পিটসবার্গ পোস্ট-গেজেট : সউদী আরবের বাদশাহ বুধবার তার উত্তরাধিকারী পরিবর্তন করেছেন। ৮১ বছর বয়স্ক বাদশাহ সালমান তার পুত্র পূর্বের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ৩১ বছর বয়স্ক মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ও উপ প্রধানমন্ত্রী করেছেন। বাদশাহর পুত্র তার ভাইয়ের ছেলে ৫৭ বছর বয়স্ক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। তিনি একই সাথে উপ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীও ছিলেন। বাদশাহর এই ভাগ্যবান পুত্র নয়া যুবরাজ কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন সবার দৃষ্টি এখন সেদিকে।
এ পরিবর্তনের কোনো কারণ দেখানো হয়নি। এটা হতে পারে স্বাস্থ্যগত, অথবা কিছু কেলেংকারি, সহজ স্বজনপ্রীতি অথবা আন্তঃপারিবারিক দ্ব›েদ্বর ফল। এ ধরনের পদক্ষেপের ব্যাপারে সউদ পরিবারকে কোনো ব্যাখ্যা দিতে হয় না। গতমাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের ফলে এ পরিবর্তন ঘটেছে এ রকম কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।
মার্কিন নীতিও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেনি। এ পরিবর্তন আবার সেই দেশের সাথে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরিহাস তুলে ধরেছে যার সরকারের মধ্যে গণতান্ত্রিক চরিত্রের অভাব রয়েছে তো বটেই, এমনকি আমাদের দেশের মত প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনও নেই। বহু বছর ধরে সউদী আরবের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পেট্রোলিয়ামের কারণে। এক্সন মোবিলসহ মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো সউদী আরবের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে যার সাবেক সিইও ছিলেন বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী রেক্স টিলারসন। সউদী আরব তার রাজস্বের জন্য সম্পূর্ণরূপে তেল উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। নয়া যুবরাজ সউদী অর্থনীতিকে তেল নির্ভরশীলতা থেকে বৈচিত্রমুখী করার প্রয়াসের জন্য পরিচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ভূমিকায় রয়েছে প্রতিরক্ষা, এবং বিেেশষ করে অস্ত্র বিক্রয়ে সউদী আরবের সাথে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়। ট্রাম্প তার রিয়াদ সফরকালে অধিক গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র বিক্রির কথা ঘোষণা করেন। এসব বিক্রিতে জটিল বিষয় হচ্ছে সউদী শাসকদের ইচ্ছানুযায়ী যে কোনো যুদ্ধ হলে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ত হয়ে পড়া।
একটি বিপর্যয়কর উদাহরণ হচ্ছে সউদী আরব ও তার উপসাগরীয় দেশগুলো দু’বছর ধরে প্রতিবেশী দেশ ইয়েমেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এ যুদ্ধ হচ্ছে এ অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তারে সুন্নী সউদী আরব ও শিয়া ইরানের মধ্যে ছায়াযুদ্ধের পরিণতি। ইয়েমেন যুদ্ধে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে তা ২ কোটি ৭০ লাখ লোকের দেশটিকে ক্ষুধা ও রোগ, সর্বশেষ কলেরার প্রাদুর্ভাবসহ ধ্বংসের দিকে নিয়ে চলেছে।
সউদীরা সর্বশেষ গোলমালে জড়িয়েছে কাতারের সাথে। দেশটি কিছু সময় স্বাধীন নীতি অনুসরণ করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিরোধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত জটিলতা সৃষ্টি করেছে এ কারণে যে কাতারে বিশাল মার্কিন উপস্থিতি রয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে আছে মার্কিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বহুরকম ব্যবসা।
নতুন যুবরাজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক যুদ্ধে অধিকতর আগ্রাসী সউদী ভূমিকার একজন শক্তিশালী প্রবক্তা। নতুন ভূমিকায় তিনি কি কি পরিবর্তন আনেন তা দেখা আগ্রহের বিষয় হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দুর্ভাগ্য যে সউদী আরবের যেসব নীতি পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্র্রকে সম্পৃক্ত করবে তা সউদী জনগণ সমর্থিত হবে না, কোনো গণতান্ত্রিক পন্থায়ও তা হবে না। অতীত যদি কোনো ইঙ্গিতবাহী হয়ে থাকে তাহলে সউদী প্রতিশ্রæতির প্রতি মার্কিন সমর্থন গৃহীত ও স্বীকৃত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন