশ মানুষকে স্বচ্ছন্দতা জোগায়। যেখানে যতো ভালো পরিবেশ সেখানে বসবাস করা মানুষগুলোর ধ্যান ধারণা, আচার-আচরণে ততোই মুগ্ধতা পরিলক্ষিত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। বলা যেতে পারে, ভালো পরিবেশ মানুষকে ভালো করে। আর গান্ধেগি পরিবেশ মানুষকে নোংরামির প্রতি ধাবিত করে। তাই পরিবেশের স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলাতার প্রতি গুরুত্বারোপ সকলেরই উচিৎ। আর এর জন্য সবচেয়ে বেশি যে জিনিষটার প্রতি দৃষ্টি দেয়া বাঞ্ছনীয় সেটা হলো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরআনে পবিত্র পরিচ্ছদ গ্রহণ বা পোশাক পবিত্রকরণ ও আবিলতামুক্ত হওয়ার বিষয়ে বলেছেন : ‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, সতর্ক করুন; এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখুন, অপবিত্রতা পরিহার করে চলুন। (সূরা-৭৪ মুদ্দাছছির, আয়াত: ১-৪)। আল্লাহ পাক নিজে পবিত্র, তিনি পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ভালোবাসেন। এবং যারা পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র থাকে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন এবং সবাই তাদের ভালোবাসে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন পরিচ্ছন্নতার এক উজ্জ্বল প্রতিক। তাঁর সব কাজকর্ম ছিল গোছানো এবং পরিপাটি। তিনি ঘরের সবকিছু সবসময় পরিপাটি করে রাখতেন। সাহাবায়ে কেরামও সবসময় নিজেদের ঘর-বাড়ি আশপাশ পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতেন। এমনকি জুতা, কাপড় ইত্যাদি পরিধানের পূর্বে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করে নিতেন। তিনি সুগন্ধি পছন্দ করতেন। সৌন্দর্যের প্রতিক ফুলও তাঁর খুব প্রিয় ছিল। তিনি রাতে ঘুম যাওয়ার পূর্বে এবং ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াক করতেন। (যাদুল মায়াদ) ধর্মপ্রাণ মানুষের সুস্থ-সুন্দর ও পবিত্র দেহ-মনের জন্য পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা বাঞ্ছনীয়। পবিত্র কোরআনে মুমিনদের বিধি মোতাবেক পোশাক পরিধান করে ইবাদত করতে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘হে বনী আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করবে।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ৩১) এটাও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির অনেক বড় সহায়ক। সৌন্দর্যবর্ধন মানুষের মনকে সতেজ রাখে। আর সেই সতেজতা থেকে সবার মাঝে বিস্তার করে মুগ্ধকর পরিবেশ। আলহামদুলিল্লাহ্! পবিত্রতা অর্জনের প্রতি ইসলামের এরকম গুরুত্বারোপ থেকে একদিকে যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার ধর্ম ইসলামের মহত্ত¡ প্রকাশ পায়, ঠিক তেমনিভাবে দীনে ইসলামের স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতাও প্রকাশ পায়। তাই প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব নিজের মাঝে পবিত্রতা, পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতার বলয় তৈরি করা। আর এর মাধ্যমে সমাজে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। আর যখনই পরিবেশ সুন্দর হবে তখন একটি সুন্দর পরিবার,সমাজ, রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন