শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হাজারো দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত সীতাকুন্ড ইকোপার্ক

| প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : দর্শনার্থীদের উপছে পড়া ভিড়ে মুখরিত সীতাকুÐ বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে এখানে প্রতিদিনই হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটছে। দর্শনার্থীরা এখানে এসে সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে ঝরতে থাকা সহস্রধারা ঝর্ণা, প্রাকৃতিক লেক, পদ্মপুকুর, অর্কিড হাউস, নানারকম ফুল, ফল, পাতাবাহার ও দুর্লভ প্রজাতির গাছপালা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। উপভোগ করছেন শিশু পার্কের রাইড ও নতুন স্থাপন করা নাগর দোলা ও পর্যবেক্ষন টাওয়ারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। যা প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে পার্কটিতে।
জানা যায়, সীতাকুÐ পৌরসদরের ফকিরহাট এলাকার পূর্বদিকে ১৯৯৬ একর পাহাড় ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে সীতাকুÐের একমাত্র সরকারি পর্যটন স্পট সীতাকুÐ বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। সবুজ প্রকৃতির মাঝে দু’টি আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক ঝর্ণা, লেকসহ অসংখ্য প্রজাতির গাছ-পালা এই পার্কের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। ৯০ এর দশকে পার্কটির যাত্রার শুরুতে এখানে প্রাকৃতিক সম্পদগুলো ছাড়া উল্লেখ করার মত বিনোদন সামগ্রী স্থাপন করা হয়নি। এরপরও এখানে নিয়মিত অগণিত দর্শনার্থীর আগমন হতে থাকে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সোন্দর্য্যরে টানে। জানা যায়, বহুকাল আগে জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম একবার চট্টগ্রাম ও স›দ্বীপ ভ্রমনে এসে সীতাকুÐের ফকিরহাটের পাহাড়ে (বর্তমানে ইকোপার্কের সহস্রধারা) ঝর্ণা দেখতে এসেছিলেন। সেখানে তিনি ঝর্ণাটি দেখে এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে ঐ ঝর্ণার নিচে বসেই তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত নজরুল সঙ্গীত ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ’ সেই পাহাড়ের ঝর্ণায় আমি উদাও হয়ে রই’। স্বাভাবিকভাবে যে ঝর্ণা দেখে বিদ্রোহী কবি নজরুল মুগ্ধ হন তা দেখে যেকোন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ যে বিমোহিত হবেই তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। হয়েছেও তাই। দূর-দুরান্ত থেকে যারা এখানে বেড়াতে আসেন তারা প্রকৃতির এ নির্জনতায় বসে পাহাড় থেকে ঝরে পড়া ঝর্ণা, লেক, দুর্লভ প্রজাতির গাছপালা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। এ কারণেই এখানে বারবার ছুটে আসেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। এদিকে বহুদিন ধরে ইকোপার্কে তেমন কোন উন্নয়ন না হলেও এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে এখানে বাড়তি কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, পার্ক গেইটের অদূরেই গড়ে তোলা হয়েছে একটি সুবিশাল, সৃদুশ্য নাগর দোলা। একসাথে শতাধিক দর্শনার্থী এতে চড়তে পারবেন। এর সাথেই পার্কের নজরুল মুরাল, শিশুপার্কের দোলনা, গোলঘর, শিমুল তলী ব্রীজসহ নানা স্থাপনাগুলোকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন রাস্তা। আঁকা-বাঁকা এই পথের শেষে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, নামাজের ব্যবস্থা তো আছেই। সাথে আছে পদ্মপুকুরে ফুটে থাকা রঙিন শাপলা কুড়ি। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিটি স্থাপনায় লেগেছে নতুন রঙের ছোঁয়া। যা পার্কটিকে আগের চেয়েও সুন্দর করে তুলেছে। পার্কের নিরাপত্তা রক্ষায় ইজারাদারের লোকজন, বনকর্মীদের পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে পুলিশও। ফলে অনেকটা নিশ্চিন্তে পার্ক দর্শন করছেন আগত প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। এই পার্কে বেড়াতে আসা কুমিল্লার চান্দিনা থেকে আসা দর্শনার্থী কামরুন্নাহার বেগম বলেন, ইকোপার্কে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে তার। তিনি বলেন, এখানে ঘুরে যা বুঝলাম এই পার্কটির বিশেষত্ব হচ্ছে প্রকৃতিক সোন্দর্য্য। প্রকৃতি এমন একটি জিনিস যা সবাইকে টানে। তিনি বলেন, পার্কটি অনেক বড় এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে দেখলাম অনেক উঁচু থেকে ঝর্ণা ঝরে পড়ছে। প্রাকৃতিক লেক, অর্কিড হাউজ, শিশুপার্ক, পদ্মপুকুর পাড়, নজরুলের মুরাল ভালো লেগেছে। তার চেয়েও ভালো লেগেছে পর্যবেক্ষন টাওয়ারে উঠে। ঐ টাওয়ারে সোজা পশ্চিম দিকে তাকালে অল্প দূরে অবস্থিত সমুদ্রের নীল জলরাশি চোখে পড়ে। তিনি বলেন, জানতে পারলাম ঐ সাগরেই স›দ্বীপ, হাতিয়াসহ বিভিন্ন দ্বীপ উপজেলা রয়েছে। আমি অবাক হয়ে দেখলাম। কামরুন্নেছার স্বামী মোঃ জয়নাল বলেন, নির্জন এই পার্কে এসে খুব ভালো লেগেছে। একই জায়গায় বসে পাহাড়, ঝর্ণা ও সমুদ্র দেখলাম। এর চেয়ে ভালো কিছু আর কি হতে পারে।
পার্কে বেড়াতে আসা চট্টগ্রামের পতেঙ্গার বাসিন্দা মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, পতেঙ্গায় বাড়ি আমার। তাই প্রতিদিনই সাগর দেখি। আমি সীতাকুÐ ইকোপার্কে এসেছি পাহারের রুপ দেখতে। একবার পত্রিকায় পড়েছিলাম এই ঝর্ণাটি দেখে নাকি কবি নজরুল ইসলাম মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সেই থেকে এটি দেখার অনেক ইচ্ছে ছিলো। অবশেষে এসে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। শুনেছি বর্ষায় নাকি ঝর্ণাটি আরো গতিশীল হয়। একবার বর্ষাকালেও এসে দেখে যাব। তবে এই পার্কে সাফারি পার্কের মত কিছু কিছু বণ্যপ্রানী, জীবযন্তু দর্শনের জন্য রাখা হলে আকর্ষণ বাড়বে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। অবশ্য দর্শনার্থীর এই মতের সাথে একমত প্রকাশ করেন সীতাকুÐ বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের ইজারাদার মোঃ সাহাব উদ্দিন। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, এই পার্কটি এমন একটি জায়গা যেখানে এসে সবাই মুগ্ধ হন। সারাবছরই এখানে অগণিত দর্শনার্থী আসেন। তবে ঈদ-কোরবানের ছুটিতে দর্শনার্থীর ভিড় বেশি হয়। তিনি বলেন, এই পার্কে যা কিছু দর্শনীয় আছে তার বেশিরভাগই প্রাকৃতিক। তাই এগুলো সবাই উপভোগ করেন। এবার এখানে একটি নাগর দোলাও স্থাপন করা হয়েছে। দর্শনার্থীরা খুব আনন্দ করছেন। সাহাব উদ্দিন বলেন, ইকোপার্ক সংরক্ষিত এলাকা। পার্কের মধ্যে দর্শনার্থীরা খুবই নিরাপদে ভ্রমন করেন। কিন্তু পার্কের বাইরে বনকর্মী কিংবা ইজারাদার কারোই কোন লোকজন না থাকায় সেখানে মন্দির সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অথচ সেসব ছিনতাইয়ের ঘটনা পার্কের লোকজন ঘটায় বলে কেউ কেউ অপপ্রচার করেন। পার্কে কোন ছিনতাই হবার সম্ভাবনা নেই। আর এখানে আরো কিছু বন্য প্রানী, জীবযন্তু আনা হলে দর্শনার্থীরা আরো বেশি উপভোগ করতে পারবেন একথা ঠিক। তাই এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলে জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
MH JOBAIER HOSSAIN RINKU ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৯:২২ পিএম says : 0
খুব সুন্দর জাস্ট অবিসাস্ব।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন